এ ঘটনায় হাসপাতালের কয়েকজনসহ মোট ৩০ জনকে চিহ্নিত করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
Published : 17 Aug 2024, 07:11 PM
পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর মেডিকেল কলেজে কতর্ব্যরত একজন নারী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতিবাদে উত্তাল পুরো ভারত।
শনিবার দেশটিজুড়ে চলছে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি। আরজি করের সাবেক অধ্যক্ষ এদিন দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই অফিসে হাজিরা দেন এবং ঘটনার অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের গতিবিধি যাচাই করছেন তদন্তকারীরা।
নিহত চিকিৎসকের (৩১) দেহের ময়না তদন্তে চরম যৌন নির্যাতনের প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু এ ঘটনাকে কর্তৃপক্ষ প্রথমে ‘আত্মহত্যা’ বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছিল। কিন্তু তার সহকর্মী এবং বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষ নির্যাতিতার ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
নিহত চিকিৎসক গত ৮ অগাস্ট টানা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটিতে ছিলেন, রাতে সহকর্মীদের সঙ্গে খাবার খেয়ে তিনি পালমোনোলজি বিভাগের সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যান।
পরদিন সকালে তার জুনিয়র সহকর্মীরা ওই হলের ভেতরেই তার অর্ধনগ্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। ওই তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাদের প্রথমে জানিয়েছিল তাদের মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। পরে অবশ্য তীব্র ক্ষোভের মুখে পুলিশ এই ঘটনায় খুন ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছে।
এই ঘটনায় আরজি কর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। তিনিও বিষয়টি ‘আত্মহত্যা’ বলে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “রাতের বেলা একা একা সেমিনার হলে গিয়ে মেয়েটি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করেছে।”
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইন জানায়, শনিবার সকালে আবার সিবিআই অফিসে হাজিরা দেন আরজি কর হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ।
শুক্রবার বিকেলেও তিনি সিবিআই দপ্তরে গিয়েছিলেন। সেদিন গভীর রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। তারপর শনিবার আবার তাকে তলব করা হয়। এদিন বেশ কিছু নথি নিয়ে তাকে সিবিআই দপ্তরে ঢুকতে দেখা যায়।
এদিকে, আরজি করে কর্তব্যরত নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পরেই সন্দীপের নাম সামনে আসে। চিকিৎসক এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, অধ্যক্ষ সন্দীপ অত্যন্ত প্রভাবশালী।
এই তদন্ত প্রক্রিয়াকেও তিনি প্রভাবিত করতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অনেকে। তার পদত্যাগের দাবি উঠেছিল আরজি কর থেকে।
গত সোমবার সন্দীপ সংবাদমাধ্যমের সামনে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে পদত্যাগ পত্রও জমা দেন তিনি। জানা যায়, শুধু আরজি করের অধ্যক্ষ পদই নয় অধ্যাপকের পদও ছেড়ে দেন তিনি।
তার পরেই সন্দীপকে আবার অন্য একটি সরকারি হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। সেখানও তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। এরপর আদালতের নির্দেশে ছুটিতে চলে যান তিনি।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, আরজি করের চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার ঘটনায় তার সহকর্মীরাও জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ নিহত চিকিৎসকের বাবা-মায়ের। হাসপাতালের বেশ কয়েক জন চিকিৎসক এবং ইন্টার্নের নামও তারা সিবিআইকে জানিয়েছেন।
পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আরজি করে নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জানিয়েছেন, সঞ্জয় নামে একজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলেও তাদের মেয়ের ধর্ষণ এবং খুনের সঙ্গে মাত্র একজন জড়িত বলে তারা মানতে নারাজ।
বরং তারা মনে করেন, এই ঘটনার সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি যুক্ত রয়েছেন। পুরো ঘটনাতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জড়িত বলে তাদের বিশ্বাস।
নিহত চিকিৎসকের সঙ্গে কাজ করতেন, এমন কয়েক জনের নাম সিবিআইকে জানিয়েছেন তার বাবা-মা। তাদের সন্দেহ করার কারণও জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ অনুযায়ী কয়েকজনসহ এ ঘটনায় মোট ৩০ জনকে চিহ্নিত করেছে সিবিআই।
সিবিআইয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা যাদের নাম বলেছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া, কলকাতা পুলিশের যারা প্রাথমিকভাবে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিলেন তাদের মধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
এদিকে,মৃত চিকিৎসকের সহকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেছেন, ‘‘রাত ২টার পর মেয়েটি ঘুমোতে গিয়েছিল। তার আগে পর্যন্ত সে সহকর্মীদের সঙ্গেই ছিল। পরের দিন সকাল ৯টায় দেহ উদ্ধার হয়। এতটা সময় তার খোঁজ কেউ নিলেন না কেন?’’
শুক্রবারও আরজি করের কয়েক জন শিক্ষার্থী চিকিৎসককে তলব করেছিল সিবিআই। তারা সিবিআই অফিসে হাজিরাও দিয়েছিলেন।
তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় ওই রাতে যৌনপল্লিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে আরজি করে ঢোকেন তিনি। তার পরেই নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্তের গতিবিধি যাচাই করে দেখছেন গোয়েন্দারা।
কলকাতা পুলিশ জানায়, সে দিন রাত ১১টা নাগাদ আরজি করের সিসিটিভিতে অভিযুক্ত সঞ্জয়কে দেখা যায়। তখন তিনি হাসপাতালে ঢুকেছিলেন। তারপর কিছু ক্ষণের মধ্যেই আবার বেরিয়ে যান। পরে আবার হাসপাতালে ফেরেন। জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনার হলের কাছে সিসি ক্যামেরায় তাকে ভোর ৪টার দিকে দেখা যায় । ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট পর সেখান থেকে আবার বেরিয়ে যান তিনি।
প্রতিবাদমুখর ভারত, ৫ দাবিতে কর্মবিরতিতে চিকিৎসকরা
বিক্ষোভে উত্তাল ভারতে কর্মবিরতির ডাক চিকিৎসকদের