কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে এক শিক্ষানবীশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে নারীরা নিরাপত্তার দাবিতে মিছিলে নামছে।
Published : 14 Aug 2024, 11:11 PM
ভারতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আরজি কর হাসপাতালে এক শিক্ষানবীশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে এবার রাজ্যজুড়ে নারীরা রাতজেগে রাজপথ দখলের কর্মসূচি নিয়েছে।
ভারতের স্বাধীনতা দিবসের আগেরদিন ১৪ অগাস্ট মাঝরাতে নারীরা স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার দাবিতে কলকাতাসহ রাজ্যর বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ মিছিলে নামবে। রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে রাস্তায় নেমে তারা প্রতিবাদ জানাবে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
সবার মুখে মুখে এখন ঘুরছে ‘রাত দখল’ (রিক্লেম দ্য নাইট) ডাক। এর সূচনা হয় স্যোশাল মিডিয়াতে। চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়াতে সরব হওয়া অনেকের মধ্যে ছিলেন রিমঝিম সিনহা নামের এক নারী।
তিনিই প্রথম রাতে এক কর্মসূচির ডাক দিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন রিমঝিম। বর্তমানে তিনি গবেষণায় নিয়োজিত।
তিনি বলেন, “আরজি করের ঘটনার পর আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। প্রতিটা সময়ে আমার মনে হচ্ছিল যে রাতে ডিউটি করতে গিয়ে একজন নারী চিকিৎসকের এই অবস্থা হয়, তাহলে আমরা যারা কাজে বেরচ্ছি, তারা কোন সময়ে, কোথায় নিরাপত্তা হিসাবে কিছু পেতে পারি? সেই জায়গা থেকেই আমি ফেইসবুকে পোস্ট করেছিলাম যে, ১৪ অগাস্ট রাতে আমি নারী স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার দাবিতে বসব। সেটা ভেবেই আমি ডাক দিয়েছিলাম, কিন্তু এতে দারুণ সাড়া পেয়েছি।”
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, নারীদের এই আন্দোলনকে সামনে রেখে কলকাতা এবং রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি বাহিনী মোতায়েন করছে পুলিশ-প্রশাসন। তবে তা আন্দোলন ‘দমন’ বা ‘প্রতিহত’ করতে নয়। উল্টো নারীদের ‘সুরক্ষা’ দিতে।
জমায়েত যাতে ‘শান্তিপূর্ণ হয়, ‘রাত দখল’ কর্মসূচির রাত যাতে নিরাপদ হয়, তা নিশ্চিত করা এবং এতে যোগদানকারীদের নিরাপত্তাকেই প্রাধান্য দিতে চায় পুলিশ।
আন্দোলনের জন্য কোথায় কত বাহিনী মোতায়েন করা হবে, তা নিয়ে কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্যপুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে।সর্বত্র যথেষ্ট নারী পুলিশ মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোন রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
প্রথমে কলকাতা কেন্দ্রিক ‘প্রতীকী’ জমায়েতের আহ্বান থাকলেও এখন সেই ডাক উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সাড়া দিয়ে অনেক জায়গাতেই বড় জমায়েত হতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।
তবে কোনও নির্দিষ্ট সংগঠন এই কর্মসূচি ডাকেনি এবং জমায়েতটিও রাজনৈতিক নয়। কোনও রাজনৈতিক পতাকা সেখানে ওড়ানো হবে না। তাই জমায়েতের স্থান ও আকার কেমন হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না পুলিশ।
গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার আরজি কর সরকারি হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে ৩২ বছর বয়সী ওই নারী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে অনুযায়ী, নির্যাতিতার চোখ, মুখ ও গোপনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত ছিল।
ওই ঘটনার পর নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন তীব্র হয়। ভারতজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করেন। কলকাতাসহ মুম্বাই এমনকী রাজধানী দিল্লি ও অন্যান্য আরও কয়েকটি নগরীতে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি ঘোষণা করে।
খুনের ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলার ডাক দেয় বিক্ষোভকারীরা। সব চিকিৎসা কর্মীর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবিও জানায় তারা।