ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কথায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে হুমকি দিয়েছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কিছুর ওপর হামলা চালালে ইরানের একাংশ মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হবে।
Published : 26 Jun 2019, 04:14 PM
ইরানের ওপর ওয়াশিংটনের আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে রুহানি মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজ ‘বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতে’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করার পর ট্রাম্প এ হুমকি দেন।
তার কথায় , রুহানির কথাতেই বোঝা যায়, ইরানের নেতারা বাস্তবতা বোঝেন না। ইরানের বিবৃতিকে ‘মূর্খ ও অপমানজনক’ আখ্যা দিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ট্রাম্প।
যদিও পরে ইরানের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখার কথাও বলেন তিনি। উত্তেজনা কমাতে ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলতে ইরানের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ আলোচনায় বসা, বলেন ট্রাম্প।
এর আগে ট্রাম্প সোমবার এক নির্বাহী আদেশে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ও অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
ওয়াশিংটন চলতি সপ্তাহের শেষদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফের ওপরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ঘোষণা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে ইরান একটি মার্কিন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। ট্রাম্প পরে জানান, পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বিমান হামলা চালাতে মার্কিন বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হলেও, শতাধিক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কায়, একেবারে শেষ মুহূর্তে তিনি ওই হামলা বাতিল করেন।
হামলা হলে, চার দশকের মধ্যে এটাই হতো ইরানের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বোমাবর্ষণ। ইরানকে হুঁশিয়ার করতে ট্রাম্প সম্প্রতি যেসব শব্দবন্ধ ব্যবহার করছেন, একসময় এগুলো উত্তর কোরিয়ার বেলায়ও ব্যবহৃত হত, বলছে রয়টার্স।
“যুক্তরাষ্ট্রের কোনোকিছুর ওপর ইরানের যে কোনো হামলা প্রবল প্রতিক্রিয়ায় মোকাবেলা করা হবে। কোনো কোনো এলাকায় এ প্রতিক্রিয়ার মানে হচ্ছে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া,” টুইটারে এমনটাই বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মঙ্গলবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, বিদেশে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার কোনো সম্পদ না থাকায় খামেনির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় কোনো ধরনের প্রভাবই পড়বে না। এ সময়ই হোয়াইট হাউসের কর্মকাণ্ড মানসিক বৈকল্যের পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“তেহরানের কৌশলগত নীরবতার অর্থ এই নয় যে আমরা ভয়ে আছি,” বলেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প পরে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে বলেন, ইরান মধ্যস্থতা না অন্যকিছু চায় তা যুক্তরাষ্ট্রকে জানাতে হবে।
“তারা যা-ই করতে চায়, আমি প্রস্তুত। অর্থনৈতিকভাবে তাদের দেশ ভালো অবস্থানে নেই। এ অবস্থা দ্রুত বদলে যেতে পারে, খুব সহজেই। কিন্তু তাদের নেতৃত্বের এ শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব ছাড়তে হবে। আমি চাই- তাদের এ নেতৃত্ব থাকুক, তারা ভালো করবে এটাই আমার আশা; তবে তাদের অবশ্যই আমাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলা উচিত,” বলেছেন তিনি।
রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট গত বছর ছয় বিশ্ব শক্তির সঙ্গে ইরানের ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনলে ওয়াশিংটন-তেহরান উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে।
২০১৫ সালের ওই চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিনিময়ে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচির লাগাম টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন তেহরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল এবং ইরানের তেল কেনা বন্ধে অন্য দেশগুলোকে বাধ্য করলে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা আরআইএ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ইরানের চারপাশের পরিস্থিতি বিপজ্জনক দিকে মোড় নিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।
ইরান অস্বীকার করলেও সম্প্রতি পারস্য উপসাগরে একের পর এক তেলের ট্যাঙ্কারে হামলার জন্যও যুক্তরাষ্ট্র ও তার আঞ্চলিক মিত্ররা তেহরানকে দায়ী করে আসছে।
ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্ররা উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। সামান্য একটি ভুলই ওই অঞ্চলে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে, বলেছে তারা।