অর্থনীতিবিদ থেকে রাজনীতিতে নাম লেখানো কংগ্রেসের বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
Published : 26 Dec 2024, 11:57 PM
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মারা গেছেন; যিনি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনকারীদের একজন ছিলেন।
অর্থনীতিবিদ থেকে রাজনীতিতে নাম লেখানো কংগ্রেসের বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী নয়া দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
রয়টার্স লিখেছে, বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভোগা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এদিন বাসায় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর তথ্য দিয়ে এআইআইএমএস সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “মনমোহন সিং বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন এবং বৃহস্পতিবার নিজ বাসভবনে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েন। বাসভবনেই তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়। পরে তাকে এআইআইএমএসের জরুরি বিভাগে আনা হয় রাত ৮টা ৬ মিনিটে।
সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চললেও তাকে আর ফেরানো যায়নি বলে বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরে ধরে হাসপাতালটি বলেছে, রাত ৯টা ৫১ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
ভারতের উদার অর্থনীতির ‘স্থপতি‘ হিসেবে বিবেচনা করা হয় শিখদের মধ্যে প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মনমোহন সিংকে।
২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগে অর্থমন্ত্রী ছিলেন ১৯৩২ সালে পাঞ্জাবের এক প্রত্যন্ত অঞ্চল জন্মগ্রহণকারী কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ডের ডিগ্রিধারী এই অর্থনীতিবিদ।
জওহরলাল নেহরুর পর মনমোহন সিং ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি প্রথমবার দায়িত্ব পালনের পর পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এছাড়া শিখদের মধ্যেও মনমোহন ছিলেন প্রথম রাজনীতিক, যিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে বসেছিলেন।
১৯৮৪ সালের দাঙ্গায় প্রায় তিন হাজার শিখকে হত্যার ঘটনায় জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন মনমোহন।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময় একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার সরকারের বিরুদ্ধে।
অনেকেই মনে করেন, এসব দুর্নীতির কারণেই তার দল কংগ্রেস ২০১৪ সালের নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হেরে যায় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের কাছে।
মনমোহনের সিংয়ের জন্ম ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর; অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে।
প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা মনমোহন স্নাতকোত্তর করেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরে অক্সফোর্ড থেকে পিএইচডি করেন।
তার মেয়ে দামান সিং একটি বইয়ে লিখেছেন, কেমব্রিজে লেখাপড়ার সময়ও অর্থ সংকটে ভুগেছেন মনমোহন সিং।
“তার টিউশন ফি ও থাকা-খাওয়ার খরচ ছিল বছরে ৬০০ পাউন্ড। কিন্তু পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি হিসেবে পেতেন ১৬০ পাউন্ড। বাকি খরচ তাকে তার বাবার কাছ থেকে নিতে হত। খুব সতর্কতার সঙ্গে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করতেন তিনি।”
‘অপ্রত্যাশিত প্রধানমন্ত্রী’
মনমোহন সিং এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন, যিনি নিজের রাজনৈতিক জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন।
এ বিষয়ে একবার তিনি বলেছিলেন, “রাষ্ট্রনেতা হওয়াটা ভালো। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রনেতা হতে গেলে তোমাকে আগে নির্বাচনে জয়ী হতে হবে।”
১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে হেরে যান মনমোহন সিং। পরে দল থেকে তাকে বসানো হয় রাজ্যসভায়।
একই ফল হয় ২০০৪ সালের নির্বাচনেও, যেবার তাকে প্রথমবারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেয় তার দল কংগ্রেস।
ওই সময় নাগরিকত্ব ইস্যুতে বিরোধীদের সমালোচনার হাত থেকে দলকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী।