যুদ্ধ সবচেয়ে গুরুতর এবং জটিল পর্যায়ে মোড় নিয়েছে। ইসরায়েলের ট্যাংক পৌঁছেছে হামাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ঘাঁটি খান ইউনিস, জাবালিয়া এবং সেজাইয়ায়।
Published : 06 Dec 2023, 05:51 PM
গাজাজুড়ে চলছে তুমুল লড়াই। ইসরায়েলি বাহিনী স্থলঅভিযান জোরদার করেছে। বাড়িতে বাড়িতে লড়াই হওয়ার খবর আসছে।
যুদ্ধ সবচেয়ে গুরুতর এবং জটিল পর্যায়ে মোড় নিয়েছে। ইসরায়েলের ট্যাংক পৌঁছেছে হামাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ঘাঁটি খান ইউনিস, জাবালিয়া এবং সেজাইয়ায়।
ওইসব এলাকায় হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক এখনও বাস করছে। যুদ্ধের কারণে সেখানে বহু মানুষ হতাহত হওয়ার ঝুঁকিও অনেক বেশি।
বিবিসি জানায়, এলাকাগুলোর মানবিক পরিস্থিতিও বিপর্যয়কর। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কিছুই সেখানে নেই। এমনকি পানের জন্য বিশুদ্ধ পানিও নেই।
‘দিনে একবেলাই খাবার জুটছে’ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক অধিবাসী। ৫ বছর বয়সী এক শিশুর এই মা বলেন, খাবারের জন্য কেবল ছোট্ট এক টুকরো রুটি আর টিনজাত মটরশুটি মিলছে।
তিনি আরও জানান, ছয়মাসের শিশুর জন্য দুধ পাওয়া যাচ্ছে না। তার সব ছেলেমেয়ে অসুস্থ। তারা নোংরা পানি পান করছে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় গায়ে দেওয়ার জন্য কম্বলও নেই।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বলছে, গাজার দক্ষিণে ৬ লাখ মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। কিন্তু তাদের সরে যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। কারণ, সব আশ্রয়স্থল পূর্ণ হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার ইসরায়েলের সেনারা গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের প্রাণকেন্দ্রে পৌঁছেছে। স্থল অভিযানে সবচেয়ে তীব্র লড়াই হয়েছে এদিনই।
ইসরায়েলের ধারণা ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নেতারা খান ইউনিসেরই কোথাও আত্মগোপন করে আছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ধ্বংসাত্মক শক্তি দিয়ে যুদ্ধ জয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন।
খান ইউনিসের আরও গভীরে ঢুকছে ইসরায়েলের সেনারা। ওদিকে, উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবির এবং সেজাইয়াতেও লড়াই চলছে।
গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় গাজার কেন্দ্রস্থলে ৭৩ জন নিহত হয়েছে। আরও ১০০ জনেরও বেশি মানুষকে আল-আকসা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
খান ইউনিসের পশ্চিমের অঞ্চল থেকে এক সাংবাদিক বিবিসি-কে জানিয়েছেন, “পরিস্থিতি খুবই ভয়ঙ্কর… প্রতি মুহূর্তে বিমান হামলা হচ্ছে এবং ট্যাংকের গোলা পড়ছে। সবকিছু কাঁপছে।
“ইসরায়েল বলছে আপাতত এই স্থানই নিরাপদ। কিন্তু এ জায়গা আসলে নিরাপদ না। আমরা খুব বেশি নড়াচড়া করতে পারছি না। মানুষ রাফায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।”
গত ৭ অক্টোবর গাজার সীমান্ত সংলগ্ন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস নজিরবিহীন হামলা চালায়। হামলায় ১২০০ জন নিহত হয়েছে এবং তাদের অধিকাংশই বেসামরিক বলে ইসরায়েল জানিয়েছে। ওই দিন প্রায় ২৪০ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে জিম্মি করে রাখে হামাস।
হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে ওই দিন থেকেই প্রায় সবদিক থেকে গাজা অবরুদ্ধ করে ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। তাদের অবিরাম বোমাবর্ষণ ও গোলা হামলায় এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৮০০’র বেশি গাজাবাসী ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, এদের প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু।