Published : 04 May 2025, 04:11 PM
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম বলেছেন, মাদক পাচার ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকোতে মার্কিন সেনা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, কেননা ‘সার্বভৌমত্ব বিক্রয়যোগ্য নয়’।
শনিবার রাজধানী মেক্সিকো সিটির কাছে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
যৌথ সীমান্তজুড়ে মাদক পাচার ঠেকাতে মাদক সংশ্লিষ্ট কার্টেলগুলোর বিরুদ্ধে লড়তে মার্কিন বাহিনীকে মেক্সিকো ভূখণ্ডের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিতে ট্রাম্প মেক্সিকোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন বলে শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।
এর একদিন পরই শেইনবাউম একই প্রসঙ্গে বললেন।
“ট্রাম্পের সঙ্গে এক ফোনালাপে, তিনি বলেছিলেন, ‘কীভাবে আমরা মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনাকে সহযোগিতা করতে পারি? আমি প্রস্তাব করছি যুক্তরাষ্ট্রের সেনা আপনাদের সহায়তা করুক।’
“জানেন আমি কী বলেছি? বলেছি, না, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ভূখণ্ড পবিত্র, সার্বভৌমত্ব পবিত্র, সার্বভৌমত্ব বিক্রয়যোগ্য নয়, সার্বভৌমত্বকে ভালোবাসতে হয়, রক্ষা করতে হয়,” বলেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, দুই দেশ একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে, কিন্তু “আমরা কখনোই আমাদের ভূখণ্ডে মার্কিন সেনা উপস্থিতি মেনে নেবো না।”
এ প্রসঙ্গে রয়টার্সের চাওয়া মন্তব্যের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক মুখপাত্র বলেন, “ট্রাম্প স্পষ্টভাষায় জানিয়েছেন, এইসব গ্যাং ও কার্টেলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মেক্সিকোকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এ লক্ষ্যে তাদের সহায়তা করতে এবং বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আওতা আরও বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত।”
“ইতিহাসের সবচেয়ে নিরাপদ দক্ষিণপশ্চিম সীমান্ত নিশ্চিতে শেইনবাউমের সঙ্গে কাজ করছেন ট্রাম্প। কিন্তু এরপরও বিপজ্জনক বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো আমাদের যৌথ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে হুমকি সৃষ্টি করে যাচ্ছে এবং তারা যে মাদক ও অপরাধ ছড়িয়ে দিচ্ছে তা দেশজুড়ে মার্কিনি সম্প্রদায়গুলোকে হুমকির মুখে ফেলছে,” বলেছেন এ মুখপাত্র।
শেইনবাউমের সঙ্গে ফোনালাপে ট্রাম্প সেনা মোতায়েনের কথা বলেছিলেন কিনা, এ বিষয়ে রয়টার্স হোয়াইট হাউজের কাছে জানতে চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দিক থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্প এর আগে প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, মেক্সিকো যদি মাদক সংশ্লিষ্ট কার্টেলগুলো ধ্বংসে ব্যর্থ হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র একতরফা সামরিক পদক্ষেপ নেবে।
প্রতিবেশী দুই দেশের দুই প্রেসিডেন্ট গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবারই নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে এসেছে।
শেইনবাউম জানিয়েছেন, এর মধ্যে এক ফোনালাপে তিনি সহিংসতা ও পাচার মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেক্সিকোতে অস্ত্র ঢোকা ঠেকাতে ট্রাম্পের সহযোগিতাও চেয়েছেন।
“আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি, একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারি। কিন্তু আপনি সেটা করবেন আপনার ভূখণ্ডে, আমি আমার ভূখণ্ডে,” বলেন তিনি।
শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৬ এপ্রিলের ফোনালাপেই ট্রাম্প ফেন্টানিল উৎপাদন ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করা মেক্সিকান ড্রাগ গ্যাংগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীকে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা দিতে শেইনবাউমের ওপর জোর খাটানোর চেষ্টা করেছিলেন।
ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সিনালোয়াসহ মেক্সিকোর বেশ কয়েকটি মাদক কার্টেলকে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী সংগঠনের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে; যা সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক পদক্ষেপের দুয়ার খুলে দিয়েছে বলে সেসময়ই অনেক বিশ্লেষক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
মেক্সিকান মাদক কার্টেলগুলোর কার্যকলাপ মোকাবেলায় সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ কী হতে পারে তা নির্ধারণে মার্কিন সেনাবাহিনী এরই মধ্যে আকাশপথে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়িয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট শেইনবাউম সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতিরিক্ত সুরক্ষা নিশ্চিতে একটি সাংবিধানিক সংস্কারেরও প্রস্তাব করেছেন।