আদালত ও সরকার মুখোমুখি অবস্থায় নেওয়ায় চরম উত্তেজনা চলছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে।
Published : 04 Feb 2018, 09:23 PM
সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদের বিচার করাকে হাই কোর্টে শুক্রবার অবৈধ ঘোষণা এবং বিরোধী ১২ এমপিকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দিলে সরকারও পাল্টা পদক্ষেপে পার্লামেন্টের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনকে গ্রেপ্তারে আদালতের যে কোনো পদক্ষেপ ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে তৎপর করেছে সরকার।
বিরোধী দল মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির ১২ এমপিকে মুক্তি দেওয়ায় এখন তারাই পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল।
ওই ১২ জনের মধ্যে নয়জন দেশে কারাবন্দি আছেন। বাকিরা স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান।
মালদ্বীপ সরকারের আশঙ্কা, সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনকে গ্রেপ্তার বা অভিশংসনের নির্দেশ দিতে পারেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মোহামেদ অনিল বলেন, প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করা বা গ্রেপ্তারের যে কোনো উদ্যোগ বেআইনি হবে।
বিবিসি জানায়, অনিল প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল শিয়াম ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লা নওয়াজকে নিয়ে রোববার একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমরা এমন কিছু ঘটনা ঘটার ইঙ্গিত পেয়েছি, যা জাতীয় নিরাপত্তাকে সঙ্কটের মুখে ফেলে দেবে। ওই তথ্যানুযায়ী, খুব সম্ভবত সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার বা অভিশংসনের নির্দেশ দিতে পারেন।
“যা অসাংবিধানিক হবে এবং সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ধরণের ঘটনা কিছুতেই ঘটতে দেবে না।”
টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা একটি অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের তাদের প্রাণের বিনিময়ে হলেও সরকার রক্ষার শপথ নিতে দেখা যায় বলে জানায় বিবিসি।
মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির মুখপাত্র হামিদ আব্দুল গফুর বলেন, পুলিশ শনিবার রাতভর প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ দুই বিচারককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করেছে।
“তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে। সরকার অন্যায়ভাবে বিচার বিভাগের দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে।”
এদিকে সুপ্রিম কোর্টে খালাস পাওয়ার পর স্বেচ্ছা নির্বাসন ছেড়ে দেশে ফেরা মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির দুই নেতাকে রোববার বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ সিনান ও ইলহাম আহমেদের বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে ২০১৫ সালে নাশিদকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গন ওই রায়ের তীব্র সমালোচনা করে এবং যুক্তরাজ্য নাশিদকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছেন মালদ্বীপে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট নাশিদ।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশ না মানা ‘অভ্যুত্থানের শামিল’ বর্ণনা করে নাশিদ বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের এখনই পদত্যাগ করা উচিত।
তিনি মালদ্বীপের নিরাপত্তা বাহিনীকে সংবিধান সমুন্নত রাখার আহ্বানও জানান।
গত বৃহস্পতিবার মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্ট নাশিদ ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের বিচার ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও অসাংবিধানিক’ বর্ণনা করে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিয়ে নিজ নিজ পদ পুনঃপ্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয়।