ময়লা পানিকে জ্বালানিতে রূপান্তর করে এই ‘যুগান্তকারী’ ডিভাইস

বিজ্ঞানীদের মতে, এর ফলে একইসঙ্গে দুটি সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। একটি হল পরিবেশবান্ধব জ্বালানি। আর অন্যটি হল, সুপেয় পানি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2023, 07:19 AM
Updated : 15 Nov 2023, 07:19 AM

বিজ্ঞানীরা এমন এক ডিভাইস তৈরি করেছেন, যা ময়লা পানি পরিষ্কার করে সেটিকে হাইড্রোজেন জ্বালানিতে রূপান্তর করতে পারে।

এই ‘সহজ’ ডিভাইস বিভিন্ন এমন জায়গায় ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে শক্তির কোনো উৎস নেই বা যেসব জায়গায় মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই বসবাস করেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

গবেষকরা বলছেন, দূষণ মোকাবেলার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও বিশুদ্ধ পানি সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের সমাধান দেবে এটি।

এ সিস্টেমটির অনুপ্রেরণা এসেছে উদ্ভিদের ‘ফটোসিন্থেসিস’ প্রক্রিয়া থেকে। এ প্রক্রিয়ায় গাছপালা আলোকশক্তিকে খাবারে রূপান্তর করে।

আগের সংস্করণের ডিভাইসে থাকা ‘কৃত্রিম পাতা’য় উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে হতো পরিষ্কার পানি। আর নতুন ডিভাইসটিতে ময়লা পানিও ব্যবহার করার সুবিধা রয়েছে। এ থেকে এমনকি সুপেয় পানিও পাওয়া যায়।

বিজ্ঞানীদের মতে, এর ফলে একইসঙ্গে দুটি সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। একটি হল পরিবেশবান্ধব জ্বালানি। আর অন্যটি হল, পানযোগ্য পানি।

“সৌর জ্বালানি উৎপাদন ও পানি শোধন ব্যবস্থা একই ডিভাইসে নিয়ে আসা কিছুটা জটিল,” বলেন ‘ইউনিভার্সিটি ওফ কেমব্রিজ’-এর রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণাপত্রের সহ-লেখক শ্যানন পর্নরানগ্রজ।

“পানির অনু ভেঙে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনে রূপান্তর করা এই সৌরচালিত পানি বিভাজন ব্যবস্থায় নতুন করে পরিষ্কার পানি তৈরি করতে হয়। কারণ, এর মধ্যে অন্য কোনো পদার্থ থাকলে তা প্রভাবককে বিষাক্ত করে তুলতে পারে বা এমন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে পারে, যা কাম্য নয়।”

এই প্রক্রিয়ায় আলো ও তাপ শোষণের জন্য কার্বনের জাল ব্যবহার করা হয়, যা পানির অনুকূল ব্যবস্থার পাশাপাশি ‘ফটোক্যাটালিস্ট’-এর মাধ্যমে হাইড্রোজেন জ্বালানি তৈরি করে। এ ছাড়া, ওই কার্বনের জাল পানির পরিশোধক হিসেবেও কাজ করে। ফলে, সিস্টেমটি ভাসমান অবস্থায় থাকতে পারে ও এর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো পানিতে ভেজার ঝুঁকি কমে আসে।

এ ছাড়া, ডিভাইসটি আগের সংস্করণগুলোর তুলনায় সূর্য থেকে বেশি শক্তি সংগ্রহ করতে পারে, যেখানে আলোক বর্ণালীর ছোট একটি অংশ ব্যবহার করা হতো। নতুন সিস্টেমের ওপরের অংশে সাদা স্তর রয়েছে, যা অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করে, আর এর বাকি অংশ ব্যবহৃত হয় পানিকে বাষ্পীভূত করার জন্য।

“এই প্রক্রিয়ায়, আমরা আগের চেয়ে ভালো উপায়ে আলো ব্যবহার করতে পারছি - আমরা এতে হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্যেও বাষ্প পাচ্ছি, এমনকি বাকি অংশে জলীয় বাষ্পও পাচ্ছি,” বলেন ড. পর্নরানগ্রজ।

“এ উপায়ে আমরা এখন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়া যুক্ত করেছি, যার মাধ্যমে সত্যিকারের পাতাকেও অনুকরণ করা সম্ভব হচ্ছে।”

এই যুগান্তকারী উদ্ভাবনের পেছনে কাজ করা গবেষকরা বলছেন, সিস্টেমটি সহজেই তৈরি করা গেছে, যেখানে বিশেষভাবে অত্যন্ত দূষণযুক্ত পানি নিয়েও কাজ করা সম্ভব হয়েছে। তারা আরও যোগ করেন, ডিভাইসটি এখনও তাত্ত্বিক পর্যায়ে থাকলেও টেকসই ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

“জলবায়ু সংকট, দূষণ ও স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি একই সুতোয় গাঁথা। আর এই সবগুলো বিষয় একইসঙ্গে মোকাবেলার করার ব্যবস্থা তৈরি করলে তা অনেক মানুষের কাছেই ‘গেইমচেঞ্জার’ হিসেবে বিবেচিত হবে,” বলেন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও এ গবেষণার নেতৃত্বে থাকা এরউইন রিজনার।

যুগান্তকারী এই ডিভাইস সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে ‘হাইব্রিড ফটোথার্মাল-ফটোক্যাটালিস্ট শিটস ফর সোলার ড্রিভেন ওভারল ওয়াটার স্প্লিটিং কাপলড টু ওয়াটার পিউরিফিকেশন’ শীর্ষক নতুন গবেষণাপত্রে, যা সোমবার প্রকাশ পেয়েছে ‘নেচার ওয়াটার’ নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে।