ভারতের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিং তার দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
Published : 25 Aug 2017, 04:20 PM
পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্য জুড়ে টান টান উত্তেজনা আর নিরাপত্তার ব্যাপক কড়াকড়ির মধ্যে শুক্রবার চণ্ডিগড়ের পাঁচকুলার একটি বিশেষ আদালত এই রায় ঘোষণা করে বলে এনডিটিভির খবর।
ধর্ষণের দায়ে পঞ্জাবের ধর্মীয় গোষ্ঠী ডেরা সাচ্চা সওদার প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের কী সাজা হবে, আদালত সেই সিদ্ধান্ত জানাবে সোমবার।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই রায়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজ্য থেকে রাম রহিমের দুই লাখ ভক্ত চণ্ডিগড় ও পাঁচকুলাতে জড়ো হতে শুরু করেন।
আদালতের রায় বিপক্ষে গেলে সহিংসতা শুরু হতে পারে- এমন আশঙ্কায় সকাল থেকে পাঁচকুলায় সেনাবাহিনী নামানো হয়। ৫০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয় হরিয়ানা ও পঞ্জাবে।
রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর ও হনুমানগড়ে ১৪৪ ধারা জারি করার পাশাপাশি ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। বহু লোককে গ্রেপ্তার করতে হতে পারে- এমন ধারণা থেকে পুলিশ একটি স্টেডিয়ামও অধিগ্রহণ করে।
হরিয়ানা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, রায় যাই হোক, কর্তৃপক্ষ যে কোনো মূল্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে।
আদালত দুপুরে রায় ঘোষণার পরপরই ৫০ বছর বয়সী রাম রহিমকে কড়া পাহারার মধ্যে আম্বালা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রায় শোনার পর আদালতের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বহু সমর্থক।
বিবিসি জানায়, রাম রহিমকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং পরে তাকে একটি সেনা ঘাঁটিতে স্থানান্তর করা হবে।
টেলিভিশন ফুটেজে এরই মধ্যে রাম রহিমের অনুসারীদেরকে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের গাড়িতে হামলা চালাতে দেখা গেছে। পাঁচকুলায় পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করছে রাম রহিমের ভক্তরা। তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করছে পুলিশ।
পাঁচকুলা, সিরসা, হিসার ও অন্যান্য কিছু অঞ্চলে প্রচুর সংখ্যায় নিরাপত্তা বাহিনী টহল দিচ্ছে। পুলিশ কড়া নজর রাখছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপরেও ।
বিবিসি লিখেছে, একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও পরিচালক বাবা রাম রহিমের মতো বর্ণময় চরিত্র ভারতের অজস্র ধর্মগুরুর মধ্যেও বিরল।
শিখ, হিন্দু, মুসলিম- সব ধর্মের চেতনা মিশিয়ে বাবা রাম রহিম তৈরি করেছেন তার আশ্রম- ডেরা সাচ্চা সওদা।
কিন্তু পনেরো বছর আগে নিজের আশ্রমেই দুজন ভক্ত মহিলাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির চিঠির সূত্র ধরে ২০০২ সালে এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে সিবিআই। সেখানে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে নিজের আশ্রমে দুই শিষ্যাকে ধর্ষণ করেন রাম রহিম।
২০০৭ সালে শুনানি শুরুর পর দশ বছরের মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। বিচারের পুরোটা সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন ডেরা সাচ্চা সওদার প্রধান।