গত সাড়ে তিন মাসে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষকে লকডাউনে পাঠিয়েছে নতুন করোনাভাইরাস। আক্রান্ত হয়েছে ২১ লাখের বেশি মানুষ, তাদের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ লোকের প্রাণ গেছে।
Published : 17 Apr 2020, 03:11 PM
লেখচিত্রের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারীর গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
বিস্তারের গতি কোথায় কেমন
প্রথম ১০০ রোগী শনাক্ত হওয়ার পর কোন দেশে কী গতিতে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, তার একটি গ্রাফ তৈরি করেছে গার্ডিয়ান। লগ স্কেল ব্যবহার করে তৈরি করা এ গ্রাফে চীন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও স্পেনে সংক্রমণের তথ্য তুলনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের টালি থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
এতে দেখা যায়, ১০০তম রোগী পাওয়ার পর মোটামুটি এক মাস চীনে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছিল। তবে এরপর থেকে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হতে থাকে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ১০০তম রোগী পাওয়ার পর ৩০ দিনের আগেই চীনের মোট সংক্রমণ সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়। ৪০ দিন পার করে এখন সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেছে প্রায় সাত লাখে।
মার্চের শুরুতেও বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখের নিচে। এক মাসের ব্যবধানে এপ্রিলে শুরুতে তা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায়।
কোভিড-১৯ কেড়ে নিল যত প্রাণ
প্রথম কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যুর দিন থেকে নয়টি দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার একটি তুলনামূলক গ্রাফ তৈরি করেছে গার্ডিয়ান। লগ স্কেল ব্যবহার করে তৈরি করা এ গ্রাফেও জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের টালি থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে চীনে মৃত্যুর সংখ্যা একটানা বেড়ে গেছে প্রায় ৪০ দিন। এরপর ধীরে ধীরেস্থিতিশীল হয়ে এসেছে পরিস্থিতি।
চীনে সংক্রমণের বিস্তার যখন নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে তখন কেবল সঙ্কটের সূচনা। কিন্তু সবগুলো দেশেই চীনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া এখনও মৃত্যু হার ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছে।
মার্চের গোড়ায় বিশ্বে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের নিচে। এপ্রিলের শুরুতে ছিল ৬০ হাজারের নিচে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ১১ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে মৃত্যু ছাড়ায় এক লাখের ঘর।
গত ২০ জানুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে কোন কোন দেশে মৃত্যুর সংখ্যা কী গতিতে বেড়েছে লেখচিত্রে তার তুলনা দেখানো হয়েছে রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনও।
বিশ্বজুড়ে বিস্তার যেভাবে
ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহানে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলেও দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এ ভাইরাস।
২২ জানুয়ারি থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত সময়ে কীভাবে বিশ্বজুড়ে ভাইরাসের বিস্তার বেড়েছে মানচিত্রে চিহ্নিত করে তা তুলে ধরেছে গার্ডিয়ান।
২২ জানুয়ারি
বিশ্বে তখন মোট শনাক্ত রোগী ছিল ৫৫৫ জন। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, জাপান, সাউথ কোরিয়া, তাইওয়ান ও যুক্তরাজ্যে মিলেছিল কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী।
২৬ জানুয়ারি
রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল। পরীক্ষায় ধরা পড়া কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দ্রুতই দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়া আর কানাডাতেও নতুন রোগী মেলে।
৩১ জানুয়ারি
এক সপ্তাহের মধ্যেই করোনাভাইরাস পজিটিভ রোগীর সংখ্যায় উল্লম্ফন দেখা যায়। প্রতিদিন দেড় হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছিল, আর মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৯২৭ জন। নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছিল ইতালি, সুইডেন, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যে। এ পরিস্থিতিতে ৩০ জানুয়ারি সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
১৯ ফেব্রুয়ারি
ইরানে নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ে। বিশ্বে সংক্রমণের মাত্রা লাগামহীন হয়ে উঠতে শুরু করে। ৫ হাজারের বেশি রোগীর শরীরে ধরা পড়ে সংক্রমণ। প্রতিদিন পরীক্ষায় ধরা পড়ছিল পাঁচশর বেশি নতুন রোগী।
২৬ ফেব্রুয়ারি
উৎসস্থল উহান থেকে দ্রুতই চীনের অন্য শহর এবং এরপর অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে নতুন করোনাভাইরাস। সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ততদিনে বেড়ে হয়েছে ৮১ হাজার ৩৯৫ জন। এদিন পাকিস্তান, ব্রাজিল, জর্জিয়া, গ্রিস, নরওয়ে আর রোমানিয়াতেও আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে এন্টার্কটিকা বাদে বিশ্বের সব মহাদেশে।
৩ মার্চ
প্রাদুর্ভাবের শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আক্রান্তদের মধ্যে ২ শতাংশের মৃত্যুর শঙ্কার কথা জানিয়েছিল। সেটা ছিল ফেব্রুয়ারির ঘটনা। তারপর পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে ৩ মার্চ বলেছিল, মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশে যেতে পারে। সেদিন বিশ্বে মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ৯২ হাজার ৮৪০ জন। প্রতিদিন নতুন রোগী মিলছিল আড়াই হাজারের বেশি। আর্জেন্টিনা, চিলি, জর্ডান ও ইউক্রেনেও নতুন রোগী পাওয়া যায় সেদিন।
৯ মার্চ
বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। প্রতিদিন নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছিল চার হাজারের কাছাকাছি। আলবেনিয়া, সাইপ্রাস ও ব্রুনেইয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় সেদিন। আগের দিন ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী ধরা পড়ে।
১৩ মার্চ
এর মধ্যে প্রায় সব মহাদেশের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হওয়ায় কভিড-১৯ কে ১১ মার্চ ‘বৈশ্বিক মহামারী’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১৩ মার্চ কাজাখস্তান, সুদান, গিনি, কেনিয়া, অ্যান্টিগুয়াতেও ধরা পড়ে কোভিড-১৯ রোগী। বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ছাড়ায়। সে সময় প্রতিদিন ১৬ হাজারের বেশি নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছিল।
২২ মার্চ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে সেদিন ১৪ ঘণ্টা ‘জনতার কারফিউ’ পালন করে দেশটি। ভাইরাসের বিস্তার বাড়তে থাকায় বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বিশ্বে মাত্র ১০ দিনে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়। ২২ মার্চ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৯৫৫ জনে।
সুস্থ হয়েছেন কত
কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলেই মৃত্যু অবধারিত নয়; বরং সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যাই বেশি। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের টালি থেকে তথ্য নিয়ে গার্ডিয়ানের করা লেখচিত্রে দেখা যায় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ সেরে উঠেছেন ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে।
ফিরে দেখা