জার্মানিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পদক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার মতো ক্ষেপণাস্ত্র সংকট সৃষ্টির ঝুঁকি নিচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
Published : 28 Jul 2024, 07:27 PM
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ওয়াশিংটন যদি জার্মানিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে, তবে রাশিয়া পশ্চিমে আঘাত হানতে পারার মতো দূরত্বে একই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে।
রাশিয়ার নৌবাহিনী দিবস উপলক্ষে রোববার সেন্ট পিটার্সবার্গে রাশিয়া, চীন, আলজেরিয়া এবং ভারতের নাবিকদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে পুতিন যুক্তরাষ্ট্রকে এ হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ওই পদক্ষেপ নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার মতো ক্ষেপণাস্ত্র সংকট সৃষ্টির ঝুঁকি নিচ্ছে।
“যুক্তরাষ্ট্র তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হলে আমরা আর মাঝারি ও স্বল্প-পাল্লার পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন এককভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তে অটল থাকব না। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ফের নতুন করে তৈরি হবে”, হুমকি দিয়ে বলেন পুতিন।
পশ্চিমা সামরিক জোট নেটো ও ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা জোরদারের অঙ্গীকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র গত ১০ জুলাই জার্মানিতে দূর-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
২০২৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে এইসব ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে আছে টোমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এসএম-৬ এবং বিভিন্ন ধরনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। বর্তমান ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর চেয়ে এইসেব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা অনেক বেশি দীর্ঘ।
যুক্তরাষ্ট্র এই পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর ১৪ জুলাইয়েই রাশিয়া এর পাল্টা পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ইউরোপের দেশগুলোকে।
তখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় বাসভবন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন মেনে নিলে ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেরাই নিজেদেরকে ঝুঁকিতে ফেলবে।
স্নায়ুযুদ্ধ যুগের মতো ইউরোপীয় রাষ্ট্রের রাজধানীগুলো যে কোনও সংঘাতের প্রথম শিকার হওয়ার মুখে পড়বে বলে সতর্ক করেছিলেন পেসকভ। এবার যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে পুতিন একই সুরে কথা বললেন।
জার্মানিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনকে রাশিয়া তাদের জাতীয় নিরাপত্তায় সরাসরি হুমকি হিসাবেই দেখছে।
পুতিন বলেছেন, “রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এবং সামরিক স্থাপনাগুলো এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের উড্ডয়ন পরিসীমার মধ্যে পড়বে। ভবিষ্যতে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পারমাণবিক ওয়ারহেডে সজ্জিত হতে পারে। কোনও হামলার ক্ষেত্রে তা আমাদের ভূখণ্ডের লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছতে সময় নেবে প্রায় ১০ মিনিট।
“এই পরিস্থিতি আমাদেরকে সেই স্নায়ুযুদ্ধযুগের ঘটনার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। যখন যুক্তরাষ্ট্রের মাঝারি পাল্লার পারশিং ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউরোপে মোতায়েন ছিল।”
যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৮৭ সালে ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার উড়ে যেতে সক্ষম এই স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তৈরি বন্ধ রাখা নিয়ে একটি পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি করেছিল।
তবে ২০১৯ সালে দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে এই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। রাশিয়া অবশ্য পরে বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র বিদেশে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র যতক্ষণ পর্যন্ত মোতায়েন না করছে, ততক্ষণ মস্কো এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নতুন করে উৎপাদন করবে না।
কিন্তু রোববার রাশিয়ার নৌবাহিনী দিবসে পুতিন বলেছেন, “এখন রাশিয়ায় এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা উন্নয়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
“আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড মাথায় রেখে একইরকম পাল্টা পদক্ষেপ নেব। ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও একইরকম পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”