মেটাভার্সে প্রথম আদালত বসল কলম্বিয়ায়, হলো শুনানি

“এটা ভিডিও কলের চেয়েও আসল বলে মনে হয়।” --মেটাভার্স অভিজ্ঞতাকে ‘বিস্ময়কর’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন বিচারক মারিয়া কুইনোস ট্রায়ানা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2023, 01:10 PM
Updated : 26 Feb 2023, 01:10 PM

মেটাভার্সে প্রথমবার শুনানি পরিচালনা করেছে কলম্বিয়ার এক আদালত।

এই শুনানি পরিচালিত হয়েছে চলতি মাসেই । আর ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মাধ্যমে পুনরায় পরীক্ষা চালানোর বিষয়টিও রয়টার্সকে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

কলম্বিয়ার ‘মাগডালেনা প্রশাসনিক আদালতে’র দুই ঘণ্টা দীর্ঘ শুনানিতে, ট্রাফিক বিরোধের জেরে অংশগ্রহণকারীরা এক ভার্চুয়াল কোর্টরুমে অ্যাভাটার হিসেবে হাজির হন। আর কালো রঙের আইনি পোশাকে শুনানি পরিচালনা করেন ম্যাজিস্ট্রেট মারিয়া কুইনোস ট্রায়ানার অ্যাভাটার।

ডিজিটাল জায়গাকে তুলনামূলক প্রাণবন্ত করে তোলা অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন অ্যাভাটারের সাহায্যে উপস্থাপনের মাধ্যমে মেটাভার্স ও ভার্চুয়াল রিয়ালিটিতে সত্যিকারের আদালত শুনানি পরীক্ষা করা বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কলম্বিয়া আবির্ভূত হলো বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

“এটা ভিডিও কলের চেয়েও আসল বলে মনে হয়।” --মেটাভার্স অভিজ্ঞতাকে ‘বিস্ময়কর’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে শুক্রবার রয়টার্সকে বলেন বিচারক কুইনোস।

জুম কলের বেলায় তিনি চিহ্নিত করেন, “অনেকেই নিজের ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়ায় আপনি বুঝতেই পারেন না তারা সে সময় করছেন।”

কুইনোস বলেন, দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে আনা এক আঞ্চলিক পরিবহণ ইউনিয়নের এই মামলা এখন আংশিকভাবে এগিয়ে যাবে মেটাভার্সেই। এর মধ্যে থাকতে পারে রায়ও। অন্যান্য জায়গায় মেটাভার্সভিত্তিক শুনানির সম্ভাবনাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি তিনি।

“এই ব্যবস্থার বাস্তবায়ন যে সম্ভব, সেটি দেখাতে এই শিক্ষামূলক পরীক্ষা চালানো হয়েছে। তবে, যেখানে সবার সম্মতি মিলবে (যেমন আমার আদালত), সেখানে মেটাভার্সে কার্যক্রম অব্যাহত থাকতে পারে।” --যোগ করেন তিনি।

জুম ও গুগলের বিভিন্ন ভিডিও কল মিটিংয়ে আদালত শুনানি পরিচালনার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। এমনকি কেউ কেউ মেটাভার্সেও এর পরীক্ষা চালাচ্ছে।

প্রতিবেদন বলছে, এটি এমন এক ডিজিটাল জায়গা, যা তৈরির পেছনে ‘প্রতিযোগিতা’ চলছে মেটা, মাইক্রোসফট ও অন্যান্য প্রযুক্তি জায়ান্টের মধ্যে।

মেটাভার্সে সাক্ষাৎকার বা বৈঠকের প্রাথমিক নজিরগুলোতে এগুলোর প্রায়ই ফুলে ফেপে ওঠা, কার্টুন ধাঁচের চেহারা নিয়ে বিদ্রুপও শোনা গেছে।

এদিকে, ১৫ ফেব্রুয়ারি কলম্বিয়ার আদালত শুনানি ইউটিউবে স্ট্রিম করা হয়। তবে, এতে কিছু সংখ্যক ‘মাথা ঘোরানো’ ক্যামেরা মুভমেন্ট ও বিকৃত নড়াচড়া বাদে তেমন সমস্যা না দেখা গেলেও, এটি বন্ধ হয়ে যায়।

প্রশ্নবোধক চিহ্ন

কুইনোস ভার্চুয়াল ট্রাইব্যুনালের সাংবিধানিক বৈধতা পুনর্ব্যক্ত করলেও দর্শকদের ৭০ শতাংশই এতে সম্মত নয় এমন উল্লেখ করে পরীক্ষাটি জনপ্রিয় হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি।

কলম্বিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ রোজারিও’র জননীতি বিষয়ক অধ্যাপক জুয়ান ডেভিড গুতেরেস বলেন, আইনি কার্যক্রমে মেটাভার্সের ব্যবহার বাস্তবায়নে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

“এটি চালাতে আপনার এমন এক হার্ডওয়্যার প্রয়োজন, যা খুব কম মানুষের কাছেই থাকে। ফলে, ন্যায়বিচার ও সমতার মতো বিষয়গুলোর প্রবেশযোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তোলে এটি।” --রয়টার্সকে বলেন তিনি।

কুইনোস স্বীকার করেন, এর খরচ ও প্রবেশগম্যতা নিয়ে কথা বলা দরকার। তবে, উদাহরণ হিসেবে বিভিন্ন নিপীড়ন সংশ্লিষ্ট মামলায় মেটাভার্সের পক্ষে সমর্থন দেন তিনি। ফলে, অংশগ্রহণকারীদেরও শারীরিকভাবে একে অপরকে দেখার মতো বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে না।

গুতেরেস বলেন, কলম্বিয়ার বিচারকরা দেশটির ‘অত্যাধিক ভারী’ বিচার ব্যবস্থা কমিয়ে আনার বিভিন্ন উপায় খুঁজে দেখছেন।

“আমরা নিজেরাই এই ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করি যে প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ তুলনামূলক দক্ষ উপায়ে করা যাবে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি পুরোপুরি বিপরীত।”