“ট্রাম্প যদি জেলেও যান। তাও তিনি নির্বাচনে লড়তে পারবেন এবং জিততে পারবেন”- বলেছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্টের এক সমর্থক।
Published : 02 Apr 2023, 08:23 PM
পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মামলায় অভিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্র্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আদালতে আত্মসমর্পণ করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে জোর আইনি লড়াই চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ওদিকে, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে ট্রাম্প আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন, এমনটাই বিশ্বাস তার ভক্তদের।
সাবেক পর্ন তারকা ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গোপনে অর্থ দেওয়ার মামলায় গত ৩০ মার্চ ম্যানহাটানের গ্র্যান্ড জুরি আদালত ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করে।
যদিও তার বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে সে সময় সিএনএন এর খবরে বলা হয়েছিল, ব্যবসায়িক জালিয়াতির অন্তত ৩০ দফা অভিযোগ আনা হচ্ছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।
ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার খবর যখন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয় তখন তার অনেক ভক্তেরই মনে হয়েছিল, তাদের কিছু একটা করতে হবে।
এমনই একজন রাস্তায় হট ডগ বিক্রেতা ড্রিক ফ্রাজেল।ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার খবর পেয়ে হাতের কাজ ফেলে নিজের গাড়িতে চড়ে বসেন ফ্রাজেল। রওয়ানা হন ট্রাম্পের বাড়ি ফ্লোরিডার পাম বিচের মার-আ-লাগো রিসোর্টের দিকে।
ফ্রাজেলকে এজন্য তার এলাকা সেন্ট অগাস্টিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে যেতে হয়েছে।
বিবিসি জানায়, শনিবার ‘দ্য মার-আ-লাগো র্যালি’ নামে দ্বিতীয় দফায় মিছিল করেছেন ট্রাম্প ভক্তরা। যদিও মিছিলে লোক উপস্থিতি খুব একটা ছিল না।
ফ্রাজেল বিবিসি-কে বলেন, ‘‘আমি টুইটারে তাকে (ট্রাম্প) অভিযুক্ত করার খবর জানতে পারি এবং জানতাম এখানে লোকজন জড়ো হবে।” মার-আ-লাগোর কাছে একটি সেতুতে দাঁড়িয়ে পাশ দিয়ে যাওয়া মোটরযান আরোহীদের তিনি ‘ট্রাম্প হট ডগ’ দিচ্ছিলেন।
অন্যদিকে, সেখান থেকে কয়েকশ’ মিটার দূরে রিসোর্টের ভেতর ট্রাম্প তার উপদেষ্টা এবং আইনজীবীদলের সঙ্গে বসে কীভাবে স্টর্মি ড্যানিয়েলস মামলায় আইনি লড়াই চালাবেন তার পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানা গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আগামী ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। ওইদিন স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ২টার দিকে এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
শনিবারের র্যালিতে খুব বেশি ট্রাম্প ভক্ত উপস্থিত না হলেও যারা ছিলেন তারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আইনি এ লড়াই থেকে ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে বেরিয়ে আসতে পারবেন এবং ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামবেন। এমনকী, তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেও।
ম্যারি নামে স্থানীয় এক অধিবাসী বলেন, ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে বিপাকে ফেলে একটা উদারহণ তৈরি করতে চাইছে। দেখাতে চাইছে তারা নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে।
অন্য আরেক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, স্যোশাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের কিছু সমর্থক তার অভিযুক্ত হওয়াকে ডেমোক্র্যাটদের ভয় পাওয়ার লক্ষণ হিসাবে দেখছে। তাদের মতে, ট্রাম্পের যে আবেদন ধরে রেখেছেন তাতে ডেমোক্র্যাটরা ভীত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নারী বলেন, “আমরা জানতাম এই অভিযোগ আসছে। তারা (ডেমোক্র্যাট) জানে ট্রাম্প আবারও ফিরে আসলে তাদের দিন শেষ। তারা তাই মরিয়া। এটি কৌতুককর।” এই নারীর দৃষ্টিতে ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় একরকম নিশ্চিত।
তিনি বলেন, “ট্রাম্প যদি জেলেও যান। তাও তিনি নির্বাচনে লড়তে পারবেন এবং জিততে পারবেন। তা যাই ঘটুক না কেন।”
পাম বিচের বাসিন্দা ডিনাও বলেন, ‘‘আমার মনে হয় তিনি আবারও আমাদের প্রেসিডেন্ট হবেন। এ কারণে তাকে সমর্থন করার জন্য আমরা আরও অনেক লোককে দেখতে পাব। আমি আশা করি আমরা তার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়া পর্যন্ত এটি দেখতে পাব।”
মিছিলে অংশ নেওয়া মার্সি নামে আরেক নারী বিশ্বাস করেন, নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে সেটা শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে তার পক্ষে যাবে।
‘‘এ অভিযোগ থেকে কিছুই প্রমাণিত হবে না। তাকে যতদূর জানি, তিনি সম্ভবত তার মুখচ্ছবি দিয়ে টি-শার্ট প্রিন্ট করতে যাচ্ছেন এবং লাখ লাখ ডলার উপার্জন করতে চলেছেন। বিনামূল্যে পাওয়া যে কোনও ধরণের প্রচারই ভাল প্রচার।”
ট্রাম্পের প্রচার শিবির থেকে দাবি করা হয়েছে, তাকে অভিযুক্ত করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা ৪০ লাখ ডলারের বেশি অনুদান সংগ্রহ করেছেন। যার এক চতুর্থাংশ প্রথমবারের দাতাদের কাছ থেকে এসেছে।
তবে ট্রাম্প ভক্ত বা তার প্রচার শিবির থেকে যতই আশার কথা বলা হোক, জনমত জরিপ সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিপক্ষে কথা বলছে।
সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প তার দল রিপালিকান পার্টি থেকে যদিও বা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচিত হন, মূল নির্বাচনে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে হেরে যাবেন।
বাইডেন এখনও পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও আগ্রহ থাকার কথা খোলাখুলিই জানিয়েছেন।