Published : 01 May 2025, 03:52 PM
সিরিয়ায় দ্রুজ সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণকারী একটি ‘উগ্রবাদী গোষ্ঠীর’ ওপর হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েল।
বুধবার দামেস্কের কাছে এক এলাকায় রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক সংঘাত ছড়িয়ে যাওয়ার পর সংখ্যালঘু দ্রুজদের রক্ষায় তেল আবিবের অঙ্গীকারের পর এ হামলার কথা জানাল তারা।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের নাম না নিয়েই সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ‘সব ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপের’ নিন্দা এবং ‘সম্ভ্রান্ত দ্রুজ সম্পদ্রায়সহ’ সিরিয়ার সকল গোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
দেশটির দীর্ঘদিনের শাসক বাশার-আল আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর সিরিয়ার দ্রুজদের সমর্থনে ইসরায়েল এবারই প্রথম কোনো সামরিক হামলার কথা জানাল, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আসাদকে উৎখাত করে যারা ক্ষমতা নিয়েছে সেই সুন্নিদের ব্যাপারে তেল আবিবের যে গভীর অবিশ্বাস রয়েছে, এ হামলা তারই সাক্ষ্য দিয়েছে। ইসরায়েলের এ হামলা দ্বিধাবিভক্ত দেশটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার প্রতিবন্ধকতা আরও বাড়াবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, দামেস্কের উপকণ্ঠে অবস্থিত দ্রুজ অধ্যুষিত শহর সাহনায়াতে সরকারি বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য নিহত হয়েছে।
ইসলামের একটি শাখা থেকে উদ্ভূত দ্রুজ মতবাদের অনুসারীদের সিংহভাগই সিরিয়া, লেবানন ও ইসরায়েলে বসবাস করেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, সাহনায়াতে দ্রুজদের ওপর ধারাবাহিক হামলার প্রস্তুতি নেওয়া ‘একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর ওপর হামলা ও সতর্কতামূলক অভিযান’ চালিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
“পাশাপাশি সিরিয়ার এখনকার শাসকদের একটি বার্তাও দেওয়া হয়েছে, দ্রুজদের বিপদ ঠেকাতে তারা কার্যকর ব্যবস্থা নেবে এটাই ইসরায়েলের প্রত্যাশা,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
ডিসেম্বরে আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর ইসরায়েল ‘দ্রুজদের সুরক্ষা দেওয়ার’ আশ্বাস দিয়ে সিরিয়ার দক্ষিণপশ্চিমের কিছু এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশটিকে ‘দুর্বল করে রাখতে’ ওয়াশিংটনে লবিও করছে। সুন্নিরা দামেস্ক দখল করার পরের কয়েকদিন তারা ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ ভারি অস্ত্রশস্ত্রও উড়িয়ে দিয়েছে।
সিরিয়ার এখনকার শাসক শারা একসময় আল-কায়েদার কমান্ডার ছিলেন, ২০১৬ সালে তিনি জঙ্গিগোষ্ঠীটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। ক্ষমতা নেওয়ার পর তিনি সিরিয়ায় অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন কায়েম করবেন বলে বারবারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু একের পর এক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সংখ্যাগুরু সুন্নি অংশকে নিয়ে সংখ্যালঘুদের সন্দেহ ও আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে।
দেশটিতে মার্চেই এক সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় আলাউইত সম্প্রদায়ের কয়েকশ সদস্য নিহত হয়েছিল।
সর্বশেষ সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় মঙ্গলবার দ্রুজ অধ্যুষিত জারামানা এলাকায় সুন্নি বন্দুকধারীদের সঙ্গে দ্রুজদের তুমুল সংঘর্ষের খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
মুসলমানদের নবী মোহাম্মদকে অভিশাপ দেওয়ার এক ভয়েস রেকর্ডিংকে কেন্দ্র করে এ সংঘাতের সূচনা হয়। এই রেকর্ডিংয়ের জন্য এক দ্রুজকে সন্দেহ করছে সুন্নিরা।
মঙ্গলবারের সহিংসতায় ডজনের বেশি লোক নিহতক হওয়ার পর বুধবার সংঘাত সানায়াতে ছড়িয়ে পড়ে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে দামেস্কের গ্রামাঞ্চলের নিরাপত্তা পরিচালক জানান, জারামানাতে বিবদমান পক্ষগুলো অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছালেও সন্ত্রাসীরা বুধবার সাহনায়া এলাকায় হামলা জোরদার করে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ১৬ জনকে হত্যা করে।
পরে দ্রুজ বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে এক সমঝোতার ভিত্তিতে সাহনায়া ও এর আশপাশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বাহিনীর কয়েকশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে, নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে বলছে রয়টার্স।
শহরটির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তুমুল সংঘাতের পর পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত, তবে মাঝে মাঝে বন্দুকের গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
সিরিয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস সাহনায়াতে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে। এদের মধ্যে দ্রুজ যোদ্ধা ছয়জন, বাকিরা হয় সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বা তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, বলেছে তারা।