কোনো গ্রহের বায়ুমণ্ডলে চার্জযুক্ত কণা প্রবেশ করে সেগুলো এর চৌম্বকক্ষেত্র নির্দেশক রেখা বরাবর জড়ো হলে অরোরার মতো ঘটনা দেখা যায়।
Published : 30 Oct 2023, 04:39 PM
বরফে আবৃত ইউরেনাস গ্রহে ‘ইনফ্রারেড অরোরা’ চিহ্নিত করছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এ থেকে এলিয়েনের খোঁজ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
পৃথিবীতে অরোরা ‘নর্দার্ন লাইটস’ নামে পরিচিত, যা মূলত আকাশে ছড়িয়ে পড়া উজ্জ্বল আলো। সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত কানাডা, আলাস্কা, রাশিয়া ও ইউরোপের উত্তরাংশের ‘স্ক্যান্ডিনেভীয়’ দেশগুলোয় এটি দেখা যায়। তবে, ইউরেনাসের জলবায়ু ভিন্ন হওয়ায় গ্রহটির অরোরা পৃথিবীর মতো নয়।
১৯৮৬ সাল থেকেই গবেষকরা ইউরেনাসের অতিবেগুনী অরোরা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। আর, এখন ওই দূরবর্তী গ্রহে ‘ইনফ্রারেড অরোরা’ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলো।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এ অনুসন্ধান সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এমনকি দূরবর্তী গ্রহগুলোতে এলিয়েন থাকা সম্ভব কি না, সে সম্পর্কেও ধারণা মিলবে।
কোনো গ্রহের বায়ুমণ্ডলে চার্জযুক্ত কণা প্রবেশ করলে সেগুলো এর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র নির্দেশক রেখা বরাবর জড়ো হলে অরোরার মতো ঘটনা দেখা যায়।
ইউরেনাসের অরোরা সম্পর্কে ধারণা পেতে গবেষকরা গ্রহটির আলো বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি এর বায়ুমণ্ডলের ঘনত্বের ওপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট একটি চার্জযুক্ত কণার উজ্জ্বলতার গতিবিধি লক্ষ্য করেছেন যেটি সেখানকার তাপমাত্রা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
গবেষকদের অনুসন্ধানে উঠে আসে, সেই চার্জযুক্ত কণার ঘনত্ব অনেক বেড়ে গেছে। এর মানে, সেটি ইনফ্রারেড অরোরার মাধ্যমে আয়নিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে একই ধরনের অন্যান্য গ্রহে জীবনধারণ উপযোগী তাপমাত্রা থাকা সম্ভব কি না সে সম্পর্কে ধারণা মিলবে।
“ইউরেনাস-এর মতো সকল গ্যাসবেষ্টিত দৈত্যাকার গ্রহ, যেগুলো কেবল সূর্য থেকে তাপ পায় সেগুলার তাপমাত্রা যতোটা থাকার কথা ছিল, তার চেয়েও কয়েকশ ডিগ্রি কেলভিন/সেলসিয়াস বেশি। এর পেছনের কারণ নিয়ে বরাবরই ধোঁয়াসা ছিল।” --বলেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ লেস্টার’-এর গবেষক ও এই গবেষণার মূল লেখক এমা টমাস।
“এই তাপমাত্রার একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ‘এনার্জেটিক অরোরা’, যা তাপ শোষণ করে তৈরি করে গ্রহটির চৌম্বকীয় বিষুবরেখার দিকে ঠেলে দেয়।”
এই অনুসন্ধান থেকে পৃথিবীর এক রহস্যময় ঘটনা সম্পর্কেও ধারণা মিলতে পারে, যা ‘জিওম্যাগনেটিক রিভার্সাল’ নামে পরিচিত। পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে এমনটি ঘটে থাকে। এই বিরল ঘটনা নিয়ে বিজ্ঞানীদের ধারণা এখনও খুবই কম, যার মধ্যে রয়েছে স্যাটেলাইট ও যোগাযোগের বেলায় এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাও।
ইউরেনাসে প্রতিদিনই এই অরোরার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। গবেষকদের আশা, তারা এর অরোরার সহায়তা নিয়ে জিওম্যাগনেটিক রিভার্সাল সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
এই অনুসন্ধান সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে ‘ডিটেকশন অফ দ্য ইনফ্রারেড অরোরা অ্যাট ইউরেনাস উইথ কেক-নিরস্পেক’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে, যা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রনমি’তে।