১৯ দশমিক ২২ ক্যারেটের এই হীরা সরকারি নিলামে প্রায় ৮০ লাখ রুপি মূল্যে বিক্রি হবে আশা করা হচ্ছে।
Published : 25 Jul 2024, 08:07 PM
ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে পান্না নগরীর একটি খনিতে পাওয়া বড় আকারের এক মূল্যবান হীরা রাতারাতি বদলে দিয়েছে ঋণগ্রস্ত শ্রমিক রাজু গৌড়ের ভাগ্য।
১৯ দশমিক ২২ ক্যারেটের এই হীরা সরকারি নিলামে প্রায় ৮০ লাখ রুপি (৯৫ হাজার ৫৭০ ডলার; ৭৪ হাজার পাউন্ড) মূল্যে বিক্রি হবে আশা করা হচ্ছে। রাজু গৌড় হীরাটি পেয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন।
রাজ্য সরকারের হীরা বিষয়ক কার্যালয়ের কর্মকর্তা অনুপম সিং বলেছেন, হীরাটি সরকারের পরবর্তী নিলামে তোলা হবে। নিলামে হীরা বিক্রির অর্থ থেকে সরকারের পাওনা ও কর কেটে রেখে বাকি অর্থ রাজুকে দেওয়া হবে।
বিবিসি জানায়, রাজু গৌড় হীরার সন্ধান পাওয়ার আশায় ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পান্না নগরীতে ইজারায় খনি খনন করে চলেছেন। তবে এবারই প্রথম ভাগ্য সুপ্রসন্ন হল তার, পেলেন হীরার দেখা।
পান্না নগরী হীরার মজুদের জন্য বিখ্যাত। সেখানে প্রচুর ছোট ছোট হীরার খনি রয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় খনিজ উন্নয়ন কর্পোরেশন (এনএমডিসি) পান্নায় একটি যান্ত্রিক হীরা খনির প্রকল্প পরিচালনা করে। এই করপোরেশন হীরার সন্ধানে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তি, পরিবার এবং গোষ্ঠীকে খনি ইজারাও দেয়।
সেইসব খনিতে কোনও হীরার সন্ধান মিললে তা সরকারের হীরা বিষয়ক কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। এরপর সেখানে হীরার অর্থমূল্য নির্ধারণ করা হয়।
সরকারি কর্মকর্তা অনুপম সিং বলেন, ২০১৮ সালে বুন্দেলখণ্ডের এক শ্রমিক পান্নার একটি খনি থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ রূপি মূল্যের একটি হীরা খুঁজে পেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, অনেকেই ছোটখাট হীরকখন্ড খুঁজে পেয়েছেন, তবে রাজু গৌড়র সন্ধান পাওয়া হীরাটি এর আকৃতির কারণে উল্লেখযোগ্য।
শ্রমিক রাজু বিবিসি-কে বলেন, তার বাবা প্রায় দুই মাস আগে পান্নার কাছে কৃষ্ণ কল্যাণপুর পট্টি গ্রামের খনিটি ইজারা নিয়েছিলেন। তার পরিবার বেশিরভাগ সময় বর্ষা মৌসুমে খনিগুলি ইজারা নেয় যখন কৃষি ও রাজমিস্ত্রির কাজের চাপ কম থাকে।
গৌড় বলেন, "আমরা খুবই গরিব, আমাদের আয়ের অন্য কোনও উৎস নেই। তাই আমরা কিছু অর্থ উপার্জনের আশায় এই কাজ করে থাকি।”
রাজু অনেকের মুখেই পাথর বা হীরা পাওয়ার গল্প শুনেছিলেন। তাই তিনি আশাবাদী ছিলেন, তিনিও একদিন হীরার সন্ধান পাবেন।
বুধবার সকালে তিনি যথারীতি খননের কাজে খনিতে যান। রাজু বলেন, "এটি ক্লান্তিকর কাজ। আমরা গর্ত খুঁড়ি, মাটি ও পাথরের টুকরো টেনে বের করি, চালুনিতে ধুয়ে ফেলি, তারপর সাবধানে হাজার হাজার শুকনো, ছোট ছোট পাথর চিরে হীরার সন্ধান করি।
তবে তিনি তার এই কঠোর পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন। হীরার সন্ধান পেয়ে তিনি এখন ভাগ্য ফেরার অপেক্ষায়।
হীরা খুঁজে পাওয়ার মূহুর্তের কথা বর্ণনা করে রাজু বলেন, "আমি হাজার পাথরের মধ্য দিয়ে অনুসন্ধান করছিলাম। কাচের টুকরোর মতো কিছু দেখতে পেলাম। আমি সেটা চোখের কাছে তুলে ধরলাম, একটা ক্ষীণ ঝলক দেখতে পেলাম। তখনই বুঝতে পারলাম যে আমি একটি হীরা খুঁজে পেয়েছি।”
হীরা বিক্রির অর্থ পাওয়ার আশায় রাজু খুবই উচ্ছ্বাসিত। এ অর্থ দিয়ে তিনি পরিবারের জন্য একটি ভাল বাড়ি তৈরি করতে চান এবং তার সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে চান। তবে সবার আগে তিনি মেটাতে চান মাথার ওপরে ঝুলে থাকা পাঁচ লাখ রূপির ঋণ।