মেটাভার্স অ্যাপে মন ভরেনি নির্মাতারও

মেটা হরাইজন ওয়ার্ল্ডসে কোম্পানির ভবিষ্যৎ দেখলেও অ্যাপটি নিয়ে আগ্রহ নেই খোদ এর কর্মীদের মধ্যে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2022, 08:18 AM
Updated : 7 Oct 2022, 08:18 AM

সোশাল মিডিয়া কোম্পানি মেটার নতুন ফ্ল্যাগশিপ ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) অ্যাপ ‘হরাইজন ওয়ার্ল্ডস’-এর কার্যক্ষমতা নিয়ে খুশি নন এর নির্মাতারাও।

প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ বলছে, পারফর্মেন্স আর মানের বিবেচনায় এই অ্যাপে ত্রুটি এত বেশি যে, নির্মাতারাই এর ব্যবহার এড়িয়ে চলছেন।

গেল অক্টোবরে নাম পাল্টে মেটা হওয়ার পর থেকেই ভার্চুয়াল রিয়ালিটি প্রযুক্তি নির্ভর কথিত ‘মেটাভার্স’ নির্মাণে হাত খুলে বিনিয়োগ করছে মার্ক জাকারবার্গের কোম্পানি। ‘মেটাভার্স’ ভাবনা এবং এর বাস্তবায়নের অ্যাপ ‘হরাইজন ওয়ার্ল্ডস’ নিয়ে ব্যাপক প্রচারও চালাচ্ছে মেটা।

সম্প্রতি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ এক মেমো দেখে ভার্জ লিখেছে, ত্রুটি আর পারফর্মেন্সের জটিলতার কারণে এ বছরে আরও বেশি সংখ্যক ব্যবহারকারীর জন্য ‘হরাইজন ওয়ার্ল্ডস’ উন্মুক্ত করতে আগ্রহী নন এর নির্মাতা দল।

১৫ সেপ্টেম্বরের এক মেমোতে মেটাভার্স প্রকল্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিশাল শাহ তার কর্মীদের বলেন, এ বছরের শেষ পর্যন্ত ‘কোয়ালিটি লকডাউনে’ থাকবেন এ অ্যাপের নির্মাতারা।

“হরাইজন আরও ব্যবহারকারীর কাছে উন্মুক্ত করার আগে ত্রুটি এবং পারফর্মেন্স জটিলতার সমাধান নিশ্চিত করতে চাই আমরা,” মেমোতে বলেছেন তিনি।

হরাইজন ওয়ার্ল্ডসে অ্যাভাটার হিসেবে নিজের পছন্দ মত ভার্চুয়াল জগৎ নির্মাণ এবং এবং একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ব্যবহারকারীরা। ফেইসবুক প্রতিষ্ঠাতা জাকারবার্গ তার সোশাল মিডিয়া সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ দেখছেন এই অ্যাপেই।

মেটা গেল বছরের ডিসেম্বরে হরাইজন ওয়ার্ল্ডস কোয়েস্ট হেডসেট প্ল্যাটফর্মে উন্মুক্ত করেছে। এ বছরের শুরুতেই অ্যাপটির নিয়মিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে যায়।

কিন্তু সহকর্মীদের পাঠানো মেমোতে শাহ বলেছেন, “সোজা কথায় বললে, যে কোনো অভিজ্ঞতাকে আনন্দদায়ক এবং বার বার নেওয়ার উপযোগী হওয়ার জন্য প্রথমে তাকে ব্যবহারোপযোগী এবং সুন্দর করে বানানো হতে হবে।

“গত বছর চালু করার পর থেকে আমরা দেখেছি হরাইজন ওয়ার্ল্ডসের যে মূল ভাবনা, সেই সমন্বিত সোশাল নেটওয়ার্ক, যেখানে নির্মাতারা নতুন নতুন দুনিয়া সৃষ্টি করতে পারবেন– সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু নির্মাতা, ব্যবহারকারী, প্লেটেস্টার এবং আমাদের দলের অনেকের প্রতিক্রিয়ায় উঠে আসা জটিলতা আর বাগের কারণে হরাইজনের জাদু উপভোগ করতে পারা সবার জন্যই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

ভার্জ জানিয়েছে, হরাইজন ওয়ার্ল্ডসের গ্রাফিক্সের মান নিয়েও সন্তুষ্ট নন ব্যবহারকারীরা। প্রতিযোগী গেইমিং প্ল্যাটফর্ম ফোর্টনাইটের ভিআর অভিজ্ঞতাও হরাইজের চেয়ে নানা বিবেচনায় ভালো।

সমালোচনার চাপে ১১ অক্টোবরের ‘কানেক্ট’ সম্মেলনে হরাইজন এবং অ্যাভাটারের গ্রাফিক্স নিয়ে বড় আপডেট আনার কথা বলেছেন জাকারবার্গ।

মেটার যে কর্মীরা অ্যাপটি বানাচ্ছেন, খোদ তাদের মধ্যে এটি ব্যবহারের আগ্রহ নেই বলে উঠে এসেছে শাহের মেমোতে।

“আমাদের অনেকেই হরাইজনে যথেষ্ট সময় দিচ্ছি না এবং ড্যাশবোর্ড থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট। কেন হচ্ছে এমন? আমরা কেন সেই পণ্যটি ভালোবাসছি না যার নির্মাণে আমরা এত সময় দিয়েছি? সত্যিটা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই যদি একে ভালো না বাসি তবে আমাদের ব্যবহারকারীরা যে একে ভালোবাসবে, সেই প্রত্যাশা আমরা কীভাবে করতে পারি?”

ভার্জ জানিয়েছে, কর্মীদের কাছে এমন আবেগঘন আবেদন জানিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেননি শাহ। ৩০ সেপ্টেম্বরে পাঠানো আরেকটি মেমোতে হরাইজন অ্যাপটি ব্যবহারে কর্মীদের অনাগ্রহের জন্য ব্যবস্থাপকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর হুমকিও তিনি দিয়েছেন।

“এই প্রতিষ্ঠানের সবার মিশন হওয়া উচিত হরাইজনের প্রেমে পড়া। ব্যবহার না করলে এটা সম্ভব নয়। ঢুকুন অ্যাপটিতে; সহকর্মী বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় মিলিয়ে নিয়ে অভ্যন্তরীণ এবং পাবলিক বিল্ড দুটোতেই সময় দিয়ে সংশ্লিষ্টদের সবার সঙ্গে কথা বলুন।”

হরাইজন নির্মাণের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের মধ্যে আরও ভালো সমন্বয় প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন শাহ।

এ বিষয়ে ভার্জকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মেটার মুখপাত্র অ্যাশলি জান্ডি বলেছেন, তার কোম্পানি “আত্মবিশ্বাসী যে কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যৎ হচ্ছে মেটাভার্স এবং মানুষেকে কেন্দ্রে রেখেই এটি নির্মিত হবে।”

নির্মাতা ও ব্যবহারকারীদের মতামতের ভিত্তিতে মেটা লাগাতার এর মানোন্নয়নে কাজ করছে বলেও মুখপাত্রের ভাষ্য।