রাজিয়া মুরাদি: শিক্ষা দিয়ে তালেবানকে হারাতে চান যে তরুণী

কখনো না কখনো দেশে ফিরতে পারবেন। তখন দেশের জন্য কাজ করার আশা রাখেন এই তরুণী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2023, 05:32 PM
Updated : 11 March 2023, 05:32 PM

লোকপ্রশাসন বিভাগে স্নাতকত্তোর পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া রাজিয়া মুরাদি স্বর্ণপদক নিতে যখন মঞ্চে ওঠেন তখন একইসঙ্গে আনন্দের পাশাপাশি এ আফগান তরুণীর মন দুঃখ ভারাক্রান্তও ছিল।

কারণ, শিক্ষা জীবনের অসাধারণ এই অর্জনের আনন্দ ভাগ করে নিতে সে সময়টা তার পরিবার কাছে ছিল না।

২৭ বছরের রাজিয়া গত দুই বছর ধরে ভারতের গুজরাটে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন।

গত সোমবার গুজরাট সরকার রাজিয়াকে স্নাতকত্তোরে সিজিপিএ ৮ দশমিক ৬০ পাওয়ার জন্য স্বর্ণপদক দেয়। যা তার বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বর।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘এটা অম্লমধুর একটি মুহূর্ত। আমার কঠোর পরিশ্রম ফল দিয়েছে, এজন্য আমি খুব খুশি। কিন্তু আমি আমার পরিবারকে মিস করেছি।

‘‘আমি সবসময় আফগানিস্তানের ওইসব মেয়ে ও নারীদের কথা চিন্তা করি, যারা তাদের শিক্ষাগ্রহণ ও কাজ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

২০২১ সালে অগাস্টে তালেবান পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর দেশটিতে মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

তালেবানের নির্দেশে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। তার আগেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে মেয়ের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়। নারীদের কাজ করার উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে আসেন রাজিয়া। তখনও তালেবান তার দেশের ক্ষমতায় আসেনি। ফলে দেশের পরিস্থিতিও অন্যরকম ছিল। সেখানে মেয়েদের তখনও লেখাপড়া করার সুযোগ ছিল।

সে সময়ে রাজিয়া স্নাতকত্তোরের জন্য ভারতকে বেছে নিয়েছিলেন কারণ, ভারতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ অনেক বেশি। এছাড়া, সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু মিল থাকায় তিনি ভারতে নিজ দেশের অভাব খুব একটা বোধ করবেন না।

ভারত সরকারের দেওয়া শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে রাজিয়া বীর নর্মাদ সাউথ গুজরাট ইউনিভার্সিটির লোকপ্রশাসন বিভাগে স্নাতকত্তোর করতে আসেন।

আফগানিস্তানের আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন এবং তারা প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে ভালো বলেছেন বলে রাজিয়া ভিএনএসজিইউ বেছে নেন।

আর লোকপ্রশাসন বিভাগে পড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রশাসনিক এবং সরকারের নীতিনির্ধারণ সম্পর্কিত বিষয়ে তার আগ্রহ আছে। এবং তিনি আশা করছেন, জনকল্যাণমূলক বিষয় নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে তিনি আফগানিস্তানের সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখতে পারবেন।

বলেন, ‘‘দেশে ফিরে যাওয়া এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারলে সেটা আমার জন্য দারুণ সম্মানের হবে।”

আফগানিস্তানে থাকতে রাজিয়া মানবিক সহায়তা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করা কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন।

রাজিয়ার জন্য লেখাপড়ায় মন দেওয়া এবং নিজেকে প্রস্তুত করা কঠিন ছিল। কারণ, তিনি সব সময় দেশে তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেন।

বলেন, ‘‘যুদ্ধাবস্থায় সবাই বিপদে থাকেন। আমি সব সময় বোমা বিস্ফোরণ বা হামলার খবর পেতাম। আমি যেখানেই পারতাম, সেখানেই আমার পরিবারের নিরাপত্তার খবর নিতাম। কিন্তু আফগানিস্তানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা এতই দুর্বল যে আমার জন্য তাদের খবর পাওয়া কঠিন ছিল।”

তিনি বলেন, যখনই তিনি হতাশায় ভুগতেন বা ভয় পেতেন। তখন নিজেকে বোঝাতে তিনি নিজেকে বলতেন, তাকে তার পরিবারের একজন সৈনিক হয়ে উঠতে হবে।

‘‘তারা আমার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করেছে। তাই লেখাপড়ায় শ্রেষ্ঠ হয়ে আমি তাদের ত্যাগের প্রতিদান দিতে চাইতাম।”

নিজের দেশের ‍অবস্থা ভালো না থাকায় গত দুই বছর রাজিয়া পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আফগানিস্তান যেতে পারেননি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরও যেতে পারছেন না।

বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমার জন্য আফগানিস্তানে কোনো ভবিষ্যত নেই।”

তবে এক সময় দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখেন এই তরুণী। তাই তিনি দেশের হয়ে কথা বলতে চান।

বলেন, ‘‘যদি আমরা চুপ থাকি তবে তালেবান শাসন ব্যবস্থা কখনো শেষ হবে না। তারা চায় মানুষ চুপ থাকুক।”

রাজিয়া এখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইডি করছেন।

‘‘আমার পরিবার এবং আমার সম্প্রদায় সবসময় স্বপ্ন পূরণের পথে আমাকে সহায়তা করেছে। তাদের কারণেই আমি সমাজে একজন সক্রিয় নারী হিসেবে কাজ করতে পেরেছি।

‘‘তাদের কারণেই আমার এতসব অর্জন।”