বেঁধে দেওয়া তেলের দাম পরবর্তী নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে কার্যকর হবে বলে জোটের যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
Published : 03 Sep 2022, 12:09 AM
বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আর ইউক্রেইনে যুদ্ধে রাশিয়ার লাগাম টেনে ধরতে দেশটির তেলের দাম বেঁধে দিতে একাট্টা হয়েছে পশ্চিমা বড় অর্থনীতির দেশগুলো।
সিএনএন এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার জি- ৭ জোটের অর্থমন্ত্রীরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি ‘বিনিময় মূল্যের’ চুক্তির ওপর তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন।
সাগরপথে রাশিয়ার পেট্রোল এবং অপরিশোধিত তেল পরিবহনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এমন চুক্তি রয়েছে। এর ফলে বিমা করার পাশাপাশি তেলের চালানে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
শক্তিশালী অর্থনীতির জি-৭ জোটের দেশগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি এবং যুক্তরাজ্য।
যৌথ একটি বিবৃতিতে জোটের অর্থমন্ত্রীরা জানিয়েছেন, তেলের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করবে দেশগুলোর বড় একটি জোট। যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরবর্তী নিষেধাজ্ঞাগুলোর সঙ্গে কার্যকর হবে।
আগামী ডিসেম্বরে রাশিয়া থেকে সাগরপথে আমদানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
রাশিয়া হুমকি দিয়েছে, যেসব দেশ মূল্যসীমা বেঁধে দেবে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তাদের কাছে তেল বিক্রি করবে না মস্কো।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস এর উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন জানায়, বৃহস্পতিবার রাশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক সাংবাদিকদের বলেন, “যারা বিধি-নিষেধ আরোপ করবে আমরা সেসব কোম্পানি অথবা দেশগুলোর কাছে তেল এবং পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেব।”
রাশিয়ার তেলের মূল্যসীমা বেঁধে দিতে গত কয়েক মাস ধরে দেশগুলোকে চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। পশ্চিমা দেশগুলো ইতোমধ্যে রাশিয়ার বেশ কিছু জ্বালানি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
তবে চীন এবং এশিয়ার দেশগুলোতে তেল বিক্রি করে রাশিয়া প্রতিমাসে কয়েক বিলিয়ন ডলার আয় করছে বলে সিএনএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়।
জি- ৭ জোটের অর্থমন্ত্রীরা বিবৃতিতে বলেন, “রাশিয়ার রাজস্ব এবং এর আগ্রাসী যুদ্ধে তহবিল যোগানোর সক্ষমতা কমিয়ে আনার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এই মূল্যসীমা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
“এর ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দামে রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব কমিয়ে আনা যাবে, বিশেষ করে নিম্ন এবং মধ্য-আয়ের দেশগুলোর জন্য এটা করা হয়েছে।”
সিএনএন লিখেছে, এমন পদক্ষেপের বিষয়ে এখনও অনেক কাজ বাকি এবং বিষয়টি পরিচালনা করাও অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠবে। কিভাবে, কখন এবং রাশিয়ার তেলের মূল্যসীমা কত হবে তা এখনও জানা যায়নি।
এটা কার্যকর করতে বড় ধরনের আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জি-৭ জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, “যারা এখনও রাশিয়া থেকে তেল এবং পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য আমদানি করতে চায়, আমরা সেসব দেশকে নির্ধারিত দামে, নয়তো মূল্যসীমার চেয়ে কমে কেনার জন্য প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
মন্দার কারণে চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় জুলাইয়ের শুরু থেকে তেলের দাম ১৮ শতাংশের মতো কমে আসে। যদিও এক বছর আগের দামের চেয়ে তা ২০ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন এক বিবৃতিতে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে আমরা জ্বালানির দাম সহনশীল হয়ে উঠতে দেখছি,এরপরও আমেরিকার জনগণের জন্য জ্বালানি খরচ একটি উদ্বেগের কারণ এবং বিশ্বব্যাপী দাম বাড়ছেই।
“মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় এই মূল্যসীমা সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হয়ে উঠবে এবং ভবিষ্যতে সরবরাহে ব্যাঘাতের কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে ব্যবসা এবং শ্রমিকদের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে রক্ষা করবে।”
তাস এর প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক বিধি-নিষেধ আরোপের এই প্রস্তাবকে ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিক’ দাবি করে বলেছেন, এর ফলে বৈশ্বিক তেলের বাজার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
“এমন পদক্ষেপ কেবল তেল শিল্প এবং তেলের বাজারকে অস্থির করে তুলবে” –বলেন নোভাক।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা- আইইএ’র তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় অপরিশোধিত তেলসহ অন্যান্য তেলজাত পণ্যের সরবরাহ দৈনিক প্রায় ২২ লাখ ব্যারেল কমে এসেছে।
তবে সংস্থাটি বলছে, এর দুই তৃতীয়াংশ ভিন্নপথে অন্যান্য বাজারে ঢুকে পড়ায় মস্কোর কোষাগার ভারী হয়ে উঠছে। জুলাই মাসে দেশটির রপ্তানি আয় ছিল প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।