অ্যাপটি প্রত্যাবর্তনের খবর এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্পের ট্রুথ সোশাল ও মাস্কের এক্স-এর মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোয় রক্ষণশীল ব্যবহারকারীদের জন্য সুযোগ বাড়ানো হয়েছে।
Published : 19 Dec 2023, 06:39 PM
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফিরতে পারে বিতর্কিত অ্যাপ পারলার। দেশটির রক্ষণশীল ভোটার বা রিপাবলিকান সমর্থকদের জন্যই মূলত তৈরি হয়েছিল অ্যাপটি।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল দাঙ্গার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে প্রায় সব প্ল্যাটফর্মে নিষিদ্ধ হয়েছিল অ্যাপটি।
সোমবার অ্যাপটি ফেরানোর কথা জানিয়েছেন অ্যাপটির মালিক নিজেই।
‘বাক স্বাধীনতায় সমর্থনকে’ কারণ হিসেবে দেখিয়ে তুলনামূলক দূর্বল কনটেন্ট মডারেশন ব্যবস্থা রাখায় মার্কিন রক্ষণশীলদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ‘অতিডানপন্থী মতাদর্শবান্ধব’ অ্যাপটি। এ ছাড়া, ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল দাঙ্গার বিক্ষোভকারীদের ব্যবহৃত অ্যাপ হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে এটি।
এপ্রিলে ডিজিটাল মিডিয়া কোম্পানি ‘স্টারবোর্ড’ অ্যাপটি কিনে নেওয়ার পর থেকেই এর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর কয়েক মাস আগে, ‘ইয়ে’ নামে পরিচিত মার্কিন র্যাপার কানিয়ে ওয়েস্টের কোম্পানি এটি কিনতে যাচ্ছেন খবর বেরিয়েছিল। পরে নভেম্বর মাস নাগাদ সে সম্ভাবনা ভেস্তে যায়।
২০২১ সালে অ্যাপল অ্যাপ স্টোর ও অ্যান্ড্রয়েড প্লেস্টোরে অ্যাপটি নিষিদ্ধ করা হয়। এর কারণ হিসেবে তখন ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল দাঙ্গার সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা সামনে আসে। অ্যাপটি কেনার পর এর নতুন মালিক স্টারবোর্ড এটি নিয়ে ‘কৌশলগত মূল্যায়ন’ চালাচ্ছে।
“আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার: তা হল মুক্ত সংলাপের জন্য নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ তৈরি।” --এক বিবৃতিতে বলেন পারলারের নতুন প্রধান রায়ান রোডস।
অ্যাপটি প্রত্যাবর্তনের খবর এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্পের ট্রুথ সোশাল ও মাস্কের এক্স-এর মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোয় রক্ষণশীল ব্যবহারকারীদের জন্য সুযোগ বাড়ানো হয়েছে। এমনকি ‘ডান-পন্থী ব্যবহারকারীদের হাব’ হয়ে ওঠার তকমাও লেগেছে অ্যাপগুলোর ওপর।
“ট্রুথ সোশালের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা আমাদের লক্ষ্য না হলেও জঙ্গিবাদ, শিশু পর্নোগ্রাফি ও ট্রাফিকিংয়ের মতো ক্ষতিকারক কনটেন্ট ঠেকানোর জন্য মনিটরিং ব্যবস্থা রাখা হয়েছে প্ল্যাটফর্মটিতে।” --বলেন রোডস।
২০১৮ সালে অ্যাপটি উন্মোচনের পরপরই নিজেদেরকে ফেইসবুক ও টুইটারের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দাবি করেছিল অ্যাপটি। আর এর কারণ ছিল, সে সময় ঘৃণামূলক কনটেন্ট, ভুল তথ্য ও অন্যান্য বিতর্কিত কনটেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর নীতিমালা ছিল ফেইসবুক ও টুইটারে।
অন্যদিকে, নিজেদের নীতিমালা কিছুটা শিথিল রেখেছিল পারলার। এ ছাড়া, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপির দাবি করা ব্যবহারকারীদেরকে নির্দ্বিধায় কনটেন্ট পোস্ট ও শেয়ার করার সুযোগও দিয়েছিল অ্যাপটি।
ক্যাপিটল দাঙ্গার কয়েক দিন আগে থেকেই প্ল্যাটফর্মটিতে সহিংস রাজনৈতিক হুমকি, ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ও দাঙ্গা সংশ্লিষ্ট কনটেন্টের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল।
‘জরুরী জননিরাপত্তায় হুমকি’কে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে নিজস্ব প্লে স্টোর থেকে পারলার অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছিল গুগল। তবে, নিষেধাজ্ঞার বছরখানেক পরই ফিরে আসে অ্যাপটি।
তবে, প্লে স্টোরে ফেরানোর আগে গুগলের শর্ত মানতে বাধ্য হয় পারলার, যেখানে অ্যাপটিকে প্লে স্টোরের নীতিমালা মেনে চলার পাশাপাশি এর কনটেন্ট মডারেশন ব্যবস্থা উন্নত করার নির্দেশ দেয় সার্চ জায়ান্ট কোম্পানিটি।
কোম্পানির আশা, অ্যাপটির নতুন করে ঢেলে সাজানো সংস্করণটি অ্যাপল ও গুগল উভয় কোম্পানির অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যাবে।
“যেহেতু অ্যাপ স্টোরে এক্স-এর মতো সামাজিক মাধ্যম আছে, সেক্ষেত্রে আমাদের না থাকার কোনো কারণই নেই।” --মার্কিন গণমাধ্যম এনবিসি’কে বলেন কোম্পানির সহ-মালিক এলিস পিয়েরোতি।
তিনি আরও বলেন, অ্যাপের নতুন নীতিমালা বাক স্বাধীনতার বিষয়টিকে সমুন্নত রেখেই প্ল্যাটফর্মে ‘বুলিয়িং’ ও হয়রানির মতো অপরাধ সীমিত করবে।