সৌদি আরবে মার্কিন ও রুশ প্রতিনিধিদের মধ্যে ১২ ঘণ্টার বৈঠকে ২০২২ সালের কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করা ও তার বিনিময়ে রুশ সার রপ্তানিতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
Published : 25 Mar 2025, 10:46 AM
রাশিয়া একদিকে শান্তি নিয়ে ‘ফাঁপা বক্তব্য দিচ্ছে’, অন্যদিকে ইউক্রেইনে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েই যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে কিইভ।
সোমবারও মস্কোর বাহিনী উত্তর-পূর্ব ইউক্রেইনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যখন কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে সৌদি আরবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক চলছিল।
সুমি শহরে সোমবারের রুশ হামলায় অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার পর ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেছেন, শান্তির বিষয়ে ফাঁপা বক্তব্য না দিয়ে বরং রাশিয়ার উচিত হামলা বন্ধ করা।
একইদিন রিয়াদে মার্কিন ও রুশ প্রতিনিধিদের মধ্যে ১২ ঘণ্টার বৈঠকে ২০২২ সালের কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করা ও তার বিনিময়ে রুশ সার রপ্তানিতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর এই শস্য চুক্তির অধীনেই কিইভ কৃষ্ণসাগর দিয়ে তার খাদ্যপণ্য রপ্তানি করতে পারতো। ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে রাশিয়া এই চুক্তি থেকে সরে আসে।
ওয়াশিংটন-মস্কোর মধ্যে সর্বশেষ আলোচনা নিয়ে মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার কথা, জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো।
সোমবার রাতে হোয়াইট হাউজের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, রিয়াদে ‘খুবই ভালো’ আলোচনা হয়েছে এবং এ নিয়ে ‘শিগগিরই একটি ইতিবাচক ঘোষণা আসবে’ বলে আশা করা হচ্ছে।
মস্কোর সঙ্গে আলোচনার পর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ফের কিইভের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসবেন বলে জানিয়েছে ইউক্রেইনের সম্প্রচারমাধ্যম সুস্পিলনে।
ইউক্রেইনের নেটোতে যোগ দেওয়ার চিন্তা, তাদের নিরাপত্তা বাহিনীতে নাৎসি আধিপত্য এবং মস্কোর নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেইনে সাঁড়াশি আক্রমণ চালালে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সংঘাত শুরু হয়।
চতুর্থ বছরে গড়ানো এই যুদ্ধ এরই মধ্যে দুই পক্ষের লাখো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, উদ্বাস্তু হয়েছে অসংখ্য ইউক্রেইনীয়।
যুদ্ধের বাস্তবতায় রাশিয়া বেশ এগিয়েই আছে। তাদের দখলে ইউক্রেইনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা। কিইভ মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোর অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তাদের অর্থনীতি এখনও গতিশীল। উল্টো বিপাকে পড়েছে রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল ইউরোপের অনেক দেশ, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সেসব দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
ক্ষমতা বসেই ট্রাম্প প্রশাসন খুব দ্রুত ইউরোপের এ যুদ্ধের ইতি টানতে চাইলেও, বাস্তবে পরিস্থিতি যে এত সহজ নয়, গত কয়েক সপ্তাহের আলোচনায় তারই প্রমাণ মিলেছে। এমনকী আংশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে দুই পক্ষকে রাজি করাতেও ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের গলদঘর্ম হতে হচ্ছে।
যে কারণে রিয়াদে কৃষ্ণসাগরকে কেন্দ্র করে ‘সিজফায়ার লাইট’ বা ‘লঘু যুদ্ধবিরতি’ অর্জনের মিশনে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার রিয়াদে রিটজ-কার্লটন হোটেলে রুশ-মার্কিন প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে; রোববার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ইউক্রেইনের প্রতিনিধিরাও একই হোটেলে থাকছেন।
রিয়াদে এই আলোচনা চলাকালেও রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা থেমে নেই।
সোমবার সুমিতে স্কুল, হাসপাতাল এবং অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকও রাশিয়ার হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিল বলে অভিযোগ করেছেন ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা।
তাদের ভাষ্যমতে, এদিনের হামলায় ১৪ শিশুসহ ৬৫ জন আহত হয়েছে।
সুমি রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলের লাগোয়া। গত বছর আচমকা এক আক্রমণে কিইভবাহিনী কুর্স্কের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণে নিলেও রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তার সিংহভাগই পুনর্দখল করে নিয়েছে।
ইউক্রেইনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্মিহাল বলেছেন, রাশিয়া যে ‘সন্ত্রাস চালিয়েই যেতে চায়’ সুমিতে আক্রমণ সেটাই দেখাচ্ছে।
মস্কো ও কিইভ একে অপরের বিরুদ্ধে জ্বালানি স্থাপনায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনেরও অভিযোগ এনেছে। দুই পক্ষের মধ্যে গত সপ্তাহে হওয়া সমঝোতায় ৩০ দিন কেউ কারও জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা না করার শর্তে রাজি হয়েছিল।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ইউক্রেইন দক্ষিণ রাশিয়ার ক্রাসনোদরের ক্রোপোৎকিনস্কায়া তেল পাম্পে ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
সোমবার রাতভর রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ইউক্রেইনের পাঠানো ২২৭টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার দাবিও করেছে তারা।
একইদিন লুহানস্কে কিইভের গোলাবর্ষণে দুই সাংবাদিক, তাদের গাড়ির চালকসহ ৬ জন নিহত হয়েছে বলেও জানিয়েছে রুশ গণমাধ্যম।