বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কড়া সমালোচনা করে প্রতিষ্ঠানটি ‘অনেক বেশি চীনঘেঁষা’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
Published : 08 Apr 2020, 02:47 PM
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় বৈশ্বিক এ সংস্থাটি বাজে পরামর্শ দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি তাদের জন্য বরাদ্দ মার্কিন তহবিল স্থগিত হচ্ছে বলেও নিশ্চিত করেছেন।
কোভিড-১৯ এ যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর মধ্যেই দেশটির প্রেসিডন্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কঠোর সমালোচনা করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সত্যিকার অর্থেই ধাক্কা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বেশি অর্থ নেওয়া সত্ত্বেও তারা অনেকখানি চীনঘেঁষা। এদিকে আমরা ভালোমতো নজর দিচ্ছি।
“সৌভাগ্যক্রমে আমি চীন থেকে আগতদের জন্য সীমান্ত খোলা রাখতে তাদের আগে দেওয়া পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। কেন তারা আমাদেরকে এমন ত্রুটিপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিল?,” টুইটারে এমনটাই বলেছেন তিনি।
চীনের বাইরে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ একটু একটু করে বাড়তে থাকার সময় গত ৩১ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক নির্দেশনায় সব দেশকেই নিজ নিজ সীমান্ত খোলা রাখার পরামর্শ দিয়েছিল। যদিও নাগরিকদের সুরক্ষায় প্রত্যেক দেশেরই যে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার আছে বলেও মন্তব্য করেছিল তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই নির্দেশনার দিনই ট্রাম্প প্রশাসন চীন থেকে আগতদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়েও ট্রাম্প ওই একই প্রসঙ্গ তোলেন।
“তারা ভুল জানিয়েছে। তারা ঠিকভাবে ধরতে পারেনি ব্যাপারটা। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য অর্থ ব্যয় স্থগিত রাখতে যাচ্ছি,” বলেছেন তিনি।
ট্রাম্পের এ অভিযোগ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনো মন্তব্য পাওয়া না গেলেও জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিচ যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
“মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের পক্ষ থেকে বলছি, এটা সুস্পষ্ট যে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুসের নেতৃত্বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অসাধারণ কাজ করছে। তারা বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ সরঞ্জাম সরবরাহ করছে, দেশগুলোকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, নির্দেশনা দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শক্তি দেখাচ্ছে,” বলেছেন দুজারিচ।
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে ইবোলার মতো সংক্রামক ও প্রাণঘাতী রোগের মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মীরা সামনের কাতারে থেকে ‘চমৎকার কাজ করেছে’ বলেও জানিয়েছেন জাতিসংঘের এ মুখপাত্র।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলরা বৈশ্বিক মহামারীর সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে আসছেন।
বৈশ্বিক এ সংস্থাটি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে চীনের ত্রুটিপূর্ণ তথ্যের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করেছে বলেও অভিযোগ তাদের।
কয়েকদিন আগে রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. তেদ্রোসকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
“বেইজিং যেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ব্যবহার করে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করতে পারে তিনি (তেদ্রোস) সে সুযোগ করে দিয়েছিলেন,” মন্তব্য রুবিওর।
আর ট্রাম্পঘনিষ্ঠ সাংসদ লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, সিনেটের পরবর্তী বরাদ্দ বিলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য কিছুই রাখা হবে না।
“আমি বরাদ্দ বিষয়ক সাবকমিটির দায়িত্বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এখন যে নেতৃত্ব আছে তাতে প্রতিষ্ঠানটির জন্য অর্থ বরাদ্দে আমি সমর্থন দেবো না। তারা প্রবঞ্চক, তারা শ্লথ এবং তারা চীনের হয়ে দালালি করছে,” ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন এ রিপাবলিকান সিনেটর।