মাঙ্কিপক্সকে যৌন রোগ হিসেবে বিবেচনা করা না হলেও আক্রান্তদের বড় অংশই সমকামী পুরুষ বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
Published : 28 Jul 2022, 05:39 PM
বিশ্বের কয়েক ডজন দেশে ছড়িয়ে পড়া মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগীদের বড় অংশই সমকামী পুরুষ বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
এ কারণে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে ডব্লিউএইচও’র মহাসচিব তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস সমকামী পুরুষদেরকে যৌনসঙ্গীর সংখ্যা কমাতে ও নতুন সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানোর কথা পুনর্বিবেচনা করতে পরামর্শও দিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।
“বিভিন্ন দেশ, সম্প্রদায় এবং প্রত্যেকে বিষয়টি সম্বন্ধে জানলে, ঝুঁকিকে গুরুত্ব সহকারে নিলে এবং সংক্রমণ ও ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলোর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হলে এই প্রাদুর্ভাব ঠেকানো যাবে। এটা করার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে, ভাইরাসের সংস্পর্শে যাওয়ার ঝুঁকি কমানো। অর্থ্যাৎ, আপনার নিজের ও অন্যদের জন্য নিরাপদ বিকল্প বেছে নেওয়া।
“এর সঙ্গে যেসব পুরুষরা অন্য পুরুষদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ান, তাদের এই মুহূর্তে যৌন সঙ্গীর সংখ্যা কমানো, নতুন সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার কথা পুনর্বিবেচনা করা এবং প্রয়োজনে পরে ফলোআপ করা যাবে এমন সঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা বিনিময় করা উচিত,” ব্রিফিংয়ে এমনটাই বলেছেন ডব্লিউএইচও প্রধান।
সব দেশেরই মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে সমকামী পুরুষদের কমিউনিটিগুলোকে সম্পৃক্ত ও ক্ষমতায়িত করার দিকে নজর দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করার পাশাপাশি তেদ্রোস মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে সাবধান থাকতেও বলেছেন।
“কুসংস্কার ও বৈষম্য যে কোনো ভাইরাসের মতোই বিপজ্জনক হতে পারে,” বলেছেন তিনি।
মাঙ্কিপক্সকে যৌন রোগ হিসেবে বিবেচনা করা না হলেও যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময়ে যাদের শরীরে এ রোগ ধরা পড়েছে তাদের বেশিরভাগের একাধিক যৌন সম্পর্কের বিষয়টি জানা গেছে, চলতি মাসে সিএনএনকে এমনটাই বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মাঙ্কিপক্স মোকাবেলায় কাজ করা কর্মকর্তা ড. দিমিত্রি দাসকালাকিস।
ছোঁয়াচে মাঙ্কিপক্স সাধারণত স্পর্শের মাধ্যমে এক দেহ থেকে অন্য দেহে যায়। আক্রান্ত কারও ব্যবহৃত চাদর বা তোয়ালে থেকে এবং চুম্বনের মতো মুখোমুখি ঘনিষ্ঠ মিথস্ক্রিয়াও এটি ছড়াতে পারে।
উপসর্গ নেই এমন কারও মাধ্যমে কিংবা বীর্য, যোনি থেকে নির্গত তরল এবং মলের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায় কিনা বিজ্ঞানীরা এখন তা খতিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছে সিডিসি।
তারা বলছে, সংক্রমণ মোকাবেলায় কনডম ব্যবহার সহায়তা করলেও কেবল এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মাঙ্কিপক্সের বিস্তার রোধ সম্ভব নয়।
তবে এরপরও মার্কিন এই প্রতিষ্ঠানটি যৌনক্রিয়ায় কনডম ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়ে বলেছে, এটি অন্যান্য যৌনতাবাহিত রোগ থেকে দূরে রাখবে।
মাঙ্কিপক্স মোকাবেলায় সমকামী পুরুষদের যৌনসঙ্গী কমাতে তেদ্রোসের পরামর্শকে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে সবচেয়ে শক্ত মন্তব্য বিবেচনা করা হচ্ছে। ডব্লিউএইচও’র অন্য কর্মকর্তারা কেউই এই বিষয়ে এতটা স্পষ্টভাবে বলেননি।
নতুন নতুন দেশে রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর আসায় শনিবার ডব্লিউএইচও মাঙ্কিপক্সকে বিশ্বজুড়ে গণস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা বলে ঘোষণা করে।
এই জরুরি অবস্থা ঘোষণার অর্থ এ রোগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের সরকারকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো। কোনো রোগের বিরুদ্ধে ডব্লিউএইচওর এটাই সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা।
২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ডব্লিউএইচও সাতবার বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। শেষবার ঘোষণাটি এসেছিল ২০২০ সালে কোভিড-১৯ কে নিয়ে।