ভূমিকম্পে আটকাপড়াদের খোঁজে ইন্দোনেশিয়ার উদ্ধারকর্মীরা

ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে আটকাপড়াদের উদ্ধারের চেষ্টায় জরুরিবিভাগের কর্মীরা রাতভর কাজে করে যায়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2022, 07:57 AM
Updated : 22 Nov 2022, 07:57 AM

প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের পর জাভা দ্বীপের পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি শহরের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছেন ইন্দোনেশিয়ার উদ্ধারকর্মীরা। 

সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২১ মিনিটে পর্বতবেষ্টিত সিয়ানজুর শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়।

ভূমিকম্পটি ৭৫ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে রাজধানী জাকার্তায়ও অনুভূত হয়, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড স্থায়ী প্রবল কম্পনে সিয়ানজুরের আতঙ্কিত বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসে, এ সময় বহু ভবন ধসে পড়ে।

রাতেই সিয়ানজুরের এক হাসপাতালের পার্কিং এলাকা আহতদের দিয়ে ভরে যায়, অনেকে সেখানেই অস্থায়ীভাবে তৈরি তাঁবুতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসা কর্মীরা টর্চের আলোতে আহতদের ক্ষত সেলাই করে।     

ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে আটকাপড়াদের উদ্ধারের চেষ্টায় জরুরিবিভাগের কর্মীরা রাতভর কাজে করে যায়। যে এলাকাটিতে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়েছে সেটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং ভূমিধস প্রবণ। যে সব বাড়ির অবকাঠামো দুর্বল ছিল সেগুলো ধসে পড়েছে। 

বিবিসি জানিয়েছে, ঠিক কতোজন নিহত হয়েছে তা মঙ্গলবার দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পরও পরিষ্কার হয়নি।

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ প্রশমণ সংস্থা (বিএনপিবি) জানিয়েছে, তাদের তথ্য অনুযায়ী ১০৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে। কিন্তু পশ্চিম জাভার গভর্নর রিদওয়ান কামিল নিহতের সংখ্যা ১৬২ বলে জানিয়েছেন যা যাচাই করা যায়নি।  

বিএনপিবি জানিয়েছে, আরও ৩৯০ জন আহত হয়েছে এবং ওই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৭০০০ লোককে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। এখনও প্রায় ২৫ জন ভেঙ্গে পড়া ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে জানিয়েছে তারা।

এর আগে সিয়ানজুরের জেলা প্রশাসক হেরমান শুহেরমান জানান, নিহতদের মধ্যে ৪০ জন শিশু আর অন্তত ৭০০ জন আহত হয়েছে, যাদের অনেকেরই পড়ন্ত বস্তুর আঘাতে হাড় ভেঙ্গে গেছে।

এ ভূমিকম্পে মোট ১৩০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং আরও অনেকে এখনও ‘বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে আটকা পড়ে আছে’ বলে জানিয়েছেন গভর্নর কামিল। সময়ে সঙ্গে সঙ্গে হতাহতদের সংখ্যা আরও বাড়বে, কর্মকর্তারা এমন আশঙ্কা করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইন্দোনেশিয়া পুলিশের মুখপাত্র দেদি প্রাসেতিও রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা অন্তারাকে বলেছেন, উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করার জন্য মঙ্গলবার সকালে কয়েকশ পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে।  

“আটকা পড়াদের উদ্ধার করে আনাই আজকে তাদের প্রধান কাজ বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে,” বলেছেন তিনি।

ভূমিকম্পে ২২৭০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধসে পড়েছে। এর পাশাপাশি একটি বোর্ডিং স্কুল, একটি হাসপাতাল ও তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সোমবার ভূমিকম্পের সময় ওই এলাকায় ভূমিধসে হওয়ায় অনেক এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ও বহু গাড়ি মাটি চাপা পড়ে। ভূমিধসের কারণে সিয়ানজুর জেলার সঙ্গে আশপাশের কয়েকটি প্রদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কয়েকটি এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। 

৮০টিরও বেশি পরাঘাত ও বিদ্যুৎ না থাকায় কিছু এলাকায় উদ্ধার অভিযান জটিল হয়ে পড়ে।

প্রায় ২৭ কোটি মানুষের দেশ ইন্দোনেশিয়া ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলার’ (প্যাসিফিক রিং অব ফায়ার) ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েক হাজার দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এ অঞ্চলটিতে ভূত্বকের কয়েকটি পৃথক টেকটোনিক প্লেট এসে মিলিত হওয়ায় এখানে ঘন ঘন ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাতের মতো ঘটনা ঘটে।

আগের খবর:

Also Read: ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ১৬২