ভারতে ১২ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত এই মেলা চলবে ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
Published : 13 Jan 2025, 10:15 PM
ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে শুরু হয়েছে মহা কুম্ভ মেলা। ২০২৫ সালের এই মহাকুম্ভ ঘিরে প্রয়াগরাজে এখন সাজ সাজ রব।
১২ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত এই মেলা চলবে ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পূর্ণকুম্ভ ঘিরে জমজমাট প্রয়াগরাজে কয়েক কোটি পুণ্যার্থী ইতিমধ্যেই জড়ো হয়েছেন। ধর্মীয় আচার ঘিরে নানা পর্ব পালিত হচ্ছে।
বিভিন্ন আখড়ায় জমায়েত হয়েছেন একাধিক সাধু সন্ত। এই মেলার আকর্ষণ বাড়িয়েছেন তারা। তেমনই অদ্ভুত কয়েকজন ‘সাধুবাবা’ মেলায় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন।
তাদের একেকজনের একেক বিশেষত্ব নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় পত্রিকাগুলো:
‘চা-ওয়ালা বাবা’:
না, তিনি চা বিক্রি করেন না। তবে চা দিয়েই পেট ভরান। আর সে কারণেই তিনি ‘চাওয়ালা বাবা’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। দিনে ১০ বার চা পান করেন ‘চাওয়ালা বাবা’। তাকে দেখতে ভিড় জামাচ্ছে লোকজন।
এই বাবা ৪১ বছর ধরে মৌন রয়েছেন। তবে তার আরও যে বিষয়টি নজর কাড়ছে তা হল, মেলা চত্বরে বসেই তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের বিনামূল্যে অনলাইনে শিক্ষা দেন। আইএএস, আইপিএস চাকরিপ্রার্থীরাও সেই তালিকায় রয়েছেন। তার আসল নাম দীনেশস্বরূপ ব্রহ্মচারী। চা ছাড়াও এই ‘বাবা’র শখ রয়েছে দ্রুতগতির বাইক চালানো।
‘ছোটু বাবা’:
৩২ বছর ধরে স্নান করেননি তিনি- এমন কথাই বলেছেন প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠা ৩ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার ‘ছোটু বাবা’ ওরফে গঙ্গাপুরী মহারাজ। বয়স ৫৭ বছর।
ছোট বড় সবাই পা ছুঁয়ে প্রণাম করছেন এই সাধু বাবাকে। আর তাদের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ দিয়ে চলেছেন বাবাও। মেলার শেষদিন পর্যন্ত থাকলেও মহাকুম্ভে গঙ্গাস্নান করবেন না বলেই জানিয়েছেন তিনি।
এমন সিদ্ধান্ত কেন? সে প্রশ্নে তিনি বলেছেন, তার মনের ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তাই ইচ্ছাপূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্নান করবেন না বলেই তিনি পণ করেছেন।
'আনাজওয়ালে বাবা'
এবারের মহাকুম্ভে অন্যতম আকর্ষণ এই 'আনাজওয়ালে বাবা'। উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্রে থাকেন এই সাধু বাবা। আসল নাম অমরজিৎ। গত পাঁচ বছর ধরে নিজের মাথায় শস্য চাষ করছেন তিনি। সেকারণেই তার এমন নামকরণ।
এখন পর্যন্ত গম, বাজরা, ছোলা, মটর চাষ করেছেন তিনি। সারাক্ষণই তার মাথায় থাকে সবুজ চারা। মহাকুম্ভেও মাথায় গাছ নিয়েই হাজির হয়েছেন তিনি। মেলায় আসার ২৪ দিন আগেই বীজ রোপণ করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
গত পাঁচ বছর ধরে মাথায় চাষ করে আসছেন এই 'আনাজওয়ালে বাবা'। পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিতেই একাজ করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পৃথিবীতে সবুজের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে চান এই বাবা। বলেছেন, “পৃথিবী শস্যশ্যামল থাক। বন্ধ হোক বৃক্ষনিধন। সুস্থ থাকুক পৃথিবী।”
বাবা মোক্ষপুরী:
বাকি সাধুদের ভিড়ে বিশেষভাবে নজর কাড়ছেন এই বাবা। এর মূল কারণ তার চেহারা। দাড়ি, গোঁফে মুখ ঢাকা পড়লেও, ভালোই বোঝা যায় তিনি ভিনদেশি।
এই বাবা মোক্ষপুরীর আসল নাম মাইকেল। এক সময় ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সদস্য। তার দাবি, তিনি তার জীবন সনাতন ধর্মের উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন। হিন্দু ধর্মের প্রচারই এখন তার জীবনের মূল লক্ষ্য।
মার্কিন সেনা থেকে হিন্দু সাধু হলেন কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মোক্ষপুরী বলেন, “একসময় আমিও আর পাঁচজনের মতো অতি সাধারণ ছিলাম। পরিবারের সঙ্গে, স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসতাম। বেড়াতে ভালোবাসতাম। সেনাবাহিনীতেও যোগ দিয়েছিলাম।...”
“কিন্তু, তারপর একদিন অনুভব করলাম, জীবনে কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়। আর তখন থেকেই শুরু হল আমার মুক্তিলাভের পথ অনুসন্ধানের প্রয়াস।” মাইকেলের জন্মও হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০০ সালে প্রথম ভারতে যান তিনি।
মহাকাল গিরি বাবা:
এক হাত উঁচু করে থাকা সাধুবাবা তিনি। রাজস্থানের জোধপুর থেকে আসা এই বাবা ৯ বছর ধরে এক হাত উঁচু করেই রেখেছেন। সনাতন ধর্ম রক্ষা এবং বিশ্ব শান্তির জন্য এমন প্রতীকীভাবে হাত উঁচু করে রেখে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এই বাবা। বলেছেন, আমি ৭ বছর বয়সে সন্যাস নিয়েছি। আর এখন আমার বয়স ৩০।
এক ইউটিউবারের প্রশ্নে মেজাজ হারিয়ে তাকে মারধর করে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন এই মহাকাল গিরি বাবা। যা রীতিমত স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, মহাকুম্ভে মধ্যবয়সী এক সাধু প্রচণ্ড রেগে গিয়ে এক ইউটিউবারকে চিমটা দিয়ে পেটাচ্ছেন। ধাক্কা দিয়ে তাঁবু থেকে বের করে দিচ্ছেন তরুণ ইউটিউবারকে। স্যোশাল মিডিয়ায় বেশিরভাগই কটাক্ষ করেছেন ইউটিউবারকে।
‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’:
৫০ বছরেরও বেশি বয়সি এই সাধু মধ্যপ্রদেশের ইনদওরের বাসিন্দা। রোববার মহাকুম্ভে এসেছেন তিনি। ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’ এখনও পর্যন্ত চারটি কুম্ভমেলায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু কেন এমন নাম? কারণ, সরবসময়ই ১৯৭২ সালের একটি অ্যাম্বাসাডর গাড়িতে ভ্রমণ করেন তিনি। ‘ভিনটেজ’ সেই গাড়ি গত ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে তার সঙ্গী।
‘রাবড়ি বাবা:
আসল নাম শ্রীমহন্ত দেবগিরি। ইতিমধ্যেই মহাকুম্ভে পবিত্র ভূমিতে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছেন তিনি। ভক্তদের প্রসাদ হিসাবে রাবড়ি খেতে দেন বলে তার নাম ‘রাবড়ি বাবা’। প্রসাদের রাবড়ি রোজ নিজেই তৈরি করেন তিনি। ভোর চারটে থেকে রাত পর্যন্ত সেই প্রসাদ ভক্তদের দেওয়া হয়।