অভিশংসনে ক্ষমতা হারিয়ে গ্রেপ্তার ক্যাস্তিয়ো, পেরুর নতুন প্রেসিডেন্ট দিনা বলুয়ার্তে

রাজধানী লিমায় দিনভর নানা রাজনৈতিক নাটকের পর দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2022, 06:03 AM
Updated : 8 Dec 2022, 06:03 AM

কংগ্রেসে অভিশংসিত হয়ে ক্ষমতা হারিয়েছেন পেরুর প্রেসিডেন্ট পেদ্রো ক্যাস্তিয়ো, এরপর তাকে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

বুধবার রাজধানী লিমায় দিনভর নানা রাজনৈতিক নাটকের পর দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন।

অভিশংসনের কয়েক ঘণ্টা আগে ক্যাস্তিয়ো (৫৩) ক্ষমতায় থাকার চেষ্টায় কংগ্রেস ভেঙ্গে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

কিন্তু ডিক্রি জারি করে আইনসভা বন্ধ করে দেওয়ার ক্যাস্তিয়োর এ পদক্ষেপ উপেক্ষা করেন আইনপ্রণেতারা, তারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জরুরি অধিবেশন ডেকে অভিশংসন ট্রায়াল শুরু করেন। ক্যাস্তিয়োকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরানোর পক্ষে ভোট দেন ১০১ জন আইনপ্রণেতা, বিপক্ষে পড়ে ছয় ভোট আর ১০ জন ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

ব্যাপক করতালির মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হয়, আইনসভা ভাইস প্রেসিডেন্ট দিনা বলুয়ার্তেকে ক্ষমতা গ্রহণের আহ্বান জানায়। এরপর বলুয়ার্তে (৬০) প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। এর মাধ্যমে তিনি পেরুর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পেশায় আইনজীবী বলুয়ার্তে, ক্যাস্তিয়োর প্রেসিডেন্সির বাকি মেয়াদ জুলাই ২০২৬ পর্যন্ত দায়িত্বপালন করবেন।

কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ক্যাস্তিয়োর বিরুদ্ধে আরও দুইবার অভিশংসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেসময় রাজনৈতিক মিত্ররা তাকে রক্ষা করেন।

প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে বলুয়ার্তে রাজনৈতিক লড়াইয়ে বিরতি দেওয়া আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সব মত-পথের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন তিনি।

ক্যাস্তিয়োর কংগ্রেস বিলুপ্তির উদ্যোগকে ‘অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা’ অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানান বুলয়ার্তে।

বুধবার সন্ধ্যায় দেশটির জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, ক্যাস্তিয়োকে আটক করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ধারা ভঙ্গ করে ‘বিদ্রোহ’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর কয়েক ঘণ্টা আগে ক্যাস্তিয়ো জানিয়েছিলেন, তিনি সাময়িকভাবে কংগ্রেস বন্ধ করে ‘জরুরি অবস্থা’ জারি করবেন এবং নতুন আইনসভা নির্বাচন আহ্বান করবেন।

তার রাজনৈতিক মিত্র ও বিরোধী রাজনীতিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি অভ্যুত্থানের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলে, এরমধ্যে তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ শুরু করে।

তিনি কংগ্রেস বিলুপ্ত করার যে পথ বেছে নিয়েছেন তা অসাংবিধানিক, এমনটি জানিয়ে পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী তাকে সতর্ক করে। পুলিশ জানায়, তারা তাদের দায়িত্ব পালনে করতে ‘হস্তক্ষেপ’ করেছিল।

ক্যাস্তিয়োকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর রাস্তায় রাস্তায় কিছু ছোট ছোট মিছিল দেখা গেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। ক্যাস্তিয়োর পতনে লিমায় কয়েক ডজন লোক পেরুর পতাকা দুলিয়ে উল্লাস করে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় ও আরেকিপা শহরে ক্যাস্তিয়োর সমর্থকরা মিছিল করে তার পক্ষে স্লোগান দেয় ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।

একজনের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “পেদ্রো, জনগণ তোমার সঙ্গে আছে।”

লিমার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদা ও কংগ্রেস ঘিরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

বামপন্থি স্কুল শিক্ষক ক্যাস্তিয়ো নির্বাচনে জিতে জুলাই, ২০২১ থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন শুরু করেছিলেন। এর আগে দুইবার অভিশংসনের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তখন নিজ দল ও রাজনৈতিক মিত্রদের কারণে রক্ষা পান।

কিন্তু বুধবার তিনি কংগ্রেস বিলুপ্ত করার উদ্যোগ নিলে নিজ দল ও মিত্ররা তার পক্ষ ত্যাগ করে। এ সময় আমেরিকা মহাদেশ আঞ্চলের আঞ্চলিক শক্তিগুলো ‘গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার’ ওপর জোর দেয়।

লিমায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিসা কেনা টুইটারে লিখেন, “কংগ্রেসকে তার ম্যান্ডেট পূরণে বাধা দিতে প্রেসিডেন্ট ক্যাস্তিলোর সংবিধান বহির্ভূত পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে।”