বন্দুকধারী ছিলেন চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টির ছাত্র। হামলার পর তিনি নিজেই নিজেকে গুলি করেন বলে জানিয়েছে চেক পুলিশ।
Published : 22 Dec 2023, 08:05 PM
চেক প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে বৃহস্পতিবার রাজধানী প্রাহার কেন্দ্রস্থলে চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই হামলা কেড়ে নিয়েছে অন্তত ১৪ মানুষের প্রাণ। আহত হয়েছে ২৫ জন।
বন্দুকধারী ছিলেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই আর্টস অনুষদের একজন ছাত্র। নিজের ফ্যাকাল্টিতেই এমন ঘটনা ঘটান ২৪ বছর বয়সী সেই ছাত্র; যিনি পরে নিজেকে গুলি করে আত্নহনন করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আর্টস অনুষদের ভবনে ঢুকে বন্দুকধারীর নির্বিচার হামলার সেই মুহূর্ত এবং তার পরের ঘটনা দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় বর্ণনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী, যিনি একজন সাংবাদিকও। বলেছেন, কেবল রক্ত আর রক্তই দেখেছেন তিনি।
বন্দুকধারী যখন ভবনে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে ঠিক সেই সময়ই ক্লাস নিচ্ছিলেন প্রফেসর রাদেক সামিক। ভবনের প্রথম তলার সেই ক্লসরুম থেকে তিনি হঠাৎ করেই স্পষ্ট শুনতে পান গুলি চলার আওয়াজ।
শিক্ষার্থী জ্যাকব উইজমান তখন ভবনের উপরের আরেকটি তলার একটি ছোট্ট কক্ষে বসে ভাষা পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। সেখানে পরীক্ষক হিসাবে ছিলেন একজন শিক্ষক। সেই সময়ই তার কানে আসে ‘গুলির শব্দ’ এবং ‘চিৎকার-চেঁচামেচি’।
আতঙ্কে তড়িঘড়ি ক্লাসরুমের দরজা বন্ধ করে দেন তারা। এর পাঁচ মিনিট পরই বন্দুকধারী এসে ক্লাসের দরজা খোলার চেষ্টা করে। উইজমান জানান, প্রতিটি ক্লাসেই লোকজন আছে কিনা তা দেখে দেখে তাদেরকে মারছিল হামলাকারী।
দরজা বন্ধ করে ভেতরে বসে থাকা উইজমান এবং তার পরীক্ষককে পরে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপরই সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সেই মুহূর্তের কথা বর্ণনা করে তারা বলেন, “আমরা যখন হেঁটে বাইরে বেরিয়ে আসছিলাম,তখন গোটা ফ্যাকাল্টিই ছিল রক্তে মাখা।”
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হামলাকারী ভবনের ছাদে ছিল বলে তারা খবর পেয়েছিলেন। সেখান থেকেও সে লোকজনকে গুলি করেছে।
বন্দুকধারীর নাম ডেভিড কোজাক বলে জানানো হয়েছে। অন্য আরেক জায়গায় সে তার বাবাকেও খুন করে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ চার্লস বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের যেখানে গুলি চলেছিল সেই জায়গায় বিশাল একটি অস্ত্রভান্ডারের খোঁজ পেয়েছে।
পুলিশ স্যোশাল নেটওয়ার্কের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে যে তথ্য পেয়েছে, তাতে হামলাকারী এবছর শরতে রাশিয়ায় একটি সন্ত্রাসী হামলা থেকে এমন হামলা চালাতে উৎসাহী হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ তথ্যের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চেক পুলিশের প্রেসিডেন্ট মার্টিন। হামলাকারীর কয়েকটি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ছিল বলেও জানান তিনি।
হামলায় নিহতদের স্মরণে শনিবার চেক প্রজাতন্ত্রে জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন চেক প্রেসিডেন্ট। দেশে ঐক্যেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ওদিকে,চেক প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে শুক্রবার নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সহিংসতার এই ঘটনাকে ‘কান্ডজ্ঞানহীন’ এবং ‘নৃশংস’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা মোববাতি জ্বালিয়ে, ফুল দিয়ে নিহতদের জন্য শোক করছে।