গত মাসে তুতসি নেতৃত্বাধীন এম২৩-র যোদ্ধারা নর্থ কিভু প্রদেশের রাজধানী গোমা দখলে নিয়েছিল।
Published : 15 Feb 2025, 10:29 AM
মধ্য আফ্রিকার খনিজসমৃদ্ধ দেশ গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের পূর্বাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, সাউথ কিভু প্রদেশের রাজধানী বুকাভুতে প্রবেশ করেছে বিদ্রোহী এম২৩ গোষ্ঠীর সশস্ত্র যোদ্ধারা।
বিদ্রোহীদের জোট কঙ্গো রিভার এলায়েন্সের নেতা কর্নেই নাঙ্গা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, তাদের যোদ্ধারা শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় বুকাভুতে ঢুকেছে এবং শনিবারও তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছিল।
বিদ্রোহীদের জোট রিভার এলায়েন্সে প্রতিবেশী রুয়ান্ডা সমর্থিত এম২৩-ও আছে। যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ ও শান্তি আলোচনা ফের শুরুর তাগাদা সত্ত্বেও একের পর এক শহরে বিদ্রোহীদের হামলা চলছে।
গত মাসে তুতসি নেতৃত্বাধীন মার্চ ২০২৩ মুভমেন্ট বা এম২৩-র যোদ্ধারা খনিজসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলের প্রধান শহর গোমা দখলে নিয়েছিল।
কঙ্গোর সরকারের অভিযোগ, তাদের সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিতে রুয়ান্ডাই পূর্বাঞ্চলে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। রুয়ান্ডা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিদ্রোহীদের ত্বরিত অগ্রগতি এরই মধ্যে অঞ্চলটির লাখ লাখ লোককে বাড়িছাড়া করেছে।
২০১২ সালেও এম২৩ অল্প সময়ের জন্য গোমার দখল নিয়েছিল, কিন্তু বাকুভুর নিয়ন্ত্রণ নিতে চাওয়া বোঝাচ্ছে এবার তাদের লক্ষ্য ভিন্ন।
রুয়ান্ডার সীমান্তবর্তী বুকাভু কিভু হ্রদের একেবারে দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত, স্থানীয় খনিজ বাণিজ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট।
শহরটিতে ঢোকার আগে শুক্রবার বিদ্রোহীরা বুকাভুর প্রায় ৩০ কিলোমিটর উত্তরে অবস্থিত বিমানবন্দরেও প্রবেশ করে, সেসময় কঙ্গোর সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্র মিলিশিয়ারা সেখানে খুব বেশি প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে পারেনি।
তবে পরে বুকাভুর প্রান্তে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই হয় বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন সাউথ কিভুর ডেপুটি গভর্নর ঝান এলেকানো।
শহরটির বাসিন্দাদের সঙ্গে বিবিসি যোগাযোগ করলে তারা জানায়, কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ঘরের ভেতর থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
দুই পক্ষের এই সংঘাতের মধ্যেই উত্তরে মেবা শহরে একটি চার্চের মধ্যে ৭০টি মৃতদেহ মিলেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে।
নর্থ কিভুর স্থানীয় এক গোষ্ঠীর সমন্বয়ক ভিয়ানি ভিতসোয়াম্বা গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের বার্তা সংস্থা ৭সুর৭- কে জানান, মৃতদেহগুলো হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে।
এ ঘটনার জন্য জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট সংশ্লিষ্ট এলাইড ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসকে (এডিএফ) দায়ী করা হচ্ছে।
এদিকে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স সিসেকেদি রুয়ান্ডার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
কঙ্গোর বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও রুয়ান্ডা প্রতিবেশী দেশের পূর্বাঞ্চলে তাদের সেনা থাকার কথা নিশ্চিত করেছে।
কঙ্গোর হুতু বিদ্রোহীরা রুয়ান্ডার জন্য বিপজ্জনক অ্যাখ্যা দিয়ে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে বলেছেন, তার দেশের নিরাপত্তা তার কাছে সবার আগে।
এমন এক সময়ে বিদ্রোহী জোটের বুকাভুতে ঢোকার খবর এল যখন শনিবার ইথিওপিয়ায় আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) সম্মেলনে মহাদেশটির সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা একত্রিত হতে যাচ্ছেন।
এইউ কমিশনের প্রধান মুসা ফাকি মাহামাত একটি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হওয়া উচিত।
“সামরিক অভিযান এসব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এই ইস্যুতে এখন আফ্রিকায় একটি সাধারণ ঐকমত্য আছে, আশা করছি আমরা যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারবো,” বলেছেন তিনি।