৬১টি দলের একাধিক এবং ৩৪টি দলের একজন করে প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন।
Published : 03 Jul 2024, 09:40 PM
রাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের দেশ যুক্তরাজ্যের এবারের সাধারণ নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নেমেছে ৯৫টি রাজনৈতিক দল।
এর মধ্যে কয়েকটি দল সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে, বাকিগুলোর অন্তত একজন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অবশ্য, যুক্তরাজ্যে বর্তমানে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৩৯২টি, তাদের মধ্যে ৯৫টি দল প্রার্থী দিয়েছে; বাকিরা নির্বাচনে পছন্দের দল বা প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে অথবা নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে; চারটি রাজ্যে এখন চলছে ভোটের আমেজ। ঋষি সুনাক, কিয়ার স্টারমার, নাইজেল ফারাজসহ দলীয় প্রধানরা দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চষে বেড়িয়েছেন গত কিছুদিন; প্রচারে ঝড় তুলছেন আসনভিত্তিক প্রার্থীরা।
বিবিসি লিখেছে, এবার যে ৯৫টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তার মধ্যে মাত্র দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠিত দল যেমন রয়েছে, তেমনি আছে একাবিংশ শতাব্দীত এসে যুক্তরাজ্যের সমাজ ও রাষ্ট্রের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দলও।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচনে ছোট-বড় মোট ৯৫টি রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিয়েছে। দেশটির ইতিহাসে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমনসের ৬৫০টি আসনের বিপরীতে এবারই সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী ভোট করছেন।
ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম মিরর লিখেছে, এবার জাতীয় নির্বাচন এতটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে যে, এমন কোনো নির্বাচনী আসন নেই যেখানে অন্তত পাঁচজন প্রার্থী দাঁড়াননি। এমন একটি আসন রয়েছে, যেখানে সর্বাধিক ১৩ প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। এবার ৩১৭টি আসনে ৪৫৯ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট করছেন।
বিবিসির হিসাব অনুযায়ী, এবার প্রার্থী দেওয়া ৯৫টি দলের মধ্যে ৩৪টি একজন করে প্রার্থী দিয়েছে; বাকি দলগুলোর একাধিক প্রার্থী রয়েছে।
ধর্মভিত্তিক দলও বেশ আলোচনায় রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্রিশ্চিয়ান পার্টি ও ক্রিশ্চিয়ান পিপলস অ্যালায়েন্স, যারা খ্রিষ্ঠ ধর্মের মাহাত্ম্যের আলোকে যুক্তরাজ্যের শাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করে আসছে এবং এবারের ভোটেও রয়েছে।
গত ২২ মে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে এ নির্বাচনের ঘোষণায় রীতিমত চমক সৃষ্টি হয়। লেবার পার্টির ক্ষমতায় যাওয়ার ‘স্পষ্ট আভাস’ থাকার পরও কনজারভেটিভ নেতার এমন ঘোষণা বিস্ময়ের সৃষ্টি করে।
সুনাকের ঘোষণার ২০ দিন আগে গত ২ মে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। এর পর থেকেই আগাম নির্বাচন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সুনাকের ওপর চাপ দিয়ে আসছিল তারা।
ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও নর্থ আয়ারল্যান্ড নিয়ে গঠিত যুক্তরাজ্যের প্রতিটি রাজ্যে ইস্যুভিত্তিক আলাদা আলাদা দল রয়েছে। একই সঙ্গে পুরো দেশে সক্রিয় প্রায় দুই শতাব্দীর প্রাচীন দলও রয়েছে।
‘গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি’ খ্যাত কনজারভেটিভ পার্টি বা টোরি দলের প্রতিষ্ঠা ১৮৩৪ সালে। সেই থেকে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে দলটির প্রভাব কমেনি।
১৯০০ সালে প্রতিষ্ঠিত লেবার পার্টিকেও ঘুরে ফিরে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে দেখা যায়।
৪ জুলাইয়ের ভোটের লড়াইয়ে থাকা ৯৫ দলকে প্রার্থী সংখ্যার বিচারে দুই ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে বিবিসি।
অবশ্য স্বতন্ত্র অনেক প্রার্থীও ভোট করছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ জয়ও পাবেন বলে জরিপের বরাত দিয়ে জানাচ্ছে রয়টার্স।
একাধিক প্রার্থী দেওয়া দল ৬১টি
অ্যাবলিশ দ্য ওয়েলস অ্যাসেমব্লি পার্টি, আলবা, অ্যালায়েন্স ফল ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ফ্রিডম, অ্যালায়েন্স পার্টির মত দলগুলোর রয়েছে একের অধিক প্রার্থী।
অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার পর্টি, অ্যাওনটু, ব্রিটিশ ডেমেক্র্যাটিক পার্টি, ব্রিটিশ ইউনিয়নিস্ট পার্টি, ক্রিশ্চিয়ান পার্টি, ক্রিশ্চিয়ান পিপলস অ্যালায়েন্স, ক্লাইমেট পার্টি, কমিউনিস্ট লিগ, কমিউনিস্ট পার্টি ফর ব্রিটেন, কনফেলেসিটি, কনজারভেটিভস, ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি, ইংলিশ কনস্টিটিউশন পার্টি, ইংলিশ ডেমোক্র্যাটস, ফ্রিডম অ্যালায়েন্স, গ্রিনও বিভিন্ন আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
হ্যাম্পশায়ার ইনডিপেনডেন্টস ও ইনডিপেন্ডেন্স ফর স্কটল্যান্ড পার্টির মত স্বাধীনতাকামী দলও বিভিন্ন আসনে লড়ছে।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে মোট আসন ৬৫০টি, যার প্রতিটিতে প্রার্থী দিয়েছে লেবার ও কনজারভেটিভ পার্টি।
ইনডিপেনডেন্ট নেটওয়ার্ক, হেরিটেজ পার্টি, লেবার, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, লিবারেল পার্টি, লিবার্টিয়ান পার্টি, লিংকনশায়ার ইনডিপেন্ডেন্টস, মনস্টার র্যাভিং লুনি পার্টি, ওয়ান লেইসেস্টার, পার্টি অব উইমেন, পিপল বিফোর প্রোফিট, প্লেইড সিমরু, রিফর্ম ইউকে, রিজয়েন ইইউ, স্কটিশ ফ্যামিলি পার্টি, স্কটিশ লিবারেশন পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি, স্কটিশ সোশ্যালিস্ট পার্টি, শেয়ার্ড গ্রাউন্ড, সিন ফেন, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যান্ড লেবার পার্টির রয়েছে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী।
একের বেশি প্রার্থী দিয়ে ভোটের প্রচারে থাকা অন্য দলগুলো হল- সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, সোশ্যালিস্ট ইকুয়ালিটি, সোশ্যালিস্ট লেবার পার্টি, সোশ্যালিস্ট পার্টি অব গ্রেট ব্রিটেন, সভরেনটি, দ্য পিস পার্টি, দ্য ইয়র্কশায়ার পার্টি, ট্রেড ইউনিয়নিস্ট অ্যান্ড সোশ্যালিস্ট কোয়ালিশন, ট্র্যাডিশনাল ইউনিয়নিস্ট ভয়েস, ট্রান্সফর্ম পার্টি, ট্রু অ্যান্ড ফেয়ার পার্টি, ইউকে ইনডিপেন্ডেন্স পার্টি, উলস্টার ইউনিয়নিস্ট পার্টি, ভল্ট ইউনাইটেড কিংডম, উইমেন’স ইকুয়ালিটি পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন এবং ওয়ার্কার্স রেভল্যুশন পার্টি।
একক প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে ৩৪ দল
যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচনে একজন করে প্রার্থী দিয়েছে ৩৪টি দল। তবে তাদেরও রয়েছে আলাদা আলাদা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।
অ্যাশফিল্ড ইনডিপেন্ডেন্টস, ব্লু রেভোলিউশন, চেস্টারফিল্ড অ্যান্ড নর্থ ডার্বিশায়ার ইনডিপেন্ডেন্টস, কমন গুড, কমিউনিস্ট ফিউচার, কনসেনসাস, কাউন্ট বিনফেস পার্টি, ক্রস-কমিউনিটি লেবার অলটারনেটিভ, ডেমোক্র্যাসি ফর চোরলির মত দলগুলো আঞ্চলিক বিষয়ে সরব।
একক প্রার্থী দেওয়া দলগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই স্থানীয় পর্যায়ে ভোটের অঙ্ক বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- ফেয়ারার ভোটিং পার্টি, ইনডিপেন্ডেন্ট অ্যালায়েন্স (কেন্ট), ইনডিপেন্ডেন্ট অক্সফোর্ড অ্যালায়েন্স, ইনডিপেন্ডেন্টস ফর ডিরেক্ট ডেমোক্র্যাসি, কিংসটন ইনডিপেন্ডেন্ট রেসিডেন্টস গ্রুপ, লিভারপুর কমিউনিটি ইনডিপেন্ডেন্টস, ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকশন পার্টি, নিউ ওপেন নন-পলিটিক্যাল অর্গানাইজড লিডারশিপ, নিউহ্যাম ইনডিপেন্ডেন্টস পার্টি।
এ ছাড়া একজন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামিয়ে নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে নর্থ ইস্ট পার্টি, পোর্টসমাউথ ইনডিপেন্ডেন্ট পার্টি, প্রোপেল, সাইকাডেলিক মুভমেন্ট, পুটিং ক্রু ফার্স্ট, রিবুটিং ডেমোক্র্যাসি, সেইভ আজ নাও, সোশ্যাল জাস্টিস পার্টি, সাউথ ডেভন অ্যালায়েন্স, স্টকপোর্ট ফাইটস অস্টারিটি নো টু কাটস, সোয়েল ইনডিপেন্ডেন্টস, টকিং দ্য ইনিশিয়েটিভ পার্টি, দ্য কমন পিপল, দ্য মারটি টিডব্লিউনাইন, ইউকে ভয়েস, ইয়োরুবা পার্টি ইন দ্য ইউকের মত দলগুলো।
সব দলের রয়েছে নির্বাচনী ইশতেহার
নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৯৫টি দলেরই রয়েছে ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহার, যার তুলনামূলক পর্যালোচনায় রাজ্যভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছে বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান।
সব দলের ইশতেহার পর্যালোচনা করে বিবিসি সর্বোপরি ১১টি ইস্যু বা ফ্যাক্টর চিহ্নিত করেছে, যেগুলোতে নাগরিকদের জন্য কিছু না কিছু প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
অর্থনীতি, জীবনযাপনের ব্যয়, জাতীয় স্বাস্থসেবা ও পরিচর্যা, অভিবাসন, গৃহায়ণ, পরিবেশ, শিক্ষা, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা, অপরাধ ও বিচার, পরিবহন ও গণতন্ত্র- এই ১১টি বিষয়ে মোটা দাগে প্রতিটি দল নানা ওয়াদা করে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে কড়া নাড়ছে।
লেবার মধ্য ডানপন্থি, গণতান্ত্রিক ও কিছুটা বামঘেঁষা দল হলেও পুঁজিবাদের পৃষ্ঠপোষক। এবারের নির্বাচনে তাদের জয়ের সম্ভাবনার কথা আসছে আগাম জরিপগুলো থেকে।
অভিবাসন ব্যবস্থাপনা, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ানো, শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতির প্রয়োগের মতো বিষয়গুলো তারা ভোটের প্রতিশ্রুতিতে রেখেছে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে জ্বালানি সংকটের সমাধান করার কথাও বলছেন দলটির নেতা কিয়ার স্টারমার।
লেবার পার্টি থেকে রুশনারা আলীসহ আটজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কনজারভেটিভরা পুঁজিবাদী, গণতান্ত্রিক ও রক্ষণশীল, তারা ডানপন্থায় বিশ্বাসী এবং অভিবাসনের বিরোধিতায় সরব।
একই সঙ্গে প্রচলিত রীতিনীতি ও প্রথা বজায় রাখার পক্ষেও তাদের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। যুক্তরাজ্যকে বিরাজমান সংকট থেকে উত্তরণে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন টোরি নেতা ঋষি সুনাক।
মে মাসে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সব রাজ্যেই ভালো ফল করে লেবার পার্টি। জাতীয় নির্বাচনেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে বিশ্বাস লেবার নেতা কিয়ার স্টারমারের। সে অনুযায়ী তারা ইশতেহারও দিয়েছেন।
দলগুলোর ইশতেহার পর্যালোচনা করেছে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন-বিবিসি, যারা যুক্তরাজ্যের জনগণের করের টাকায় পরিচালিত হয়।
বিবিসির ‘ম্যানিফেস্টো গাইডে’ দেখা যাচ্ছে, নতুনের আহ্বান নিয়ে নির্বাচনে আসা দলগুলোর মধ্যে সাড়া ফেলেছে কট্টর জাতীয়বাদী নেতা নাইজেল ফারাজের দল ‘ইউকে রিফর্ম’, মিট এড ডেভির দল ‘লিব ডেম’, এড গেমেলের নেতৃত্বাধীন ‘ক্লাইমেট পার্টি’ এবং কার্লা ডেরিয়ান ও আড্রিয়ান রামসের যৌথ নেতৃত্বের দল ‘গ্রিন’ পার্টি। জলবায়ু সহনশীল ও সবুজ যুক্তরাজ্য গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে ক্লাইমেট ও গ্রিন পার্টি।
গার্ডিয়ান লিখেছে, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও (সংক্ষেপ লিব ডেম) এবারের নির্বাচনে আগেরবারের চেয়ে ভালো করবে বলে আভাস পাওয়া গেছে ইউগভ ও ইপসোসের জরিপ থেকে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার আন্দোলনের দাবিতে জন্ম নেয় ‘ব্রেক্সিট পার্টি’। ব্রেক্সিট সম্পন্ন হওয়ার পর দলটির নাম বদলে রাখা হয় রিফর্ম ইউকে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন জাতীয়তাবাদী নেতা নাইজেল ফারাজ। এবারের নির্বাচনে তাদের প্রতিশ্রুতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দেশ পরিচালনার ‘আইন ও নীতি সংস্কার করে’ যুক্তরাজ্যকে আবার বিশ্বের নেতৃত্বের আসনে নিয়ে যাওয়া।
লেবার ও টোরি পার্টি স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তারা সরকার গঠন করলে আবার বিশ্বের অন্যতম ‘সুপার পাওয়ার’ হবে যুক্তরাজ্য, যার গর্বিত বাসিন্দা হবে ইংলিশ, স্কটিশ, ওয়েলশ ও আইরিশরা।
বামপন্থিরাও শ্রজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাম্যের রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ভোটারদের। ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন এর ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, তারা ভোটে জিতলে যুক্তরাজ্যের শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে রাষ্ট্রের সব সম্পদ ও ক্ষমতার পুনঃবণ্টন করবেন। এ দলের নেতা জর্জ গ্যালোওয়ে বলেছেন, ভোটে জিতলে তার দল শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কর্মজীবীদের অংশগ্রহণ এবং আজীবন পেনশন প্রাপ্তির আইন করবে।
ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছয় প্রার্থী নির্বাচনে লড়াই করছেন।
নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী সমাজের স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটে নেমেছে উইমেন’স ইকুয়ালিটি পার্টি। তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে পুরুষের মত নারীর সমান সুযোগ-সুবিধা, সমান বেতন-ভাতা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে সমান অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য কাজ করছেন দলটির নেতারা। সর্বোপরি রাজনৈতিক নেতৃত্বে পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছে দলটির নেতা মান্ডু রেইড।
ভোটে মুখোমুখি ‘স্বাধীনতাকামী’, ‘পুনঃএকত্রীকরণ’ ও ‘অখণ্ডতা’ রক্ষার রাজনীতি
যুক্তরাজ্য রাষ্ট্র হিসেবে যেসব নীতির ওপর টিকে আছে, সেগুলোও চ্যালেঞ্জ করে গড়ে ওঠেছে অনেক রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক অ্যান্ড লেবার পার্টি-এসডিএলপি এর কথা বলা যায়। দলটির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, দুই আয়ারল্যান্ডকে আবার একত্র করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে রাজনীতি করছে তারা।
এসডিএলপির উল্টো যাত্রা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এসডিপি এর। দলটি যুক্তরাজ্যের অখণ্ডতা ধরে রেখে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে, যেখানে নাগরিক সুবিধা সবার জন্য সমান হবে। প্রতিটি রাজ্যের ‘সুষম’ উন্নয়নে বিশ্বাসী তারা।
স্কটল্যান্ডের রাজনীতি ও সমাজনীতিতে সবচেয়ে প্রবল ইস্যু রাজ্যের ‘স্বাধীনতা’। যুক্তরাজ্য থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন দেশ হওয়ার জন্য কয়েকটি গণভোট হলেও এখনও স্কটল্যান্ডের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ চায় একত্রে থাকতে।
স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি-এসএনপি ওই রাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল, যারা দীর্ঘদিন ধরে স্কটল্যান্ডের রাজ্য সরকার চালাচ্ছে। জন সুইনির নেতৃত্বাধীন দলটি স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে অনড়।
ফেডারেল রাষ্ট্র কাঠামোর ভারতে রাজ্যভিত্তিক আইনসভাকে যেমন ‘বিধানসভা’ বলা হয়, যুক্তরাজ্যের রাজ্যগুলোতে এর নাম ‘ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লি’ বা ‘জাতীয় পরিষদ’। জাতীয় শব্দ থাকলেও এটি ওই নির্দিষ্ট রাজ্যের প্রতিনিধ্বিত্ব করে, পুরো দেশের বা যুক্তরাজ্যের নয়।
যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দান আয়ারল্যান্ডে রয়েছে নিজস্ব জাতীয় পরিষদ। ইংল্যান্ডে এ ধরনের পরিষদ নেই। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টেই ইংল্যান্ডের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো এ রাজ্য পরিচালনা করে।
‘অ্যাবোলিশ ওয়েলস অ্যাসেমব্লি পার্টি’ নামের দলটি ওয়েলস থেকে ‘জাতীয় পরিষদ’ তুলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই রাজনীতি করছে। তাদের ওয়েবসাইটে দলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্কটল্যান্ড চালানোর জন্য পার্লামেন্ট রয়েছে, স্থানীয় সরকার রয়েছে। তাহলে কাড়িকাড়ি অর্থ খরচ করে কেন একটি ‘জাতীয় পরিষদ’ পুষতে হবে। অ্যাসেমব্লির বিলুপ্তি চায় দলটি। এ যুক্তি দেখিয়েই তারা ভোট চাইছে।
স্কটল্যান্ডভিত্তিক আরও অনেক দল রয়েছে, যারা হয় রাজ্যের স্বাধীনতা চায়, না হয় যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য রাজনীতি করে যাচ্ছে। এসব দল রাজ্যের নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা ও গৃহায়ণে বেশি বরাদ্দ দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করে থাকে। এমন একটি দল আলবা, যার প্রধান রাজনৈতিক লক্ষ্য স্কটল্যান্ডকে স্বাধীন করা।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৯৫টি দলের মধ্যে বেশ কয়েকটির নেতৃত্ব রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নেতারা। টোরি পার্টির নেতা ঋষি সুনাক ছাড়া ‘ইউকে ভয়েস’ নামে দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন আরেক ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কেতন পিপালিয়া।
যুক্তরাজ্যীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সার্বভৌমত্বের প্রতীক রাজা বা রানী। তবে দেশটির তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজতন্ত্রবিরোধী মনোভাব যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন চাঙ্গা।
রয়টার্সের খবরে বলা হচ্ছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকের প্রচারে রয়েছে রাজতন্ত্র বাতিলের পক্ষে জোরালো প্রতিশ্রুতি।