ইসরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর নিয়ে অবস্থান পাল্টে সেখানে তেল আবিবের বসতি স্থাপনকে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’ বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
Published : 19 Nov 2019, 12:54 PM
সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও পশ্চিম তীরের বসতি নিয়ে ওয়াশিংটনের এ অবস্থান পরিষ্কার করেছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।
দখলকৃত ওই এলাকাটি নিয়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের দরকষাকষির সুযোগ ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নতুন এ অব্স্থানকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল।
এর মাধ্যমে দখলকৃত অঞ্চলে তেল আবিবের বসতি স্থাপন নিয়ে ট্রাম্প তার পূর্বসূরী বারাক ওবামার পুরোপুরি বিপরীতধর্মী অবস্থান নিলেন।
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েল আরব দেশগুলোর যে এলাকাগুলো দখলে নিয়েছিল, সেখানে তারা একের পর এক আবাসিক এলাকা তৈরি করছে; এগুলোকেই ‘বসতি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
এ বসতি স্থাপন নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরোধও দীর্ঘদিনের।
“সব পক্ষের আইনি যুক্তি সাবধানতার সঙ্গে পর্যালোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, পশ্চিম তীরে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ইসরায়েল যে বসতি স্থাপন করছে, আদতে তা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়,” সাংবাদিকদের বলেছেন পম্পেও।
“বেসামরিক নাগরিকদের বসতিকে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলাটা কাজে দেয়নি; এটি শান্তির দিকে অগ্রগতিতে ভূমিকাও রাখেনি,” বলেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তনের এ সিদ্ধান্ত ‘বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও শান্তির’ ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ফিলিস্তিনের প্রধান মধ্যস্থতাকারী সায়েব এরাকাত।
নতুন এ মার্কিন অবস্থান আন্তর্জাতিক আইনকে ‘জঙ্গলের আইনে’ প্রতিস্থাপনের হুমকিতে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান বদল ‘ঐতিহাসিক ভুলকে ঠিক করেছে’। তিনি অন্যান্য দেশকেও যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণের আহ্বান জানান।
পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীর দখলের পর থেকে এ পর্যন্ত অধীকৃত এলাকাগুলোতে ১৪০টির মতো বসতি স্থাপন করেছে তেল আবিব; এসব বসতিগুলোতে ছয় লাখের মতো ইহুদি বসবাস করে আসছে।
আন্তর্জাতিক আইনে তেল আবিবের এ বসতিগুলোকে অবৈধ হিসেবে দেখা হলেও ইসরায়েল শুরু থেকেই তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল।
যে ভবিষ্যৎ স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে আসছে ফিলিস্তিনিরা, এসব বসতিকে তার পথে অন্যতম বড় বাধা উল্লেখ করে দীর্ঘদিন ধরেই এসব বসতি অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছে তারা।
১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের প্রশাসন ‘দখলকৃত অঞ্চলে ইসরায়েলের বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ এমন অবস্থান নেয়।
তিন বছর পর, ১৯৮১ সালে এসে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান ওই অবস্থানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, বসতি স্থাপনকে ‘মজ্জাগতভাবে অবৈধ’ বলে মনে করেন না তিনি।
এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকে ‘অবৈধ’ না বলে ‘অনুচিত’ বলে আসছে; এ বসতির বিরোধিতায় জাতিসংঘের যে কোনো প্রস্তাবে ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে ভিটো দিয়ে আসছে তারা।
২০১৬ সালে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ বন্ধে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে ভিটো না দিয়ে ওবামা প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের এই চর্চায় ছেদ ঘটায়।
তবে ট্রাম্প এসে পূর্বসূরীর ইসরায়েল বিষয়ক নীতি একেবারেই উল্টে দেন। তিনি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি মার্কিন দূতাবাসও সেখানে সরিয়ে নেন।
দখলকৃত এলাকায় তেল আবিবের বসতি স্থাপন নিয়েও ট্রাম্প প্রশাসনের সুর আগের প্রশসানের তুলনায় অনেক নরম।
পম্পেও বলেছেন, তারা সব পক্ষের যুক্তি তর্ক শুনে রিগানের অবস্থানের সঙ্গেই একমত পোষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।