ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ইইউ-ব্রিটেন সমঝোতা

দীর্ঘ টানাপড়েন আর অনিশ্চয়তার পর ব্রেক্সিট চুক্তির বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছল যুক্তরাজ্য।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2019, 10:03 AM
Updated : 17 Oct 2019, 04:31 PM

বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় নেতাদের এক বৈঠকের আগে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা চুক্তির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছান।

বিবিসির খবরে বলা হয়, দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা এখন ওই আইনি দিকগুলো নিয়ে কাজ করছেন। তবে চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার আগে তাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে হবে।  

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক টুইটে সেই ঘোষণা দিয়ে বলেন, “দারুণ একটা সমঝোতায় আমরা পৌঁছেছি, পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণও ফিরেছে।”

৩১ অক্টোবরে প্রক্রিয়ামাফিক ব্রেক্সিট শেষ করার পথ সুগম করতে শনিবারই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে চুক্তির বিষয়ে অনুমোদন পাওয়ার আশা করছেন জনসন।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদে জাঙ্কার এক চিঠিতে বলেছেন, ইইউ এর ২৭ সদস্যরাষ্ট্রকে চুক্তিতে অনুমোদন দেওয়ার সুপারিশ করবেন তিনি। কারণ তিনি বলেন, ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার শেষ সময় এখনই।

তবে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) নতুন ব্রেক্সিট চুক্তি সমর্থন করবে না বলে জানিয়েছেন বিবিসি’র রাজনীতি বিষয়ক প্রধান সংবাদদাতা ভিকি ইয়াং।

তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন ডিইউপি এমপি’রা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক করেছেন। কিন্তু এর পক্ষে তারা ভোট দেবেন না।

নর্দার্ন আইরিশ পার্টি- যে দলটির কাছ থেকে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভোটে সমর্থন পাওয়ার ভরসায় আছে- তারাও এক বিবৃতিতে বলেছে, “নতুন চুক্তিতে দেওয়া প্রস্তাবগুলো আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের অর্থনৈতিক কল্যাণের জন্য সহায়ক নয় এবং এতে ইউনিয়নের অখণ্ডতা ক্ষুন্ন হবে।”

বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতার সুর আরো চড়া। তিনি বলেছেন, আগের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে যে ব্রেক্সিট চুক্তি করেছিলেন নতুন প্রস্তাবিত চুক্তি তার চেয়েও বেশি খারাপ। ফলে এমপি’দের এটি প্রত্যাখ্যান করা উচিত।

তবে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঙ্কার বলছেন, নতুন চুক্তি “সুষ্ঠু এবং ভারসাম্যপূর্ণ”। জাঙ্কার এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন দুইজনই নিজ নিজ পার্লামেন্টকে চুক্তিতে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জনসন বলেন, “এখন আমাদের ব্রেক্সিট সম্পন্ন করা এবং তারপর ভবিষ্যতে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করে যাওয়ার সময়। আর তা যুক্তরাজ্য এবং ইইউ দু’য়ের জন্যই খুব ইতিবাচক হবে বলে আমি মনে করি।”

“আর কোনো দেরি না করেই ব্রেক্সিট হয়ে যাওয়া উচিত। যাতে সরকার দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে মনোনিবেশ করতে পারে”, বলেন তিনি।

বিবিসি জানিয়েছে, পরবর্তী পদক্ষেপে কি করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করতে হাউজ অব কমন্সে শনিবার বিশেষ কোনো অধিবেশন বসবে কিনা সে প্রশ্নে ব্রিটিশ এমপি’রা পরে ভোটাভুটি করবেন।

অধিবেশন বসার বিষয়টি ভোটে অনুমোদন পেলে সরকার তখন চুক্তির ওপর ভোট অনুষ্ঠান করতে পারবে বলে জানিয়েছেন কেবিনেট অফিস মিনিস্টার মাইকেল গভ।

কি আছে জনসনের প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তিতে?

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের নতুন ব্রেক্সিট চুক্তির প্রস্তাবগুলো বেশিরভাগই গতবছর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’র করা চুক্তির প্রস্তাবগুলোর মতোই। পরিবর্তনটি হয়েছে মূলত উত্তর আয়ারল্যান্ড বিষয়ক প্রস্তাবগুলোতে। আর তা হচ্ছে:

* নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ইইউ এর একক মার্কেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে।

* বিতর্কিত ‘ব্যাকস্টপ’ থাকবে না। সমালোচকদের ভয়, এই ‘ব্যাকস্টপ’ এর কারণে যুক্তরাজ্যকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইইউ’র সঙ্গে কাস্টমস ইউনিয়নে থেকে যেতে হতে পারে।

* উত্তর আয়ারল্যান্ড বরং যুক্তরাজ্যের কাস্টমস টেরিটোরির অংশ হিসাবে থাকবে। ফলে ব্রেক্সিটের পর ভবিষ্যতে সরকারের যে কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে তারা অন্তর্ভক্ত থাকতে পারবে।

* কিন্তু একইসঙ্গে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ইইউ এর কাস্টমস জোনে প্রবেশদ্বার হিসাবেও থাকবে।

* কোন কোন পণ্য একক বাজারে প্রবেশ করার ঝুঁকিতে আছে তা নির্ধারণ করবে ইইউ/ইউকে যৌথ কমিটি।

* উত্তর আয়ারল্যান্ড এসেম্বলি নতুন বাণিজ্য ব্যবস্থা চালু রাখার প্রশ্নে প্রতি চারবছর পরপর ভোট অনুষ্ঠান করবে।

* সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে।