"তাদের চুপ করাতে ট্রলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন।"
Published : 02 Apr 2024, 09:40 PM
ফ্রান্সে বসে একজন টিকটকার যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারীদের নিয়ে ট্রল করে তাদের জীবন বিপন্ন করে তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নারীরা এতটাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠেছেন যে কেউ কেউ এমনকি ‘আত্মহত্যা’ করার কথাও ভেবেছেন।
এসব অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান করেছে বিবিসি। নারীদের ট্রল করা ওই টিকটকার নিজেও বাংলাদেশি।
সুলতানা (ছদ্ম নাম) বসবাস করেন যুক্তরাজ্যের ইয়র্কশায়ারে। তিনি সংক্ষিপ্ত ভিডিও তৈরির প্ল্যাটফর্ম টিকটক ব্যবহার করে নারী বিদ্বেষ এবং ‘টক্সিক রিলেশনশিপের’ মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে নিজের মতামত এবং সচেতনতা মূলক ভিডিও তৈরি করতেন।
২০২১ সালে তিনি ফ্রান্স ভিত্তিক টিকটকার হাসান সাঈদের অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হন। হাসান সাঈদ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপকণ্ঠে বসবাস করেন এবং টিকটকে তার কয়েক হাজার অনুসারী আছে।
হাসান সাঈদ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে লোকজনের ছবি এবং তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেসব ছবি ও তথ্য ‘গ্রিন স্ক্রিনে’ রেখে ট্রল ভিডিও বানায়।
প্রথমবার হাসান সাঈদের ট্রলের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞা সম্পর্কে সুলতানা বিবিসিকে বলেন, “আমার মনে হয়েছিল আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি। আমি খেতে পারতাম না, ঘুমাতে পারতাম না।
“আমার মনে হতো আমি আর এখানে থাকতে চাই না।”
সুলতানার এক বন্ধু টিকটকে হাসান সাঈদের ট্রলের শিকার হলে সুলতানা বন্ধুর পক্ষ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। যে কারণে তিনি নিজেও সাঈদের রোষানলে পড়েন।
হাসান সাঈদ যে তাকে নিয়ে ট্রল ভিডিও বানিয়েছে তা সুলতানা প্রথম জানতে পারেন টিকটকে নিজের অনুসারীদের মাধ্যমে। সে সময় তিনি কর্মক্ষেত্রে ছিলেন। টিকটকে তার অনুসারীরা তাকে ম্যাসেজ পাঠিয়ে ট্রল ভিডিও সম্পর্কে জানায়।
“লোকজন ওই পোস্টে নিয়ে মন্তব্য করছিল এবং আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছিল।”
সুলতানা জানান, প্রায় দুই বছর ধরে বিক্ষিপ্তভাবে তাকে নিয়ে ট্রল করা হয়েছে। বলেন, এটা এমন কিছু যেখান থেকে ‘আপনি কখনো বের হতে পারবেন না’।
“আমাকে সব সময় আমার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে লড়াই করতে হয়েছে এবং এটা কাটিয়ে উঠতে আমাকে অনেক থেরাপি নিতে হয়েছে। যে কারণ আমার মধ্যে পিটিএসডি (পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার) দেখা দিয়েছে।
“আমার সব সময় মনে হয় ভালো কিছুর জন্য আমি যে কঠোর পরিশ্রম করেছি তার সবই নালায় পতিত হয়েছে।”
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে বিশেষ করে নারীদের জীবনে টিকটক এর প্রভাব ব্যাপক। তারা সাধারণত রক্ষণশীল, সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নারীদের নিজেদের কথা বলার সুযোগ করে দেয়। তবে একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের হেনেস্তাও করা হয়।
অনলাইনে ট্রলের শিকার নারীরা মনে করেন, সমাজের অনেক পুরুষ নারীদের কথা বলা , নিজেদের মতামত প্রদান করা পছন্দ করেন না। তাই তাদের চুপ করাতে ট্রলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন।
সুলতানাসহ আরও অনেক নারী হাসান সাঈদের ট্রলের শিকার হয়েছেন। তাদের অনেকে বিবিসিকে বলেছেন, ভয়ে তারা এর প্রতিবাদ করতে পারেনি।
সাঈদ টিকটকে লাইভ ভিডিওতে, কখনো কখনো নারীদের চেহারা বা পোশাক নিয়ে বিদ্রুপ করে ভিডিও তৈরি করে, এমনকি কখনো কখনো ধর্ষণ বা হত্যার হুমকি দিয়ে ভিডিও তৈরি করে।
বিবিসি থেকে বেশ কয়েকবার ইমেইলে এবং সরাসরি ফোন করে সাঈদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সাড়া মেলেনি।
মাসুমা ওয়েলসে তার পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি তিনি টিকটিকে রান্নার ভিডিও বানান এবং অনলাইনে একটি দোকান চালান।
একদিন এমন একটি লাইভ চলার সময় সাঈদ সেখানে উপস্থিত হন এবং তাকে তার অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানাতে বলেন। মাসুমা রাজি না হলে সাঈদ তাকে ‘ফাঁসিতে ঝোলানোর’ হুমকি দেন।
মাসুমা একটি ভিডিও শেয়ার করে অন্যদের সাঈদের বিষয়ে জানান এবং তার একাউন্টের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার আহ্বান জানান।
তাতে সাঈদ আরো রেগে যান এবং তাকে নিয়ে আজেবাজে ভিডিও বানানো শুরু করেন।
“সে (সাঈদ) আমাকে নিয়ে ভিডিও বানিয়ে সেখানে বলে আমি একজন যৌনকর্মী।”
মাসুমার অনুসারীরা রিপোর্ট করলে টিকটিক থেকে তার ওই ভিডিও সরিয়ে ফেলা হয়। তবে ওই ঘটনা তার জীবনের ক্ষতি করে গেছে বলে মনে করেন মাসুমা।
বলেন, “প্রতিক্রিয়াগুলি গুরুতর ছিল, আমি প্রচণ্ড উদ্বেগে ভুগতাম। যে কারণে আমাকে আমার সব ছবি, ব্যবসার ফোন নম্বর সরাতে এবং আমার লাইভ সেশনগুলি কমাতে হয়েছিল।
“আমি অনেক উড়ো ফোন পেতাম এবং আমার ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক অস্বস্তিকর জিজ্ঞাসার মুখে আমাকে পড়তে হয়েছে।
“আমি যথেষ্ট প্রমাণ হাতে নিয়ে পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশের অক্ষমতা আমাকে অসহায় করে তুলেছিল। ”
শুধু নারীরাই নয় বরং পুরুষরাও সাঈদের ট্রলিংয়ের শিকার হয়েছেন। এমনই একজন কামরুল ইসলাম। গত বছর জানুয়ারিতে সাঈদের সঙ্গে যার প্রথম বিবাদ হয়। কামরুল সাঈদের চ্যানেলে গিয়ে মন্তব্য করেন, তিনি সেখানে যা দেখছেন তাতে তিনি আতঙ্কিত বোধ করছেন।
কামরুল বিবিসিকে বলেন, “প্রথমে আমি ভেবেছিলাম ওই ভিডিওগুলো ভুয়া। কিন্তু আমার বন্ধুরা আমাকে বলে সাঈদ গত বেশ কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্যের লোকজনকে তার শিকার বানাচ্ছে।”
কামরুল তার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের স্টাফোর্ডশায়ারে বসবাস করেন। টিকটকে সাঈদের বড় অনুসারী দল রয়েছে এবং ‘লোকজন মনে করে সে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে’।
“এখানে বাংলাদেশি কমিউনিটি খুবই রক্ষণশীল এবং এ ধরণের ভিডিও পরিবারগুলোর কাছে খুবই লজ্জার, সেই সঙ্গে আতঙ্কেরও। আমি জানতাম, আমাকে এসব বন্ধ করতে কিছু করার চেষ্টা করতেই হবে।”
‘আমি সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতাম’
কামরুল অনলাইনে সাঈদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব বন্ধ করতে বলেন। আর তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাঈদ তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ট্রল ভিডিও বানাতে শুরু করে।
“সে আমাদের নিয়ে ভিডিও বানাতে শুরু করে। সে আমার ছেলের (যখন তার বয়স এক বছর ছিল), মায়ের এবং স্ত্রীর কিছু ছবি আমার ইন্সটাগ্রাম একাউন্ট থেকে পেয়ে যায় এবং সরাসরি তাদের ধর্ষণ করার হুমকি দেয়।”
কামরুলের স্ত্রী রুকথানা তখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা (দ্বিতীয় সন্তান)। তিনি স্ত্রীকে সব কথা খুলে বলেন এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেন।
রুকথানা বলেন, “আমার জন্য এসব খুব চাপের ছিল। আমার সব সময় কান্না পেত। আমি আতঙ্কিত থাকতাম কারণ সাঈদের অনেক অনুসারী যুক্তরাজ্যে বসবাস করে।
“আমি হাঁটতে ভালোবাসি এবং প্রায়ই আমার ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসি, বেড়াতে যাই। কিন্তু যখন থেকে তার অনুসারীরা বলেছে তারা আমার পরিবারের উপর আক্রমণ করবে। তারপর থেকে আমি বাইরে যেতে খুবই ভয় পাই।
“নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে আমি এখন কাজ করতে পারি না। এখনও আমার রাত নির্ঘুম কাটে।”
স্টাফোর্ডশায়ার পুলিশের কাছে অভিযোগের পর কামরুল টিকটক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের ট্রাল করে করা ভিডিওগুলো সরিয়ে ফেলার দাবি জানান।
তবে টিকটক কর্তৃপক্ষ তাকে যে উত্তর দেয় তাতে তিনি হতবাক হয়ে যান। কারণ টিকটক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওই ভিডিওগুলো তাদের দিকনির্দেশনা ‘লঙ্ঘন করেনি’।
হতাশ কামরুল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাহায্য চেয়ে প্যারিসে ব্রিটিশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা তাকে ইংরেজি বলতে পারেন এমন একজন ফরাসী আইনজীবীর সঙ্গে যোগযোগ করিয়ে দেন।
ওই আইনজীবী প্যারিস প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে সাঈদের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ দায়ের করেন। সে অভিযোগগুলো ফ্রান্সের আইনে গুরুতর অপরাধ বলে গণ্য হয়। সেগুলো হলো: ক্রমাগত নৃশংসতার হুমকি দেওয়া, প্রাপ্ত বয়স্ক এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ককে ধর্ষণের হুমকি ও শিশু পর্নগ্রাফি এবং সাইবার বুলিং।
কামরুল বিবিসিকে বলেন, ওই মামলা কতদূর এগিয়েছে তা তিনি ঠিক মত জানেন না। তার আইনজীবী তাকে বলেছেন, এ ধরণের মামলাগুলোতে রায় পেতে অনেক সময় লাগে।
“এছাড়া ফ্রান্সের বিচার ব্যবস্থায় কর্মী সংকট রয়েছে আর বাজেটও সীমিত।
“ফ্রান্সের বিচার ব্যবস্থায় সংখ্যালঘুদের অবশ্যই সুরক্ষা প্রদাণের কথা বলা আছে। কিন্তু সেই ফ্রান্সেও অনলাইনে নিপীড়নমূলক কোনো পোস্ট সরিয়ে ফেলতে বাধ্য করা প্রায় অসম্ভব। এমনকি যদি সেগুলোতে নৃশংস হুমকিও দেওয়া থাকে তবুও।”
এছাড়ও ফ্রান্সে ব্যাপকভাবে ইসলামভীতি ছড়িয়ে পড়া এবং নিজের নামের শেষাংশ ইসলাম হওয়ায় কারণেও তার মামলাটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন কামরুল।
এদিকে, স্টাফোর্ডশায়ার পুলিশের কাছে তিনি যে অভিযোগ করেছেন সেটা নিয়েও তাকে একই ধরণের হাতাশায় ভুগতে হচ্ছে। অভিযোগ করার প্রায় আড়াই মাস পর তার অভিযোগটি ইন্টারপোলে পাঠানো হয়।
এবং এই পুরোটা সময়ে সাঈদ ইউটিউব, ফেসবুক এবং টিকটকে কামরুলের পরিবারকে ট্রল করে ভিডিও পোস্ট অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বার বার যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তার পরিবারকে নিয়ে বানানো ভিডিওগুলো মুছে ফেলার দাবি জানানেও কেউ তার উত্তর দেয়নি।
২০২৩ সালের এপ্রিলে তিনি ইনফরমেশন কমিশন্স অফিসে (আইসিও) যোগাযোগ করেন এবং তারা শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
ভিডিওগুলো দেখে এবং সেগুলোর অনুবাদ শুনে আইসিও কর্মকর্তারা কামরুলকে বলেন, ভিডিওগুলোর বিষয়বস্তু নিয়ে তারা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ এবং সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি সেগুলো সরিয়ে ফেলতে বা ব্লক করতে অস্বীকৃতি জানানোর সঙ্গে তারা একমত নন।
আইসিও বিশেষ করে কামরুলের সন্তানের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং টিকটক, ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের মধ্যে ওইসব ভিডিও সরিয়ে ফেলতে বলেছে।
কামরুল বলেন, “তারা আসলেই অত্যন্ত দক্ষ। যারা এ লড়াইয়ে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে তারা তাদের একজন।”
কামরুলের অভিযোগের বিষয়ে আইসিও’র একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, যদি ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় তবে ‘আমরা প্রত্যাশা করি কোম্পানিগুলো ওইসব অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবে এবং তদন্ত করবে’।
পরে টিকটক কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেন, তারা ভিডিও সরিয়ে নিয়েছে এবং এ ঘটনায় যেসব একাউন্ট তাদের দিকনির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে সেসব একাউন্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবং তারা ‘এই ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে তাদের ব্যবস্থাগ্রহণ আরও উন্নত করে চলেছে’।
ইউটিউবের একজন মুখপাত্র বলেন, তারা হয়রানি এবং সাইবার-বুলিং করতে দেয়নি এবং সাঈদের ব্যবহৃত চ্যানেলটি পর্যালোচনা করে তারা সেটি ‘বন্ধ’ করে দিয়েছে।
মেটার একজন মুখপাত্র বলেন, সাঈদের ফেসবুক পেজ অকার্যকর করা হয়েছে এবং তিনি যেসব পোস্ট করেছিলেন তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
বলেছে, “আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ নিখুঁত নয় এবং কখনও কখনও মেশিন ও মানুষ উভয়ই ভুল করে থাকে। এই কারণেই আমরা আমাদের প্ল্যাটফর্মগুলি থেকে নিয়ম লঙ্ঘনকারী বিষয়বস্তু সনাক্ত এবং সরানোর ক্ষমতা উন্নত করতে ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছি।”
‘তারা আমাদের চুপ করানোর চেষ্টা করে’
কামরুল বলেন, তিনি এখন তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্টগুলো ব্যবহার করে সাঈদের মুখোশ খুলে দেওয়ার এবং তার শিকার ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন। বলেন, অনেক বাংলাদেশি নারীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সাহায্য চাইছেন।
“আমি সারা দেশ (যুক্তরাজ্য) থেকে অনেক বোনের ম্যাসেজ পাই। যারা টিকটকে ভয়াবহ রকম বুলিংয়ের শিকার।
“অনেকে আমাকে বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে তারা কোনো ধরণের সাহায্য পান না এবং এতটাই হাতাশ হয়ে যান যে এসব থেকে মুক্তি পেতে নিজেদের মেরে ফেলতে ইচ্ছা করে।”
সুলতানা বলেন, বাংলাদেশে অনেক পুরুষ চান না সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীরা তাদের কথা বলুক।
“তাই তারা বুলিং ও হেনেস্তা করার মাধ্যমে আমাদের চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
“এ কারণে তাদের কখনও কোনো জবাবদিহি করতে হয় না, তাই তারা বার বার পার পেয়ে যায় এবং যুগের পর যুগ ধরে এমনটাই হয়ে এসেছে।
“কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টিকে আরও বেশি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া, কারণ এটা খুবই ক্ষতি করে।”
কামরুল বলেন, তিনি প্রায় প্রতিদিনই টিকটক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের সাঈদের খোলা নতুন নতুন একাউন্ট বন্ধ করে দিতে বলেন। সেগুলো থেকে তাকে এবং তার পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়।
“তবে সব সময় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।”
তিনি যুক্তরাজ্য বাংলাদেশি নারীদের নিজেদের বুলিংয়ের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খোলার অনুরোধ করেছেন। বলেন, “যদি আপনি শুধুই চুপ থাকেন, এই নরপিচাশ মানুষের ক্ষতি করা অব্যাহত রাখবে।”
কয়েক বছরের বিতর্কের পর গত ২৬ অক্টোবর যুক্তরাজ্য সরকারের ‘অনলাইন সেফটি বিল’ আইনে পরিণত হয়েছে। মন্ত্রীরা বলেছেন, তাদের এই আইনের লক্ষ্য শিশুদের জন্য ইন্টারনেটকে নিরাপদ করে তোলা।
বিজ্ঞান, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি অধিদপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেন, লোকজনের উচিত এখন অনলাইনে পাওয়া যেকোনো হুমকির বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো এখন তাদের প্ল্যাটফর্মে বেআইনি কোনো কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে দায়বদ্ধ।
বলেন, “যদি তারা অপরাধমূল এই হুমকিগুলোকে অবিলম্বে এবং কার্যকরভাবে চিহ্নিত করে সেগুলো প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা না করে তাহলে তাদের এত বড় অংকের জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে যে তাদের চোখের জল নাকের জল এক হয়ে যাবে। জরিমানার পরিমাণ বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ডও হতে পারে। অবৈধ ওই কনটেন্টগুলো যুক্তরাজ্যের বাইরে থেকে পোস্ট করা হলেও তারা পার পাবে না।”
যদিও আইনটি কিভাবে কার্যকর করা হবে তা নিয়ে নজরদারি কর্তৃপক্ষ এখনও আলোচনা করছে।