নীতি পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যু ঘিরে ইরান জুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরো দুই বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
তারা হলেন, মোহাম্মদ মাহদি কারামি এবং সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেইনি। বিক্ষোভের সময় ইরানের আধাসামরিক বাহিনীর এক সদস্যকে হত্যার অভিযোগে তাদের দোষীসাব্যস্ত করা হয় বলে জানায় বিবিসি।
এরআগ গত ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে মোহসেন শেকারি ও মাজিদ রেজা রেহনাভার্দ নামে দুই বিক্ষোভকারীকে জনসম্মুখে ফাঁসি দেওয়া হয়। তাদের উভয়ের বয়সই ছিল ২৩ বছর।
মোহসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি গত সেপ্টেম্বরে তেহরানের একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করে বড় ছোরা দিয়ে আধাসামরিক বাহিনীর এক সদস্যকে আঘাত করেছিলেন।
আর নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্যকে হত্যার অভিযোগে মাজিদ রেজাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এভাবে বিক্ষোভের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করার অভিযোগ এনে আদালতের একের পর এক বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ‘লজ্জাজনক বিচার’ বলে বর্ণনা করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।
২২ বছরের মোহাম্মদ মাহাদির পরিবার জানায়, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে এমনকি তারা তাদের ছেলের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে পারেননি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে দাবি করেন, একদল বিক্ষোভকারী কয়েকদিন আগে নিহত হওয়া এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুতে শোক পালন করছিল। ওই সময়ে তারা হঠাৎ করে আধাসামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা রুহোল্লা আজামিয়ানের উপর হামলে পড়ে এবং তাকে নগ্ন করে পিটিয়ে হত্যা করে।
দেশটিতে নারীদের জন্য থাকা কঠোর পোশাকবিধি ঠিকঠাক না মানার অভিযোগে আটক ২২ বছরের তরুণী মাশাকে গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে আটকের পর পুলিশি হেফাজতে তিনি মারা গেলে তার দাফনের দিন থেকে তার শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। যা কয়েকদিনের মধ্যে ইরানজুড়ে মোল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভে রূপ নয়।
বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৫১৬ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সি-এইচআরএএনএ। নিহতদের মধ্যে ৭০ জন শিশু। আরো ১৯ হাজার ২৬২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি সংস্থাটির। বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর ৬৮ সদস্য নিহত হয়েছে বলেও জানায় এইচআরএএনএ।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ইরানের কর্তৃপক্ষ অন্তত ২১ জনের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে। ‘গণআন্দোলনকে দমাতে এবং মানুষকে ভীত করতেই’ এসব মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে বলে ভাষ্য অ্যামনেস্টির।
ইরানের বিচারবিভাগের তথ্য অনুযায়ী দেশটির বিপ্লবী আদালতগুলো এখন পর্যন্ত সরকারবিরোধী বিক্ষোভে জড়িত আরও ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। অভিযুক্তদের পরিচয় জানায়নি তারা।
এরইমধ্যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরও করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: