চাহিদা, প্রত্যাশা বা সময়সীমা অনুযায়ী কাজ করতে না পারার কারণে কাজে নিমগ্ন হয়ে পড়ে ক্লান্তি অনুভব করেন মানুষ, যা তাদের মধ্যে অসহায়ত্বের অনুভূতি তৈরি করে।
Published : 30 Mar 2025, 04:05 PM
চেহারায় ক্লান্তি ও বিষণ্ণতার ছবি একইরকম হতে পারে এবং দুটি প্রায় একই ধরনের সাধারণ এক মানসিক অবস্থাও।
অনুমান করা হয়, অস্ট্রেলিয়ার মোট কর্মীর ৩০ শতাংশ কিছুটা ক্লান্তি অনুভব করেন, যেখানে প্রায় ২০ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ান তাদের জীবনের কোনও না কোনও সময়ে বিষণ্ণতায় ভুগেছেন।
ক্লান্তি হচ্ছে এক ধরনের অসহায়ত্ব। আর বিষণ্ণতা হচ্ছে হতাশার মতো। ক্লান্তি ও বিষণ্ণতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যা প্রত্যেকেরই আলাদাভাবে পরিচালনা করা উচিত।
ক্লান্তি কী?
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ক্লান্তিকে এক ধরনের ‘পেশাগত অবস্থা’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছে, যা অনেক বেশি কাজের চাপের কারণে ঘটে। এ বিষয়টি সাধারণত কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও যারা শিশুদের বা বয়স্ক মা-বাবার যত্ন নেন তারাও ক্লান্তির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
‘সিডনি বার্নআউট মেজার’-এর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসকদের মূল্যায়নে ক্লান্তি হচ্ছে–
● এর প্রাথমিক লক্ষণ অবসাদ
● দুর্বল মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া
● কোনও কিছুতে আনন্দ খুঁজে পেতে অসুবিধা
● সামাজিকভাবে নিজেকে দূরে রাখা
● অস্থির মেজাজ, যেমন– উদ্বিগ্ন ও বিরক্ত অনুভব করা
● কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া
কেবল এক বা দুই সপ্তাহ ধরে টানা কাজের চাপের পরে মানুষের ‘ক্লান্তি অনুভব’ হতে পারে। তবে বছরের পর বছর ধরে অবিরাম কাজের চাপের পরে মানুষের মধ্যে চরম পর্যায়ের ‘ক্লান্তিকর’ অনুভূতি তৈরি হয়।
বিষণ্ণতা কী?
বিষণ্ণতার মধ্যে রয়েছে আত্মসম্মান কমে যাওয়া, আত্মসমালোচনা বেড়ে যাওয়া ও হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো অনুভূতি। তবে এসব লক্ষণ থাকা মানেই যে কারো ক্লিনিকাল বিষণ্ণতা রয়েছে বিষয়টি এমন নয়। কারণ বিষণ্ণতার জন্য রোগ নির্ণয়ের প্রয়োজন পড়ে ও এসবের বাইরেও আরও নানা কারণ থাকে।
দুই ধরনের ক্লিনিকাল বিষণ্ণতা রয়েছে। যেমন–
একটি হচ্ছে ‘মেলানকোলিক’ বিষণ্তা। এটি জিনগত কারণে হয়, যার বেশিরভাগই ঘটে ‘অপ্রত্যাশিতভাবে’।
আরেকটি হচ্ছে ‘নন-মেলানকোলিক’ বিষণ্ণতা। এটি পরিবেশগত বিভিন্ন কারণে হয়, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ নানা ঘটনার কারণে তৈরি হতে পারে। অনেক সময় নিজের মূল্য কমে যাওয়ার কারণেও কেউ ‘নন-মেলানকোলিক’ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন।
ক্লান্তির কিছু বৈশিষ্ট্য ‘মেলানকোলিক’ বিষণ্ণতার সঙ্গে মেলে। তবে এগুলো খুব সাধারণ লক্ষণ। যেমন আনন্দ, শক্তি ও মনোযোগের দক্ষতা কমে যাওয়ার মতো বিষয়।
আবার ‘নন-মেলানকোলিক’ বিষণ্ণতার সঙ্গেও ক্লান্তির কিছু বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে প্রেরণার অভাব ও ঘুমানো বা প্রফুল্ল হতে অসুবিধা। উভয়েরই পরিবেশগত সমস্যা কিছুটা এক রকম হতে পারে।
এর মূল কারণ
এর মূল কারণ খুঁজে বের করার মাধ্যমে ক্লান্তি ও বিষণ্ণতার মধ্যে পার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ব্যক্তিত্বও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পারফেকশনিজম অর্থাৎ সব কাজ নিখুঁত হতে হবে এমন মনোভাব মানুষকে অনেক বেশি ক্লান্তির ঝুঁকিতে ফেলে। তবে, তাদের বিষণ্ণতায় ভোগার ঝুঁকি কম হতে পারে। কারণ, এরা বিষণ্ণতায় কোনো ঘটনা এড়িয়ে চলার পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
সাধারণত চাহিদা, প্রত্যাশা বা সময়সীমা অনুযায়ী কাজ করতে না পারার কারণে কাজে নিমগ্ন হয়ে পড়ে ক্লান্তি অনুভব করেন মানুষ, যা তাদের মধ্যে অসহায়ত্বের অনুভূতি তৈরি করে।
অন্যদিকে বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষদের আত্মসম্মানবোধ কমে যায়। তাই অসহায় হওয়ার বদলে তারা মনে করেন, তিনি ও তার ভবিষ্যত অনিশ্চিত।
তবে কারও পক্ষে ক্লান্তি ও বিষণ্ণতা একইসঙ্গে অনুভব করার বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। যেমন– একজন বস তার কর্মীর ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপ চাপিয়ে দিতে পারেন, যার ফলে ক্লান্তির ঝুঁকিতে পড়েন ওই কর্মী। একই সময়ে বস কাজের জন্য ওই কর্মীকে অপমান করতে পারেন এবং তার ‘নন-মেলানকোলিক’ বিষণ্ণতা তৈরিতে ভূমিকাও রাখতে পারেন।