আগামী দিনে হামাসের নেতৃত্ব যারা দিতে পারেন সেই তালিকায় আছেন- মোহম্মদ সিনওয়ার, খলিল আল-হায়া, খালেদ মেশাল, মাহমুদ আল-জহর, মোহাম্মদ শাবানা, মারওয়ান ঈসা ও রওহি মুশতাহা।
Published : 18 Oct 2024, 09:01 PM
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক শাখার শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া গত জুলাইয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর দলটির প্রধান হয়ে ওঠা ইয়াহিয়া সিনওয়ারও এবার হত্যার শিকার হলেন।
তার মৃত্যুতে নেতৃত্বে শূণ্যতা তৈরি হয়েছে হামাস গোষ্ঠীতে।এ পরিস্থিতে নতুন করে যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হল: আগামী দিনে হামাসের নেতৃত্ব দেবেন কারা? এ তালিকায় উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি নাম।
তারা হলেন—মোহম্মদ সিনওয়ার, খলিল আল-হায়া, খালেদ মেশাল, মাহমুদ আল-জহর, মোহাম্মদ শাবানা, মারওয়ান ঈসা ও রওহি মুশতাহা।
মোহাম্মদ সিনওয়ার:
তিনি নিহত হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই। হামাসের সশস্ত্র শাখার সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন কমান্ডার তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে তার জন্ম। তিনি জনসম্মুখে আসেন কমই এবং গণমাধ্যমেও কথা বলেন কম।
কিন্তু ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মতোই মোহাম্মদ সিনওয়ারও ইসরায়েলের অন্যতম শীর্ষ টার্গেট। ইসরায়েলের ওয়ান্টেড তালিকায় আছেন তিনি। কয়েকবার ইসরায়েলের হত্যাচেষ্টা থেকে মোহাম্মদ সিনওয়ার বেঁচে গেছেন।
বিমান হামলা চালিয়ে এবং রাস্তার ধারে বোমা পেতে রেখে তাকে মারার চেষ্টা করেছিল ইসরায়েল। সবশেষ তাকে হত্যার চেষ্টা চলে ২০২১ সালে।
খলিল আল-হায়া:
ইয়াহিয়া সিনওয়ারের উপ-প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন খলিল আল-হায়া। সাম্প্রতিক সময়ে ইসমাইল হানিয়ার তদারকিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ইরানের রেভল্যুশনারী গার্ডের তথ্যমতে, হানিয়া যে বাসভবনে থাকার সময় তার ওপর ইসরায়েলের বোমা হামলা হয়েছিল, সেই একই জায়গায় ছিলেন খলিল আল-হায়া। তবে হামলা হওয়ার সময় তারা একই অ্যাপার্টমেন্টে ছিলেন না।
খালেদ মেশাল:
২০০৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে হামাসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৬৮ বছর বয়সী খালেদ মেশাল। ১৯৯৭ সালে তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছিলেন তাকে ইসরায়েলের হত্যাচেষ্টার ঘটনার মধ্য দিয়ে। ওই বছর ইসরায়েলি এজেন্টরা জর্ডানের রাজধানী আম্মানে খালেদ মেশালের দেহে বিষ প্রয়োগ করে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। বর্তমানে মেশাল অন্যান্য উর্ধ্বতন হামাস নেতাদের সঙ্গে কাতারে বাস করছেন।
মাহমুদ আল-জহর:
জহর পেশায় একজন সার্জন। ইসরায়েল এবং হামাসের অন্যান্য বিরোধীদের প্রতি জহরের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তার বন্ধু এমনকি শত্রুরাও তাকে ‘জেনারেল’ বলেই সম্বোধন করত। গতবছর ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে ঢুকে হামাসের হামলার ঘটনার পর জহর জনসম্মুখে কোনও বিবৃতি দেননি এবং প্রকাশ্যেও কোনও সময় আসেননি।
তার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা অজানা। ২০০৩ সালে ৭৯ বছর বয়স্ক এই হামাস কর্মকর্তা ইসরায়েলের হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন। তাছাড়া, ২০০৭ সালে হামাস গাজার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর মাহমুদ আল-জহরই প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন।
মোহাম্মদ শাবানা:
হামাস নেতা শাবানা, আবু আনাস শাবানা নামেই বেশি পরিচিত। তিনি এখনও হামাসের অবশিষ্ট শীর্ষ ও অভিজ্ঞ সশস্ত্র কমান্ডারদের একজন। বর্তমানে তিনি গাজার দক্ষিণে রাফায় হামাসের একটি ব্যাটালিয়নের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
হামাসের কয়েকটি সূত্রমতে, শাবানা রাফায় সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০০৬ সালে সীমান্তপারের একটি হামলায়ও তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ওই হামলায় ইসরায়েলের সেনা গিলাদ শালিতকে বন্দি করেছিল হামাস।
২০১৪ সালে ৫০ দিনের যুদ্ধের সময় ইসরায়েল হামাসের তিন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার পর শাবানা রাফা ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব নেন।
মারওয়ান ঈসা:
গত মার্চ মাসে ইসরায়েল বলেছিল, তারা মারওয়ান ঈসাকে হত্যা করেছে। তিনি হামাসের তখনকার সামরিক নেতা মোহাম্মদ দেইফের উপপ্রধান ছিলেন। কিন্তু হামাস ঈসার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানায়নি। দেইফ জুলাইয়ে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হন।
ফিলিস্তিনিরা ঈসাকে ডাকে ‘ছায়া মানব’ বলে। কারণ, তিনি শত্রুর রাডার থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারেন। হামাস গোষ্ঠীতে তিনি তিন নাম্বার শীর্ষ পদে উঠে এসেছিলেন। তিনি এবং অন্য আরও দুইজন হামাস নেতা মিলে গোপনে একটি ত্রীপক্ষীয় সামরিক কাউন্সিল গড়ে তুলেছিলেন। এই কাউন্সিল কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
রওহি মুশতাহা:
রওহি মুশতাহা হামাসের ভেতরে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের একজন আস্থাভাজন ও শক্তিশালী মিত্র ছিলেন। সিনওয়ারের সঙ্গে মিলে মুশতাহা ১৯৮০’র দশকের শেষদিকে হামাসের প্রথম নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই ব্যবস্থায় ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করা ফিলিস্তিনিদের খুঁজে বের করে তাদের হত্যা করা হত।
২০১১ সালে সিনওয়ারের সঙ্গে মুশতাহাও ইসরায়েলের জেল থেকে মুক্তি পান। সম্প্রতি তাকে রাফা সীমান্ত ক্রসিংয়ে কার্যক্রম পরিচালনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গাজায় হামাস ও মিশরের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়েছে।
গত ৩ অক্টোবরে ইসরায়েল বলেছিল, মুশতাহা তিন মাস আগে গাজায় বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। তবে হামাস তার মৃত্যু নিশ্চিত কিংবা অস্বীকার কোনওটিই করেনি। ফলে মুশতাহার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা স্পষ্ট জানা যায়নি।