মাইক্রোসফট বাজারের সবচেয়ে জনপ্রিয় গেইমগুলোকে নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে সীমাবদ্ধ করে গেইমিং খাতে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ নেবে বলে আশঙ্কা সিএমএর।
Published : 13 Oct 2022, 06:16 PM
মাইক্রোসফট জনপ্রিয় শুটিং গেইম কল অফ ডিউটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ড কিনতে চাওয়ায় প্রযুক্তি বাজারে শুরু হয়েছে নতুন নাটকীয়তা। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান সনির পক্ষ নিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে ব্লিজার্ডের সম্ভাব্য নতুন মালিক।
ছয় হাজার ৮৭০ কোটি ডলারে অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ড কিনতে চায় মাইক্রোসফট। কল অফ ডিউটি, ওভারওয়াচ এবং ক্যান্ডি ক্রাশের মতো জনপ্রিয় গেইমের নির্মাতা এ কোম্পানিটি।
২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে মালিকানা হাতবদলের চুক্তি সম্পন্ন করতে চায় মাইক্রোসফট।
ইতোমধ্যেই অধিগ্রহন চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছে সৌদি আরব আর ব্রাজিলের বাজার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু, বেঁকে বসেছে যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ‘কম্পিটিশন অ্যান্ড মার্কেটস অথরিটি (সিএমএ)’ ঘোষণা করেছে, একটি স্বাধীন প্যানেলকে ক্রয় প্রস্তাব তদন্ত করে দেখতে বলবে তারা।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও গেইম নির্মাতা ও প্রকাশক কোম্পানিগুলোর একটি অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ড। কোম্পানির সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজগুলোর একটি ‘কল অফ ডিউটি’। পরিসংখ্যানবিষয়ক ওয়েবসাইট স্ট্যাটিস্টার হিসেব অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী কল অফ ডিউটি গেইমারের সংখ্যা ছিল ২৫ কোটির ঘরে।
বিবিসি জানিয়েছে, মাইক্রোসফট অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ড কেনার মাধ্যমে কল অফ ডিউটির মতো জনপ্রিয় গেইমগুলোকে কেবল এক্সবক্স কনসোল, পিসি এবং ক্লাউড গেইমিং সেবা ‘গেইম পাস’-এর মতো নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে সীমাবদ্ধ করে গেইমিং খাতে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে সিএমএর কথার সুরে।
বিতর্কের কেন্দ্রে এক্সবক্স বনাম প্লেস্টেশন
বুধবার স্বাধীন প্যানেলের হাতে তদন্তের ভার তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে বিস্তারিত কারণ জানিয়েছে সিএমএ। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, “কল অফ ডিউটি এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ হলে তাতে সনির আয় এবং সেবাগ্রাহকদের ওপর বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।”
সংস্থাটি আরও বলেছে, “মাইক্রোসফট আগের অধিগ্রহণগুলোর ক্ষেত্রেও একই কৌশল অবলম্বন করেছে; যেখানে গেইমের নির্মাতা স্টুডিও কেনার পর ওই স্টুডিওগুলোর পরবর্তী গেইমগুলোকে নিজেদের এক্সবক্স কনসোলে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে তারা।”
তবে মাইক্রোসফট বলে আসছে, অ্যাকটিভিশনের যে গেইমগুলো বর্তমানে সনির প্লেস্টেশন কনসোলে খেলার সুযোগ আছে, সে গেইমগুলো সনির প্ল্যাটফর্মেই থাকবে। কিন্তু গেইম নির্মাতা কোম্পানির পরবর্তী গেইমগুলোর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মাইক্রোসফটের অধীনে বর্তমানে ২৩টি গেইম নির্মাণ কোম্পানি রয়েছে। জনপ্রিয় গেইম মাইনক্র্যাফটের নির্মাতা মাজং এবং ফলআউট ও স্কাইরিম নির্মাতা বেথেসডাও আছে সে তালিকায়।
বেথেসডার আসন্ন গেইম ‘স্টারফিল্ড’ কেবল খেলা যাবে পিসি এবং এক্সবক্স কনসোলে। মাইক্রোসফটের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে সিএমএ আশঙ্কা করছে, নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আসতে পারে বেথেসডার পুরনো গেইম এল্ডার স্ক্রোলস ৬ নিয়েও।
কিন্তু, পাল্টা উত্তরে মাইক্রোসফট বলছে, ২০২১ সালে কেবল প্লেস্টেশন প্ল্যাটফর্মে সীমাবদ্ধ গেইমের সংখ্যা ছিল ২৮০টি। মাইক্রোসফটের গেইম পাস সেবাও প্লেস্টেশনে ব্লক করে রেখেছে সনি।
অন্যদিকে, মোবাইল গেইমিং কনটেন্ট একেবারেই নেই উইন্ডোজ নির্মাতার। সেই অভাব ঘোচাতে পারবে অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ডের ‘ক্যান্ডি ক্র্যাশ সাগা’। মোবাইল প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে এই গেইমটি।
কিন্তু, সিএমএ যথেষ্ট পর্যালোচনা ছাড়াই সনির পক্ষ টানছে বলে অনুযোগ মাইক্রোসফটের। সংস্থাটি গেইমিং শিল্পের ওপর কল অফ ডিউটির প্রভাব-প্রতিপত্তিও বাড়িয়ে উপস্থাপন করছে বলে দাবি কোম্পানিটির।
মাইক্রোসফটের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন দেখার সুযোগ হয়েছে বিবিসির সংবাদকর্মীদের। সেখানে সিএমএর শঙ্কাগুলোকে ‘ক্ষতিসাধনের অভিনব তত্ত্ব, নজির দ্বারা অসমর্থিত, এবং প্রমাণ ও অর্থনৈতিক বিবেচনাবিহীন’ বলে বর্ণনা করেছে মাইক্রোসফট।
অন্যদিকে, এক বিবৃতিতে সনি বলেছে, প্রস্তাবিত অধিগ্রহন চুক্তি ‘প্রতিযোগিতা বিমুখ, গেইমিং শিল্প ও গেইমারদের জন্যেও নেতিবাচক’ বলে মনে করে তারা।
“এই চুক্তি মাইক্রোসফটের এক্সবক্স ইকোসিস্টেমকে প্রযুক্তি ও কনটেন্টের অভিনব সংমিশ্রণ দেবে এবং যার ফলে গেইমিং খাতে আধিপত্য বিস্তারী অবস্থানে পৌঁছে দেবে এটি। স্বাধীন নির্মাতা, ভোক্তা এবং সনির ওপর যার প্রভাব হবে বিধ্বংসী।”