গত বছর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, যোগাযোগ এমনকি জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও তার নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্য করা গেছে। এ ছাড়া, বৈশ্বিক নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করতে দেখা গেছে মাস্ককে।
Published : 25 Dec 2023, 11:44 AM
কেবল একটি প্রযুক্তি নিয়ে পড়ে না থাকার জন্য বিশেষ পরিচিতি আছে ইলন মাস্কের।
টেসলা, স্পেসএক্স, বোরিং কোম্পানি, নিউরালিংক, এক্স ও এক্সএআই, কেবল প্রযুক্তি খাতেই ছয়টি কোম্পানির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মার্কিন এই ধনকুবের। তাই তাকে ‘যুগান্তকারী রকেট নির্মাতা, ইভি উৎপাদক ও প্রযুক্তি খাতের বাউণ্ডুলে’ বলে আখ্যা দিয়েছে সংবাদ সাইট বিজনেস ইনসাইডার।
এ ছাড়া, তার এতগুলো বিশেষণের সঙ্গে ‘ভূরাজনৈতিক কূটনীতিক’ শব্দটি যোগ করা যায় কি না, পাঠকদের সে প্রশ্নও করেছে সাইটটি।
এক দশকের বেশি সময় ধরে নিজের ‘বিলিয়নেয়ার’ তকমা ধরে রেখেছেন মাস্ক, যার প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনেও।
এর পরিপ্রেক্ষিতে, গত বছর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, যোগাযোগ এমনকি জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও তার নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্য করা গেছে। এ ছাড়া, বৈশ্বিক নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করতে দেখা গেছে মাস্ককে।
বিশ্লেষকরা সতর্কবার্তা দিয়েছেন, এ প্রভাব মাস্কের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার সমন্বিত ফল, যা গণতন্ত্রকেও পাত্তা দেয় না।
রাজনীতির অঙ্গনে মাস্কের সম্ভাব্য প্রভাবের কিছুটা ঝলক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে ইনসাইডার।
এক্স
২০২২ সালে চার হাজার চারশ কোটি ডলারে মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণ এখনও আর্থিকভাবে আশানুরূপ ফলাফল দেখাতে পারেনি।
তবে, এর মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সামাজিক মাধ্যমের ‘সর্বেসর্বা’ হয়ে উঠেছেন মাস্ক, যেখানে তিনি যাকে খুশি তাকে পুরস্কৃত করার বা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষমতা পেয়েছেন।
এদিকে, গণমাধ্যমের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে এ মাসের শুরুতে মাস্ক এক পোস্টে বলেছেন, “তারা কারও মতামত বিচার করার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে।”
এর মাধ্যমে মাস্ক বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি নিজেই এখন সর্বেসর্বা।
বিভিন্ন প্রচলিত ঘটনা নথিভুক্ত করা বা শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে মাস্কের প্ল্যাটফর্ম ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও তা গ্রাহকদের প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি।
ডিসেম্বরে এক্স-এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ইউরোপীয় কমিশন, যেখানে সামাজিক মাধ্যমটির কনটেন্ট মডারেশন ব্যবস্থা ও অবৈধ কনটেন্টের বিস্তার ছড়ানো নিয়ে তোলা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অ্যালেক্স জোনসের মতো বেশ কিছু কুখ্যাত ডানপন্থী ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট এক্স-এ ফিরিয়ে আনলেও সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেননি মাস্ক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ ভুল তথ্যের বিস্তার ঠেকানোর ক্ষেত্রে মাস্কের উদাসীনতা যে দেশটির রাজনৈতিক মতপার্থক্যে বড় প্রভাব ফেলবে, সে ভীতিও বাড়ছে।
গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো
গোটা বিশ্ব ও মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নিয়ে কাজ করছে মাস্ক মালিকানাধীন দুটি কোম্পানি।
এর মধ্যে মহাকাশ খাতে রাজত্ব করছে স্পেসএক্স। মহাকাশবিষয়ক সংবাদ সাইট স্পেস নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর চালানো মহাকাশ মিশনের প্রায় অর্ধেকই স্পেসএক্স-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।
মহাকাশে বিভিন্ন মিশন পরিচালনার জন্য মাস্কের রকেট কোম্পানিটির ওপর শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে নাসা ও পেন্টাগন।
এ ছাড়া, বিভিন্ন দেশের সরকারকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা সুবিধা’ দেওয়ার লক্ষ্যে সম্প্রতি ‘স্টারশিল্ড’ নামের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক গঠনের ঘোষণাও দিয়েছে কোম্পানিটি।
এ ঘোষণাকে ‘সামরিক খাতের বেসরকারিকরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
ভূপৃষ্ঠে প্রভাব ফেলার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই মাস্ক, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ইভি চার্জিং স্টেশন নিয়ন্ত্রণ করছে টেসলা। এমনকি বৈশ্বিক নেতারাও নিজ নিজ দেশে কোম্পানিটির ‘গিগাফ্যাক্টরি’ নির্মাণের প্রস্তাব দিচ্ছেন।
তবে, এমন নির্ভরতার সুযোগ নিয়ে মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নীতিমালায় প্রভাব ফেলতে পারেন, এমন ভীতির কথাও বলছেন অনেকে।
“আমাদের সচেতন থাকা উচিৎ। এমন একাধিপত্যের মানে দাঁড়ায়, বিভিন্ন নিয়ম অন্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও তার বেলায় হবে না।” --বলেন জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি’র গণমাধ্যম বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড কার্পফ।
“স্টারলিংক ও স্পেসএক্স-এর সঙ্গে বিশেষ চুক্তি থাকায় টেসলা ও টুইটারে নিয়ন্ত্রণ আনার ক্ষেত্রে সরকারকে ‘ডিমের খোসার’ ওপর দিয়ে হাঁটতে হবে।”
স্টারলিংক
২০২৩ সালে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইটের নেটওয়ার্ক। এমনকি দুর্গম ও যুদ্ধবিদ্ধস্ত এলাকাগুলোতেও গিয়ে পৌঁছেছে কোম্পানির ইন্টারনেট সংযোগ।
এ বছর মহাকাশ কক্ষপথে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় পাঁচ হাজারে, বৈশ্বিক হিসাবে যা বেড়েছে গত বছরের তুলনায় তিনগুণ।
অন্যদিকে, মাস্কের কোম্পানির চেয়ে ঢের পিছিয়ে আছে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যামাজনের প্রজেক্ট কুইপার বা চীনা সরকারের নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবস্থা, যারা এখন পর্যন্ত কয়েকশ স্যাটেলাইট কেবল বসাতে পেরেছে মহাকাশ কক্ষপথে।
তবে, মাস্কের হাতে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত দেওয়া নিয়ে এরইমধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে ইউক্রেইন অঞ্চলে।
রাশিয়ার সাইবার আক্রমণ ও ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ঠেকাতে ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনীকে হাজার হাজার ইন্টারনেট সামগ্রী অনুদান দিয়েছেন মাস্ক।