জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির বিপক্ষে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যেসব দেশ ভোট দেবে তাদের সাহায্য বন্ধের যে হুমকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছিলেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় আরব দেশগুলো।
Published : 23 Dec 2017, 03:29 PM
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে পরিচিত এ দেশগুলো শুক্রবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিরোধিতা করা ছাড়া তাদের সামনে অন্য কোনো বিকল্প ছিল না।
হুমকি বাস্তবায়নে ট্রাম্প কোনো পদক্ষেপ নিবেন না বলেও ধারণা তাদের, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বৃহস্পতিবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের জরুরি এক অধিবেশনে সবগুলো আরব রাষ্ট্রসহ ১২০টিরও বেশি দেশ জেরুজালেম বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধের হুমকির মধ্যেও মিসরের আনা ওই প্রস্তাবে ওয়াশিংটন ছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের বাকি সদস্য দেশগুলো সমর্থন দিয়েছিল।
ভোটের পর ফের হুমকির কথা মনে করিয়ে টুইট করেন ট্রাম্প।
“মধ্যপ্রাচ্যে বোকার মতো সাত ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করার পরিবর্তে এখন সময় দেশ পুনর্গঠন শুরুর,” বলেন তিনি।
ওই এলাকার যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য পেয়ে আসছে তাদের মধ্যে শীর্ষে থাকা মিসর ও জর্ডান দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়া নিয়েও কাজ করছে। জেরুজালেম বিষয়ে বিরোধীতায় ট্রাম্পের হুমকিকেও পাত্তা দিচ্ছে না দেশদুটি।
তাদের ভাষ্য, এমনি এমনি মার্কিন সাহায্য জুটছিল না তাদের।
“অন্যদের চেয়ে আমেরিকাই বেশি জানে স্থিতিশীল জর্ডান এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জর্ডানের এক মন্ত্রী।
প্রতিরক্ষা এবং অন্যান্য খাতে দেশটি ওয়াশিংটনের কাছ থেকে প্রতি বছর এক দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারের মতো সাহায্য পায়।
“মার্কিন সাহায্যে টান পড়ুক তা আমরা চাই না, যদি তা হয় তা কেবল জর্ডানের অর্থনীতিতে দুর্দশাই যোগ করবে,” যোগ করেন তিনি।
জর্ডানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাহির আল-মাসরি বলছেন, যেখানে অস্থিরতা যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হামলার কারণ হতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যের মতো এমন অস্থিতিশীল এলাকায় জর্ডানের ভূমিকাই মার্কিন সাহায্য বহাল রাখতে ভূমিকা রাখবে।
“ওই সাহায্য দান হিসেবে দিচ্ছিলেন না ট্রাম্প। এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতায় যে ভূমিকা রাখছে জর্ডান, (সাহায্য বন্ধ হলে) তখন তা করতে পারবো না,” বলেন তাহির।
তাহির এমনটা ভাবলেও জর্ডানের অনেক কর্মকর্তা সাহায্য কমা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের কাছে পবিত্রভূমি হিসেবে পরিচিত জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্পের স্বীকৃতি ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব নিরসনের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে ধারণা আন্তর্জাতিক মহলের। ট্রাম্পের অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও বলেছেন, শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকাই আর গ্রহণযোগ্য হবে না।
জর্ডানের রাজপরিবার ঐতিহাসিকভাবে জেরুজালেমের ইসলামি স্থাপনাগুলোর ‘তত্ত্বাবধায়ক’ হওয়ায় আম্মানের জন্য বিষয়টি আরও নাজুক।
ট্রাম্পের হুমকি না থাকলে সাধারণ পরিষদে আরও অনেক দেশকেই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিরোধীতা করতে দেখা যেত বলে মন্তব্য তাহরির।
“আরব আর মুসলিম দেশগুলোর জন্য ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান ছাড়া অন্যকিছু করা অসম্ভব,” বলেন তিনি।
জর্ডানের মতো একই অবস্থান মিসর, ইরাক ও সৌদি আরবের মতো মার্কিন মিত্র দেশগুলোর। তারাও বলছে, মুসলিম বিশ্ব কখনোই জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মেনে নেবে না।
সাহায্য বন্ধের হুমকিতেও এই অবস্থান টলবে না।
মিত্রদের এই অবস্থানের পরও যুক্তরাষ্ট্র তার নীতি বদলাবে এমন কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুখে বললেও ট্রাম্প প্রশাসন সহজে আরব মিত্রদের সাহায্য বন্ধে পদক্ষেপ নেবে না।
“আমার মনে হয় না মিসরের দুশ্চিন্তার কিছু আছে, অবশ্যই ট্রাম্পের ইনার সার্কেল মিসরের অবস্থানে সন্তুষ্ট নয়, তবে আমার মনে হয় না এটা আর বেশিদূর আগাবে,” বলেন আটলান্টিক কাউন্সিলের মিসর বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এইচ এ হেলিয়ের।
গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অংশীদার মিসরকে প্রতি বছর প্রায় এক দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার সাহায্য দেয় যুক্তরাষ্ট্র।