বিশ্বে মোট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ৪০ শতাংশ আসে চীন থেকে।
Published : 28 Oct 2023, 12:02 PM
কথায় আছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন হাঁচি দেয়, বাকি বিশ্বেরওতখন ঠাণ্ডা লেগে যায়। কিন্তু চীনের অর্থনীতি যদি অসুস্থ হয়, তখন কী হবে?
১৪০ কোটি মানুষের দেশ চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। গত কিছুদিন ধরে ধীর হয়ে এসেছে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা, বেকারত্ব বেড়েছে, আবাসন ব্যবসায় নেমেছে ধস। এরকম নানা সমস্যার মুখোমুখি চীন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের এসব সমস্যা পুরো বিশ্বে বিপর্যয় ডেকে আনবে– তেমন আশঙ্কা তারা এখনই করছেন না। তবে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি, তাদের কর্মী, এমনকি চীনের সাথে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, এমন অনেক মানুষও এর ধাক্কা অনুভব করতে পারে।
সিঙ্গাপুরের এশিয়ান ট্রেড সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ডেবোরা এলমস বলছেন, অ্যাপল, ফোক্সভাগেন এবং বারবেরির মতো শত শত বড় কোম্পানি চীনের বিশাল ভোক্তা বাজার থেকে মোটা অংকের ব্যবসা করে। এখন অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে চীনারা যদি খরচ কমিয়ে দেয়, তাহলে চীন থেকে এসব কোম্পানির আয় কমে যাবে। এর প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার সরবরাহকারী এবং শ্রমিকের ওপর, যাদের রুটি-রুটি নির্ভর করে এসব কোম্পানির ওপর।
বিশ্বে মোট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ৪০ শতাংশ আসে চীন থেকে। ফলে চীনের অর্থনীতিতে কোনো সমস্যা হলে এর প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের অনেক অঞ্চলে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ফিচ গত মাসে বলেছে, চীনের অর্থনীতির ধীর গতি পুরো বিশ্বের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে টেনে ধরছে। সে কারণে তারা ২০২৪ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে।
তবে সেই প্রভাব অন্য দেশের পণ্য রপ্তানিকারকদের ক্ষেত্রে ততটা মারাত্মক হবে না বলেই মনে করেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির চায়না সেন্টারের অর্থনীতিবিদ জর্জ ম্যাগনাস।
তিনি বলেন, চীন আমদানির চেয়ে অনেক বেশি রপ্তানি করে। ফলে চীনের উৎপাদন যদি কমেও যায়, তাহলেও অন্য দেশের রপ্তানিকারকদের তত বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
তবে চীনারা যদি ভোগ্যপণ্য আর সেবা নিতে কম খরচ করা শুরু করে, তার প্রভাব কাঁচামাল ও জ্বালানির বাজারে পড়বে। গত অগাস্টে চীন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ কম আমদানি করেছে।
এ অবস্থায় অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, যারা চীনে বড় আকারে কাঁচামাল রপ্তানি করে, তারা সমস্যায় পড়বে বলে মনে করেন সিডনির লোই ইনস্টিটিউটের ইন্দো-প্যাসিফিক ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক রোল্যান্ড রাজা৷
আবার পশ্চিমা কিছু দেশ এর সুফলও পাবে। চীনের বাজারে চাহিদা কম থাকা মানে হল পণ্যের দাম কম থাকবে। তাতে পশ্চিমা যেসব দেশ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে, তাদের জন্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কিছুটা সহজ হবে।
রোল্যান্ড রাজা বলছেন, স্বল্পমেয়াদে পশ্চিমা দেশগুলোর সাধারণ ভোক্তারা চীনের এ পরিস্থিতি থেকে কিছুটা লাভ হয়ত পাবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য নতুন সমস্যা তৈরি করতে পরে।
গত দশ বছরে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় বিভিন্ন দেশের বড় অবকাঠামো প্রকল্পে এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। দেড়শর বেশি দেশ রাস্তা, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং সেতু নির্মাণে চীনা অর্থ ও প্রযুক্তি নিয়েছে। এখন চীন যদি নিজের ঘরের সমস্যা মেটাতে মনোযোগ দেয়, তাহলে বিদেশের এসব প্রকল্পে তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ দেওয়ার বিষয়টি ঝুলে যেতে পারে।
চীনের অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব বহির্বিশ্বে যতটুকুই পড়ুক না কেন, ইতিহাসের শিক্ষা হল, যেটা প্রত্যাশিত নয়, সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধকী ঋণে আবাসন ব্যবসায় ধস যে পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দায় ডুবিয়ে দেবে, সে কথা ২০০৮ সালের আগে কয়জন ভেবেছিল?
সে কারণে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ চীনের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বিগ্ন। তাদের ভয়, চীনের আবাসন ব্যবসায় ধস যদি পুরো অর্থনীতিকে ধসিয়ে দেয়, তাহলে সেটা পুরো বিশ্বকেও বিপদে ফেলতে পারে। সংবাদসূত্র: বিবিসি।
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)