ভারতে ফেব্রুয়ারিতে শত বছরের রেকর্ড ভাঙা গরম, তীব্র দাবদাহের পূর্বাভাস

তীব্র গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিং দেখা দেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

রয়টার্স
Published : 1 March 2023, 02:13 PM
Updated : 1 March 2023, 02:13 PM

ভারতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে গরম শতাধিক বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এই মাসটি ছিল ১৯০১ সালের পর সবচেয়ে বেশি উষ্ণ। আর সামনের দিনগুলোতে তীব্র দাবদাহের পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

মার্চ মাস থেকে শুরু করে আগামী মে মাস পর্যন্ত ভারতে এই দাবদাহ দেখা দেওয়ার পূর্বাভাস মঙ্গলবার দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর।বিশেষ করে গম উৎপাদনকারী মধ্য ও উত্তরের রাজ্যগুলো এই দাবদাহে পুড়তে পারে।

এ পূর্বাভাস সত্য হলে টানা দ্বিতীয় বছরের মত তীব্র দাবদাহের কবলে পড়বে ভারত। যাতে ব্যাহত হতে পারে গম উৎপাদন।

গত বছর প্রচণ্ড গরম এবং বৃষ্টির অভাবে ভারতে গম, রাই, সরিষা ও ছোলার উৎপাদন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম হয়েছিল। যা ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

তীব্র গরমে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে যাবে এবং চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ার দেখা দেবে লোডশেডিং।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘মার্চ থেকে মে মৌসুমে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনার কারণে ভারতের মধ্যাঞ্চলের অনেক এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী উত্তর-পশ্চিমের রাজ্যগুলোতে তীব্র দাবদাহ দেখা দিতে পারে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘‘শীতকালে বপন করা ফসলের পরিপক্কতার জন্য মার্চ মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসে উপদ্বীপের ইন্ডিয়া অঞ্চল ব্যতীত পুরো ভারতের বেশিরভাগ অংশে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।”

ফেব্রুয়ারিতে ভারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম পড়ায় এরই মধ্যে গমক্ষেতে তার নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে বলে জানান একটি বৈশ্বিক ট্রেড হাউজের মুম্বাই ভিত্তিক এক ডিলার।

তিনি বলেন, ‘‘মার্চে গরম বাড়লে নিশ্চিতভাবেই মাঠে ফসলের ক্ষতি হবে।”

ভারতে বছরে একবারই গমের চাষ হয়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চারা রোপন করা হয় এবং মার্চ মাস থেকে ফসল কাটা শুরু হয়।

তীব্র গরমে গত বছর গমের উৎপাদন কম হওয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ গম রপ্তানিকারক দেশ ভারত দেশীয় চাহিদা মেটাতে গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করে।

রয়টার্স জানায়, ভারতে এবছর ফেব্রুয়ারিতে গড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯ দশমিক ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা ১৯০১ সালের পর সর্বোচ্চ। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর ওই বছর থেকেই দেশটির আবহাওয়া পরিস্থিতির রেকর্ড রাখা শুরু করে।

শুধু তাপমাত্রা বেড়েছে তাই নয়। বরং ফেব্রুয়ারিতে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত ৬৮ শতাংশ কম হয়েছে।

গত বছরই ভারতের কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, দেশটিকে ভবিষ্যতে আরও বেশি দাবদাহের কবলে পড়তে হবে। গড় তাপমাত্রাও বাড়বে। এমনকী বর্ষা মৌসুম পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করবে।

তাপমাত্রার বিষয়ে সতর্ক করে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় থেকে সব রাজ্য ও ইউনিয়নে মঙ্গলবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। যে চিঠি দেখেছে রয়টার্স।

সেই চিঠিতে বলা হয়, দেশের কোথাও কোথাও এরই মধ্যে অস্বাভাবিক বেশি তাপমাত্রা লক্ষ্য করা গেছে।

তাই কেন্দ্রীয় সরকার থেকে দেশেজুড়ে ছড়িয়ে থাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরগুলোকে ‘তাপদাহ জনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের’ নির্দেশ জারি করা হচ্ছে।