একেবারেই বন্ধ হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গেইমিং আয়োজন ই৩

ছবি: রয়টার্স

এক সময় গেইম জগতের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘ই৩’ স্থায়ীভাবে বাতিল করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এর আয়োজক ‘ইএসএ’।

আয়োজকরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ই৩-এর একটার পর একটা বড় আয়োজনের পর বিদায় বলার সময় হয়েছে।”

“এত স্মৃতির জন্য ধন্যবাদ। ‘জিজিডাব্লিউপি (গেইমিং জগতের জনপ্রিয় সংকেত যার অর্থ ‘গুড গেইম ওয়েল প্লেইড)’।” – যোগ করেন তারা।

বিশ্লেষকরা আয়োজনটির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ২০২৩ সালে বাতিল হয়ে যায় এর প্রদর্শনী।

ভবিষ্যতে আয়োজনটি আর না হওয়ার বিষয়টি বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে ই৩’র আয়োজক, ‘এন্টারটেইনমেন্ট সফটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (ইএসএ)’।

ই৩’র পূর্ণরূপ হল ‘ইলেক্ট্রনিক এন্টারটেইনমেন্ট এক্সপো’, যা শেষবার ভার্চুয়াল উপায়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২১ সালে। আর এর সর্বশেষ সরাসরি আয়োজনটি ছিল ২০১৯ সালে।

ই৩-কে ‘ধীরে ধীরে শেষ হতে’ দেখাটা বেশ ‘দুঃখজনক’ – বলেন ব্রিটিশ গেইম নির্মাতা হলি বেনেট।

গেইমিং শিল্পের ওপর ই৩’র প্রভাব আন্দাজ করা জটিল --সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে বলেন বেনেট।

“এ আয়োজনকে ঘিরে আমরা সারা বছর কাজ করতাম। আর ই৩’র মতো সাড়া ফেলতে পারেনি অন্য কোনো আয়োজনই।”

মূল প্রদর্শনী

একসময় গেইমিং খাতের নতুন গেইম ও প্রযুক্তি দেখানোর প্রধান আয়োজন ছিল ই৩।

১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে একটি ট্রেড শো হিসেবে আয়োজনটি শুরু হয়, যার কিছুদিন আগেই উন্মোচিত হয়েছিল প্লেস্টেশন। আর এর এক বছর পরই প্রকাশ পেয়েছিল অনলাইন গেইম ‘নিনটেনডো ৬৪’।

এ ছাড়া, ২০০৫ সালের প্রদর্শনীতে উন্মোচিত হয়েছিল এক্সবক্স ৩৬০, প্লেস্টেশন ৩ ও ‘নিনটেনডো উইই’র প্রোটোটাইপের মতো বিখ্যাত সব গেইমিং কনসোল।

গেইমিং সাইট আইজিএন-এর তথ্য অনুসারে, সে আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৭০ হাজার দর্শক। অংশগ্রহণ বিচারে ই৩’র সেরা প্রদর্শনী ছিল সেটিই।

তবে, নিনটেনডো, ইউবিসফট, সনি-এর মতো গেইমিং খাতের বড় খেলোয়াড়রা নিজেদের অভ্যন্তরীণ আয়োজনে বিভিন্ন গেইম উন্মোচন শুরু করলে প্রাসঙ্গিকতা হারাতে শুরু করে ই৩। এ ছাড়া, বিশেষ ঘোষণার মাধ্যমে দর্শক টানতেও কাঠখড় পোড়াতে হয় আয়োজনটির।

এর পরপরই, কোভিড মহামারীর কারণে বিরতি নিতে বাধ্য হয় আয়োজনটি।

বিবিসি বলছে, গেইমিং খাতের শীর্ষ ব্যক্তিদের অনাগ্রহের কারণেই বাতিল হয়েছে এবারের আয়োজন।

“ইএসএ’র অগ্রাধিকার থাকবে সদস্য কোম্পানি ও এ খাতের কর্মশক্তিকে সমর্থন দেওয়া, যারা প্রতিদিনই ইতিবাচক উপায়ে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব তৈরি করছে।” – বিবৃতিতে বলেন ইএসএ’র প্রেসিডেন্ট ও সিইও স্ট্যানলি পিয়েখ-লুয়ি।

একসময়ের ‘মিস না করার মতো’ আয়োজন

“ই৩-এর মৃত্যু গেইমিং খাতে গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্ত” – বিবিসিকে বলেন ব্রিটিশ কোম্পানি ‘অ্যাম্পিয়ার অ্যানালাইসিস’-এর গেইম গবেষণা পরিচালক পিয়ার্স হার্ডিং-রোলস।

তিনি আরও যোগ করেন, যেসব গেইমিং কোম্পানি নিজস্ব আয়োজনের মাধ্যমে গেইম প্রকাশ করছে তাতে বিভিন্ন খবর ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি কমে আসার পাশাপাশি দর্শকের কাছেও আগের চেয়ে কার্যকর উপায়ে পৌঁছানো সম্ভব।

“নিজের সেরা সময়ে ই৩ একটি মিস না করার মতো আয়োজন ছিল, যা আসন্ন গেইম ও পণ্য উন্মোচনে আলোড়ন সৃষ্টির ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”

“নস্টালজিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে, আয়োজনটির বিদায় সত্যিই দুঃখজনক।”