গবেষণার ফলাফল চমকপ্রদ ছিল। প্রচলিত বিভিন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থার তুলনায় ৮০ শতাংশ সময় সঠিকভাবে হার্টের অবস্থা শনাক্ত করেছে এআই টুলটি।
Published : 02 Apr 2024, 02:32 PM
হৃদরোগের চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বড় ধরনের সমস্যার পূর্বাভাস দেওয়া। এই কাজটিই এআইকে দিয়েছিলেন গবেষকরা। গুরুত্বপূর্ণ সেই গবেষণায় অসম্ভব আশা জাগানিয়া ফল দিয়েছে এআই।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় প্রাণঘাতী হৃদস্পন্দন বা হার্টের সমস্যার ‘সঠিক’ পূর্বাভাস মিলেছে এআইয়ের সহায়তায়।
হার্ট অ্যাটাকের আগে মানুষের প্রাণঘাতী হৃদস্পন্দের পূর্বাভাস কেমন হতে পারে, ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলের লেস্টার শহরে হওয়া যুগান্তকারী এ গবেষণায় সে তথ্য মিলেছে।
যুক্তরাস্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ লেস্টার’ ও ‘ইউনিভার্সিটি হসপিটালস অফ লেস্টার এনএইচএস ট্রাস্ট’-এর নেতৃস্থানীয় হার্ট বিশেষজ্ঞ ড. জোসেফ বার্কার ও অধ্যাপক আন্দ্রে এনজি এ গবেষণা প্রকল্পের সর্বশেষ ফলাফলের কিছু চুম্বক অংশ ‘ইউরোপীয় হার্ট জার্নাল—ডিজিটাল হেলথ’-এ প্রকাশ করেছেন।
হার্টের বহুল আলোচিত এ সমস্যা ‘ভেন্ট্রিকুলার অ্যারিথমিয়া (ভিএ)’ নামে পরিচিত। এটি হার্টের এমন এক সমস্যা, যার ফলে হার্টের নিচের অংশ অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে স্পন্দিত হতে থাকে।
এর ফলে রক্তচাপ হঠাৎ করে কমে যেতে পারে, যে কারণে মানুষ চেতনা হারাতে পারে। এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করালে আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে।
তাই এই ভীতিকর অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কোন ধরনের রোগীরা আছেন ও ডাক্তাররা সেটি কীভাবে জানতে পারবেন, তা বিকাশের দিকে নজর দিয়েছিল এ গবেষণা দলটি।
এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার রিসার্চ (এনআইএইচআর)’ লেস্টার বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারে’র ড. বার্কার আর তাকে সহযোগিতা করেছেন ‘বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং’য়ের বিশেষজ্ঞ ড. জিন লি।
এক্ষেত্রে গবেষকরা একটি এআই টুল তৈরি করেছেন, যেখানে ‘হল্টার মনিটর’ পরিয়ে ২৭০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির হৃদস্পন্দনের তথ্য ‘ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম বা ইসিজি’ বিশ্লেষণ করা হয়েছিল।
এ ‘হল্টার মনিটর’ পোর্টেবল ডিভাইসটি বাড়িতে দৈনন্দিন কাজের সময় হার্টের কার্যকলাপ ট্র্যাক করে ও ডেটা সংগ্রহ করে, যা পরে এ গবেষণা দলটির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়েছিল।
এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস’-এর সেবা নিয়েছিলেন। সে ফলাফল এরইমধ্যে গবেষকদের জানা ছিল। তবে, দুঃখজনকভাবে তাদের মধ্যে ১৫৯ জনই ইসিজি’র তথ্য নেওয়ার প্রায় দেড় বছর পরও প্রাণঘাতী ‘ভেন্ট্রিকুলার অ্যারিথমিয়া’তে ভুগছিলেন।
এদিকে, ‘ভিএ-রেসনেট-৫০’ নামের এআই টুলটির কাজ ছিল ইসিজি’র তথ্য পর্যালোচনা করে হৃদস্পন্দনের ভিত্তিতে রোগীর প্রানঘাতি আরিথমিয়া বিকাশের ঝুঁকি অনুমান করা।
সাড়া জাগানো এ গবেষণার ফলাফলে প্রচলিত বিভিন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থার তুলনায় ৮০ শতাংশ সময় সঠিকভাবে হার্টের অবস্থা শনাক্ত করেছে এআই টুলটি।
প্রফেসর এনজি’র মতে, প্রচলিত বিভিন্ন চিকিৎসা নির্দেশিকা ‘ভেন্ট্রিকুলার অ্যারিথমিয়া’র উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে না। ফলে প্রতিরোধের সম্ভাবনা থাকার পরও অনেক রোগেই মানুষের মৃত্যু ঘটে থাকে।
এআইয়ের এমন কার্যকারিতার মানে— এটি যদি কাউকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করতে পারে, তবে তাদের ‘ভেন্ট্রিকুলার অ্যারিথমিয়া’ থাকার ঝুঁকি গড় প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় তিনগুণ বেশি।
এ অনুসন্ধানকে গুরুত্বপূর্ণ এক অগ্রগতি হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ, যা দেখিয়েছে, হার্টের ঝুঁকি মূল্যায়নে নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারে এআই প্রযুক্তি।
এমনকি ‘ইমপ্লান্টএবল কার্ডিওভার্টার ডিফিব্রিলেটর’-এর মতো জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসায় সহায়তার ক্ষেত্রে ডাক্তারদের নির্দেশক হিসেবেও কাজ করতে পারে এটি।
গবেষণাটির ফলাফল পাওয়া যাবে ‘ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নাল-ডিজিটাল হেলথ’-এ।