বিদ্রোহীরা দুটি বড় নগরী দখলের পর এখন হোমস নগরীর দিকে এগিয়েছে। হোমসের পতন প্রেসিডেন্ট আসাদের শাসনের ইতি ডেকে আনতে পারে।
Published : 07 Dec 2024, 12:58 AM
আলেপ্পোয় বিদ্রোহীদের নতুন হামলা ঘিরে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠা সিরিয়ার রণাঙ্গনে অপত্যাশিতভাবে দ্রুত বদলাচ্ছে পরিস্থিতি।
ইসলামপন্থি দল হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই দুটি বড় নগরী- আলেপ্পো ও হামা দখলের পর এখন হোমস নগরীর দিকে এগিয়েছে।
সেখানে বড় ধরনের লড়াইয়ের আশঙ্কায় লোকজন এরই মধ্যে শহর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছে।
বিদ্রোহীদের এই অগ্রযাত্রায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এবং তার একনিষ্ঠ সমর্থক রাশিয়া ও ইরানের জন্য ঝুঁকি বেড়েছে।
আলেপ্পো এবং হামার চেয়ে হোমস কৌশলগত দিক থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ নগরী। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক এবং পশ্চিমাঞ্চলের আসাদপন্থি এলাকাগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কেন্দ্রবিন্দু এই হোমস নগরী।
সিরিয়ার পশ্চিমে আসাদ পরিবারের সমর্থকদের শক্ত ঘাঁটি এবং দক্ষিণে রাজধানী দামেস্কে যাওয়ার পথে পড়ে হোমস। তাই এই নগরী দখলে নিলে তা বিদ্রোহীদের জন্য বড় ধরনের জয় হবে। আর তা আসাদের পতনও ডেকে আনতে পারে।
হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নেতা আবু মোহাম্মদ আল-গোলানি সিএনএন-কে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাদের লক্ষ্য এখন আসাদের শাসন উৎখাত করা।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের এখন বিদ্রোহীদের তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের এই নতুন চেষ্টা রুখে দেওয়ার সক্ষমতা আছে কিনা সবার দৃষ্টি এখন সেদিকে।
বিবিসি জানায়, সিরিয়ার সেনাবাহিনী বর্তমানে তেমন ভাল অবস্থায় নেই। সেনারা দীর্ঘদিন ধরেই কম বেতন এবং দুর্বল সরঞ্জামের অভাবে হতাশ। প্রেসিডেন্ট আসাদ সেনাবাহিনীতে বেতন ৫০ শতাংশ বাড়ানোর নির্দেশ দিলেও তাতে পরিস্থিতি পাল্টানোর সম্ভাবনা কম।
আসাদের প্রধান দুই মিত্র রাশিয়া ও ইরান তার শাসন টিকিয়ে রাখতে এখনও ভূমিকা পালন করছে। রাশিয়া সিরিয়ার উপকূলীয় শহরে তাদের নৌ ঘাঁটি রক্ষার স্বার্থে আসাদকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
তবে ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে রাশিয়াও সামরিক শক্তিতে দুর্বল হয়েছে। সেকারণে যথেষ্ট শক্তি দিয়ে তারা সিরিয়ায় লড়তে পারছে না।
অন্যদিকে, ইরান অতীতে অনেকটা আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে আসাদকে সামরিক সহায়তা দিলেও বর্তমানে তারা সরাসরি সংঘাতে জড়াতে আগ্রহী নয় বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
কারণ, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইরান এবং তাদের সমর্থনপুষ্ট লেবাননের হিজবুল্লাহর অবস্থানও আগের তুলনায় অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। অবশ্য হিজবুল্লাহ তারপরও আসাদের পাশে দাঁড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে।
হিজবুল্লাহ হোমসের নিরাপত্তা জোরদার করতে লেবানন থেকে এরই মধ্যে কিছু যোদ্ধা পাঠিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ইরান ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক পরামর্শক পাঠিয়ে সীমিত পরিসরে আসাদকে সহায়তা করার চেষ্টা করছে।
এতে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, অতীতে আসাদ এই মিত্রদের কাছ থেকে যতটা সহায়তা পেয়েছেন, সেই পূর্ণ মাত্রার সামরিক সহায়তা এখন তিনি পাচ্ছেন না।
আসাদের রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকা যে কেবল তার সশস্ত্র বাহিনী আর এই মিত্রদের সমর্থনের ওপর নির্ভর করছে তাই না, বরং তার বিরোধিতা করা নানা গ্রুপের মধ্যকার বিদ্যমান বিভক্তির ওপরও নির্ভর করছে।
আসাদ শাসন টিকে থাকার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব। আসাদ ও তার সমর্থকরা এখন সেই একই ব্যাপার ঘটুক সেটিই আশা করবে।
আসাদ এখনও কিছু সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সমর্থন পাচ্ছেন। বিশেষত তার নিজস্ব আলাউইত সম্প্রদায়, যারা জিহাদিদের কাছে ক্ষমতা চলে যাওয়ার ভয়ে শঙ্কিত।
শেষ কথায় বলতে গেলে, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ এখন মূলত রাশিয়া, ইরান এবং তুরস্কের মতো দেশগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
চারবছর আগে তারা সিরিয়ার বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল নিয়ে বিশেষত ইদলিবে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিল। তবে সম্প্রতি সিরিয়ায় অপ্রত্যাশিত প্রেক্ষাপট তাদের সবাইকেই হতবাক করেছে।
এখন হয়ত তাদেরকে দ্রুতই নতুন করে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে হবে এবং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে যে, আসাদের সিরিয়া নাকি আসাদবিহীন সিরিয়া-- কোনটিতে তাদের স্বার্থ সবচেয়ে ভাল রক্ষা হবে।