বর্তমানে জীবিত ধূসর নেকড়ের জিনে মৃত ডায়ার নেকড়ের ডিএনএ স্থাপন করেছেন গবেষকরা। কারণ, ডায়ার নেকড়ের নিকটতম জীবিত আত্মীয় হচ্ছে ধূসর নেকড়ে।
Published : 09 Apr 2025, 05:20 PM
টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে চমৎকার এক তুষার শুভ্র সাদা নেকড়ের ছবি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে। যার শিরোনামে বিলুপ্ত ডায়ার নেকড়েটির প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন এ সাময়িকী।
বর্তমানে বিলুপ্ত প্রজাতির এ প্রাণীটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘গেইম অফ থ্রোনস’ সিরিজে এর কাল্পনিক ভূমিকার জন্য। তবে বিলুপ্ত প্রজাতির ‘ডায়ার উলফ’ নেকড়েটি ১০ হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে আমেরিকাজুড়ে ঘুরে বেড়াত। এখন আর এদের অস্তিত্ব নেই।
একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি দাবি করেছেন, এ বিলুপ্ত নেকড়ে প্রজাতিকে ফিরিয়ে এনেছেন তারা। এমন দাবি করেছেন মার্কিন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’-এর বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু, তাদের এমন দাবি কি সত্যি?
কোম্পানিটি কী বলছে?
সোমবার কলোসাল একটি ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করে, যেখানে রোমুলাস ও রেমাস নামে দুটি নেকড়ে ছানাকে হেসে খেলে বেড়াতে ও আওয়াজ করতে দেখা যাচ্ছে। রোমের পৌরাণিক দেবতাদের নামে এদের এমন নাম রেখেছে কোম্পানিটি।
কলোসাল বায়োসায়েন্সেস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ লিখেছে, “১০ হাজার বছরেরও বেশি সময় পর আপনি এই প্রথমবারের মতো ডায়ার নেকড়ের গর্জন শুনতে পাচ্ছেন। রোমুলাস ও রেমাসের সঙ্গে দেখা করুন। এরা বিশ্বের প্রথম এমন বিলুপ্ত প্রাণী, যাদের আবার জন্ম হয়েছে ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর।”
SOUND ON. You’re hearing the first howl of a dire wolf in over 10,000 years. Meet Romulus and Remus—the world’s first de-extinct animals, born on October 1, 2024.
The dire wolf has been extinct for over 10,000 years. These two wolves were brought back from extinction using… pic.twitter.com/wY4rdOVFRH
— Colossal Biosciences® (@colossal) April 7, 2025
এদিকে, ‘গেইম অফ থ্রোনস’-এর এক জনপ্রিয় চরিত্রের নামানুসারে এ বছরের ৩১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া ‘খালিসি’ নামের আরেকটি নেকড়ে ছানা দেখিয়েছে কোম্পানিটি।
কলোসাল হচ্ছে সেই কোম্পানি যারা বিলুপ্ত ‘উলি ম্যামথ’কে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে উলির ইঁদুর তৈরি করেছিল। তাদের লক্ষ্য, “জেনেটিক্সের বিজ্ঞানকে আবিষ্কারের সঙ্গে একত্র করে” বিলুপ্তি প্রাণীকে আবার ফিরিয়ে আনা।
এক্স পোস্টে কলোসাল বলেছে কীভাবে তারা জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব ছানাকে ‘বিলুপ্তি থেকে আবার ফিরিয়ে এনেছে’।
ছানা তৈরিতে এসব জিন এসেছে পুরোপুরি ডায়ার নেকড়ের জিনোম থেকে, যা মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্য থেকে পাওয়া ১৩ হাজার বছরের পুরানো ডায়ার নেকড়ের দাঁত ও আইডাহো থেকে ৭২ হাজার বছরের পুরানো এর কানের হাড়ের জীবাশ্মে পাওয়া প্রাচীন ডিএনএ-তে। এগুলো ‘সাবধানতার সঙ্গে পুনর্গঠন’ করেছে কোম্পানিটি।
বর্তমানে জীবিত ধূসর নেকড়ের জিনে এসব মৃত ডায়ার নেকড়ের ডিএনএ স্থাপন করেছেন তারা। কারণ, ডায়ার নেকড়ের নিকটতম জীবিত আত্মীয় হচ্ছে ধূসর নেকড়ে।
কোম্পানিটি ধূসর নেকড়ের ১৪টি জিনের ২০টি স্থানে ডিএনএ বদল করেছেন, যাতে তাদের তৈরি নেকড়ের মধ্যে হালকা রঙের কোট, চুলের দৈর্ঘ্য, শরীরের আকার ও দেহের পেশীর মতো নির্দিষ্ট পরিবর্তন আনা যায়। টেস্ট টিউব বেবির মতো এই জিন বর্তমানে জীবিত ধূসর নেকড়ের ডিম্বানুতে প্রবেশ করান গবেষকরা।
তারপর ভ্রূণটি সারোগেট পদ্ধতিতে একটি কুকুরের জরায়ুতে বেড়ে ওঠে। এরপর জন্ম হয় কোম্পানিটির দাবি করা ডায়ার নেকড়ের।
তবে এরা বিলুপ্ত ডায়ার নেকড়ের পুরোপুরি জেনেটিক ম্যাচ নয়। এরা কেবল ডায়ার উলফ থেকে পাওয়া অল্প কিছু জিনওয়ালা ধূসর নেকড়ে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
অন্যরা কী বলছেন?
‘কর্নেল ইউনভার্সিটি’র জিনতত্ত্ববিদ অ্যাডাম বয়কো বলেছেন, “আমরা বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণীর এক কার্যকর সংস্করণ তৈরি করতে পেরেছি, যা রোমাঞ্চকর একটি বিষয়।
তবে এসব নেকড়ে ছানারা ডায়ার নেকড়ে হতে পারে না। কারণ, এদের ডায়ার নেকড়ের আদলে বড় করা হচ্ছে না, যেখানে এরা বিলুপ্ত প্রজাতি প্রাণীটির আচরণ শিখতে পারে, বলেছেন বয়কো।
তিনি আরও বলেছেন, এসব ছানা ডায়ার নেকড়ের জিন বহন করছে, যা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে এক বিরাট অবদান।
এদিকে, কোম্পানিটির ডায়ার নেকড়ের পুনরুজ্জীবিত করার দাবিটি পর্যালোচনা করেছে বিজ্ঞানধর্মী ম্যাগাজিন ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ও। তবে এ বিষয়ে তারা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি।