এনএফটি বেচে শিল্পী কোটিপতি, কিন্তু কী এই শিল্পমাধ্যম?

যেসব শিল্পীর গ্যালারি সুবিধা বা বিক্রির কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই তাদের জন্য এই ডিজিটাল মাধ্যমটি নতুন সম্ভবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2023, 02:36 PM
Updated : 30 May 2023, 02:36 PM

ডিজিটাল মাধ্যমে আঁকা কিছু শিল্পকর্ম এক রাতের মধ্যে বিক্রি করেছেন এক গ্রাফিক ডিজাইনার। সেখান থেকে তার আয় হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ পাউন্ড। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা ছয় কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

গোটা ওয়ালসে অ্যাশলি ক্রসল্যান্ড এখন অন্যতম সচ্ছল শিল্পী। 

ওয়ালসের কার্ডিগান শহরের এই শিল্পীর তৈরি সাত হাজার দুইশো ডজিটাল চিত্রকর্ম ‘নন-ফাঞ্জিবল টোকেন’ (এনএফটি) হিসাবে বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এনএফটি একধরনের মালিকানা সনদ যা কপিরাইট সংরক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। অ্যাশলি তার আঁকা মানুষের শরীরের উপর হরিণীর মুখের সিরিজটি নিয়ে বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি এগুলো সফল হবে।” 

এই সিরিজের প্রতিটি ছবি আলাদা যা ‘কর্ডানো’ নামের একটি ক্রিপ্টো মুদ্রার জন্য বিক্রি করা হয়েছে। 

“আমি সবসময়ই শিল্প এবং প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী ছিলাম, আমার এনএফটির প্রতি একটা ঝোঁক ছিলো কারণ এতে ডিজিটাল সংগ্রহের সম্ভাবনা তৈরি হয়, যেটি আগে সহজ ছিলো না।” - বিবিসিকে এমনটাই বলেছেন অ্যাশলি।

“আমি মানবাকৃতির হরিণের ছবির সিরিজ অনলাইনে পোস্ট করছিলাম। আমার ধারণা ছিলো না ওগুলো এত জনপ্রিয় হবে, তারপরেই এই সাফল্য এলো।”

মার্চের শেষ ভাগে দুইদিন ব্যাপী হওয়া লেনদেনে কিছু কিছু ছবি একাধিকবার বিক্রি হয়েছে, এবং কার্ডানো মুদ্রায় মোট লেনদেন দাঁড়ায় সাড়ে ছয় হাজার পাউন্ড।

অ্যাশলি ও তার সহযোগী জামেল সানধাম শিল্পকর্মগুলোর সঙ্গে পৌরাণিক এক জগতের গল্প জুড়ে দিয়েছেন, মানুষের মত দেখতে হরিণগুলো সেই জগতের একেকটা চরিত্র।

প্রকল্পের লেখক সানধাম এর সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে উচ্ছ্বসিত।

“তরবারি, যাদু ও রূপকথা আমাকে সবসময়ই টেনেছে তাই আমি সেই ফ্যান্টাসিগুলোকে পূর্ণ গল্পের রূপ দিতে চেয়েছি”-- বলেছেন তিনি।

“অ্যাশ অনেকগুলো আইডিয়া ও আঁকা নিয়ে আমার কাছে আসে, সেগুলো আমাকে খুবই মুগ্ধ করে, তারপর আমি সেগুলোকে গল্পে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি আর কী!”

“আমাদের বিশাল বন্ধুমহল থেকেও প্রচুর আইডিয়া আর অনুপ্রেরণা পেয়েছি।”

অ্যাশলি বলেছেন তিনি শিল্পকর্মের এই সিরিজটিকে সামনে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চান।

হাজার হাজার লোক আমাদের ছবিগুলো সংগ্রহ করতে চেয়েছেন। তারা এইসব গল্প পড়তে ভালবাসেন।”

“এই সাফল্যের পর আমরা আমাদের ছবি ও গল্পগুলোকে ইন্টারেক্টিভ ওয়েব ফরম্যাটে আনতে যাচ্ছি।”

“আমরা ইন্টারনেটে একটা কল্পজগত তৈরি করতে চাই, যেখানে লাখ লাখ মানুষ ইন্টারেক্টিভ ওয়েবে আমাদের ছবি ও গল্পগুলোকে উপভোগ করতে পারবেন।

নন-ফানজেবল টোকেনের বিষয়টি কী?

অর্থনীতিতে ‘ফাঞ্জিবল এসেট’ বা রূপান্তর যোগ্য সম্পদ বলতে বুঝায় যা চহিবা মাত্র বিনিময় করা যায় –যেমন টাকা।

যেমন কেউ চাইলে ১০ টাকার একটি নোট ভাঙ্গতি করে পাঁচ টাকার দুইটি নোটে রূপান্তর করতে পারেন। উভয় বেলাতেই মুদ্রামান সমান।

এনএফটি

নন ফাঞ্জিবল টোকেন বা এনএফটি হলো স্পর্শযোগ্য নয় এমন ডিজিটাল সম্পদের মালিকানার সনদ। 

এনএফটি প্রযুক্তি দিয়ে ডিজিটাল শিল্পকর্মকে ‘টোকেনে' রূপান্তর করে করে মালিকানার ডিজিটাল সার্টিফিকেট তৈরি করা যায়, যা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বেচাকেনাও করা যায়। 

তবে, এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত শিল্পকর্মের মূল কপি বা কপিরাইট যায় না ক্রেতার হাতে। অর্থ কামাইয়ের প্রকল্প এবং পরিবেশবান্ধব নয় বলে এনএফটি সমালোচিতও হয়েছে ব্যাপকভাবে।

‘নতুন অনুরাগীদের খুঁজে পেয়েছে অনেক শিল্পী’

কার্ডিফ মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ‘গ্রাফিক কমিউনিকেশন ডিজাইন’ বিষয়ের প্রভাষক ও একজন শিল্পী ক্যারল ব্রিন বলেছেন, শিল্পী মহলের অনেকেই এনএফটির মূল্য নিয়ে সন্দিহান।

“পুরো বিষয়টাই শিল্পকর্মের ডিজিটাল মালিকানার সঙ্গে সম্পর্কিত”। তিনি আরও বলেন, “আমার মনে হয় যেসব শিল্পীর গ্যালারি সুবিধা বা বিক্রির কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই তাদের জন্য এই ডিজিটাল মাধ্যমটি নতুন সম্ভবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। অনেকের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরে এনএফটি এত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।”

“একজন শিল্পী চাইলে অনলাইনে তার কোনো শিল্পকর্মের সঙ্গে এনফটি সার্টিফিকেট যুক্ত করে রাখতে পারেন। এটার অন্যতম ভালো দিক হচ্ছে, এটি  শিল্পীর কপিরাইটকে সংরক্ষণ করার একটি কার্যকর উপায়।”

“আমি নিশ্চিত অনেক শিল্পী নতুন অনুরাগী খুঁজে পেয়েছেন। আমার পরিচিত অনেক শিল্পীই এনএফটি নিয়ে কাজ করছেন, তবে একইসঙ্গে অনেক শিল্পীই এনএফটি নিয়ে সন্দিহান। 

“কেউ কেউ বলছেন পুঁজিপতিরা মানুষকে প্রলুব্ধ করে নতুন শিল্পের বাজার ধরতে চাইছেন কেবল।” - বলেন তিনি।

“যারা এসব বলছেন বাস্তবে তাদের সঙ্গে সাধারণ শিল্পী ও জনসাধারণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”