থাইল্যান্ডে ভোটগ্রহণ শুরু, পাল্লা ভারী থাকসিনের মেয়ের

সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত সেনেটের প্রভাবকে পাশ কাটিয়ে কোনো দল বা জোটকে সরকার গড়তে নিম্নকক্ষের এই নির্বাচনে ৫০০ আসনের ৩৭৬টিতে জিততে হবে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 10:24 AM
Updated : 14 May 2023, 10:24 AM

চার বছর পর সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে থাইল্যান্ডের জনগণ।

রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে দেশটির ৯৫ হাজার কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এবার প্রায় ৫ কোটি ভোটার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৫০০ সদস্য বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন; ভোট নিয়ে উচ্ছ্বাস থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ভোট পড়ার প্রত্যাশা করছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।

ভোটে থাইল্যান্ডের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতোংতার্ন সিনাওয়াত্রা নেতৃত্বাধীন পুয়ে থাই পার্টি সবচেয়ে বেশি আসন পেতে যাচ্ছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

তবে কেবল পেতোংতার্নই নয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচাকে সামরিক বাহিনীবিরোধী আরেকটি দল, পিটা লিমজারোয়েনরাট নেতৃত্বাধীন মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে বলে অনেকের ধারণা।

সাম্প্রতিক ইতিহাসে ডজনখানেক সামরিক অভ্যুত্থান দেখা থাইল্যান্ডের জন্য এবারের নির্বাচনকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২০১৪ সালে হওয়া সর্বশেষ অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন এখনকার প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথই, এবার তিনি আরেক মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে লড়ছেন।

তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ৩৬ বছর বয়সী পেতোংতার্ন থাইল্যান্ডজুড়ে বাবা থাকসিনের বিশাল জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে অতি অল্প সময়ে গ্রামাঞ্চলের স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন।

এই শ্রেণির কাছে থাকসিনেরও বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল, রাজতন্ত্রপন্থি অভিজাতরাই তাকে দেখতে পারতো না। বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনার পর ২০০৬ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যত হন তিনি।

টেলিকমিউনিকেশন বিলিয়নেয়ার থাকসিন তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও ২০০৮ সাল থেকে লন্ডন আর দুবাইয়ে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন।

“আমার মনে হয়, ৮ বছর পর জনগণ এখন অভ্যুত্থানের চেয়েও আরও ভালো রাজনীতি, আরও ভালো সমাধান চাইছে,” বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি বলেছিলেন পেতোংতার্ন।

জনমত জরিপে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের এক সময়কার নির্বাহী, ৪২ বছর বয়সী পিটা লিমজারোয়েনরাটের মুভ ফরোয়ার্ডের জনপ্রিয়তাও তরতর করে বাড়তে দেখা গেছে।

দলটির তরুণ, প্রগতিশীল, উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রার্থী প্রচারণায় সহজ সরল অথচ শক্তিশালী এক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন, সেটি হল- থাইল্যান্ডকে বদলাতে হবে।

“এই পরিবর্তন মানে আরেকটি অভ্যুত্থান নয়। কেননা, সেই পরিবর্তন হবে পশ্চাদমুখী। এই পরিবর্তন হচ্ছে সামরিক বাহিনী, রাজতন্ত্রের সংস্কার, একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ, ভালো অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য পরিবর্তন,” বলেছেন চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক ইনস্টিটিউটের থিতিনান পংসুধিরাক।

জনমত জরিপগুলোতে প্রায়ুথকে বেশ পেছনেই দেখা যাচ্ছে। ২০১৪ সালে কয়েক মাসের অস্থিরতার পর এক সেনা অভ্যুত্থানে থাকসিনের বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রার সরকারকে ফেলেই ক্ষমতা নিয়েছিলেন তিনি।

এরপর ২০১৯ সালেও থাইল্যান্ডে নির্বাচন হয়েছিল, যদিও তাতে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি।

কয়েক সপ্তাহ পরে সামরিক বাহিনীপন্থি একটি দল দেশটিতে সরকার গঠন করে এবং প্রায়ুথকে তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী বানায়। বিরোধীরা এই প্রক্রিয়াকে ‘অন্যায্য’ অ্যাখ্যা দিয়েছিল।

সেবারের ভোটে তরুণদের সমর্থন নিয়ে ফিউচার পার্টি বেশ ভালো ফল করেছিল, কিন্তু ২০২০ সালে আদালতের এক বিতর্কিত রায়ে দলটি নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

এ ঘটনা থাইল্যান্ডজুড়ে বিশাল বিক্ষোভের জন্ম দেয়; ৬ মাস ধরে চলা ওই বিক্ষোভে সামরিক বাহিনী ও রাজতন্ত্রের সংস্কার চাওয়া হয়।

বিবিসি লিখেছে, এবারের নির্বাচনে ৭০টির মতো দল অংশগ্রহণ করলেও এদের কেউই নিম্নকক্ষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলে মনে হয় না।

আর যদি পায়ও, কিংবা জোটবদ্ধভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণও করতে পারে তবু দেশটিতে ২০১৭ সালে সামরিক বাহিনীর শাসনামলে হওয়া সংবিধানে নির্বাচন বহির্ভূত অনেক কর্তৃপক্ষ চাইলে সেই দল বা জোটের ক্ষমতায় আরোহন আটকেও দিতে পারে।

ওই সংবিধানে আড়াইশ সদস্যের একটি সেনেট বানানো হয়েছে, যার সদস্যরা নতুন প্রধানমন্ত্রী বা সরকার বেছে নিতে ভোট দিতে পারবে। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সেনেটের এখনকার সদস্যরা সামরিক বাহিনীপন্থি, তাদেরকে সবসময়ই বর্তমানের সামরিক বাহিনীঘেঁষা সরকারের পক্ষে এবং বিরোধীদের বিপক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, কোনো দল বা জোট যদি সেনেটের প্রভাবকে পাশ কাটিয়ে সরকার গঠন করতে চায় তাহলে তাদেরকে ৫০০ আসনের মধ্যে ৩৭৬টিতে জিততে হবে, যাকে একপ্রকার ‘অসম্ভব’ বলছে বিবিসি।