মিয়ানমারের শরণার্থীদের ফেরত পাঠাচ্ছে ভারত

মিয়ানমারের সঙ্গে ভিসা-মুক্ত সীমান্ত নীতি থেকে সরে আসার কয়েক সপ্তাহ পর শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন শুরু করল ভারত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2024, 10:10 AM
Updated : 10 March 2024, 10:10 AM

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া নাগরিকদের ফেরত পাঠানো শুরু করেছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশটি।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর থেকে শুক্রবার প্রথম দফায় কয়েকজনকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে রাজ্য সরকার।

এদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এক্সে এক পোস্টে লেখেন, “অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করা মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রথম ব্যাচকে আজ ফেরত পাঠানো হয়েছে।”

রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারের সঙ্গে ভিসা-মুক্ত সীমান্ত নীতি থেকে সরে আসার কয়েক সপ্তাহ পর শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন শুরু করল ভারত। সামনের দিনগুলোতে আরো লোকজনকে ফেরত পাঠাবে দেশটি।

প্রথম দফায় কতজনকে পাঠানো হয়েছে সেটি জানা যায়নি। তবে অনন্ত ৭৭ শরণার্থীকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করছে মণিপুর সরকারের, যার কার্যক্রম শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে।

২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান এবং সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সেখান থেকে পালিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেয় দেশটির হাজারো নাগরিক। বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের আক্রমণের মুখে শত শত সেনা সদস্যও পালিয়ে আসে।

সামরিক অভ্যুত্থানের তিন বছর পর মিয়ানমারে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তুমুল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী। যুদ্ধবিধ্বস্ত এমন পরিস্থিতিতেই আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের ফেরত পাঠাচ্ছে ভারত।

মণিপুরের সঙ্গে সীমান্ত সংযোগ রয়েছে মিয়ানমারের। সীমান্তের দুই পাশের মানুষের মধ্যে জাতিগত মিলও রয়েছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে সংঘাতে উত্তপ্ত হওয়া মণিপুরে মিয়ানমারের শরণার্থীদের কারণে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরো বাড়ার ঝুঁকি দেখছে দিল্লি। গত বছরের মে মাস থেকে জাতিগত সহিংসতায় মণিপুরে প্রায় ২০০ জনের প্রাণ গেছে।

নাম প্রকাশ না করে ভারতের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, শরণার্থীদের প্রথম দলটিকে ভারতের সীমান্ত শহর মোরেহ-তে নেওয়ার পর তাদের হস্তান্তর করা হয়।

মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং এক্সে একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেছেন। সেখানে দেখা যায়, কয়েকজন নারী শরণার্থীকে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ভ্যানে তুলে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

মন্ত্রী লিখেছেন, “ভারত ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ না হলেও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লোকেদের আশ্রয় ও সহায়তা দিয়েছে।”

কিন্তু যুদ্ধ বিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে মিয়ানামারের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বক্তব্য পুনরাবৃত্তি করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় ও সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

সীমান্তের লোকজনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে কয়েক দশক পুরনো ভিসা মুক্ত চলাচলের নীতি ছিল ভারতের। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে গত মাসে ওই নীতির ইস্তফা ঘোষণা করে ভারত। তার আগে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের সঙ্গে ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার ঘোষাণা দেন।