এ মামলায় জাকারবার্গ ও ইনস্টাগ্রামের সাবেক প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
Published : 14 Apr 2025, 01:50 PM
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার শুরু হচ্ছে মেটার বিরুদ্ধে।
সোমবার ওয়াশিংটনে চলা এই মামলার বিচারে ছবি শেয়ারিং ও মেসেজিং অ্যাপ ইনস্টাগ্রাম বিক্রিতে বাধ্য হতে পারেন মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ।
মার্কিন প্রতিযোগিতা ও ভোক্তা অধিকার বিষয়ে নজরদারি সংস্থা অভিযোগ করেছে, প্রতিযোগিতা দূর করতে ২০১২ সালে ইনস্টাগ্রাম ও ২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেয় মেটা, যা কার্যকরভাবে কোম্পানিটিকে একচেটিয়া অধিকার দিয়েছে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে শুরু হওয়া ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনেও অব্যাহত থাকা বড় বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে ফেডারেল ট্রেড কমিশন বা এফটিসি।
এফটিসি অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় জয়ী হলে জাকারবার্গকে তাদের মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমেজ শেয়ারিং অ্যাপ ইনস্টাগ্রামের মালিকানা ছেড়ে দিতে বাধ্য করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
এর আগে এ বিষয়ে মেটা বলেছিল, এ মামলায় তারা জিতবে এবং এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত।
এদিকে, এ মাসের শেষ দিকে মেটাকে যাতে অ্যান্টিট্রাস্ট বিচারের মুখোমুখি হতে না হয় এজন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে একটি সমঝোতায় রাজি হওয়ার জন্য তদবির করছেন জাকারবার্গ।
বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে গত সপ্তাহে এমন খবর প্রকাশ করে আমেরিকান বাণিজ্য দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অধিগ্রহণের পর থেকে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা আরও ভাল অভিজ্ঞতা পেয়েছেন– এমন যুক্তি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মেটার।
‘ভ্যান্ডারবিল্ট ল স্কুল’-এর অ্যান্টিট্রাস্ট বিভাগের অধ্যাপক রেবেকা অ্যালেনসওয়ার্থ বলেছেন, “এফটিসির যুক্তি হচ্ছে, মেটার ইনস্টাগ্রাম কেনার সিদ্ধান্ত ছিল তাদের ফেইসবুকের ওপর থেকে প্রতিযোগিতার চাপ ঝেড়ে ফেলা।”
এ মামলায় জাকারবার্গ ও ইনস্টাগ্রামের সাবেক প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ আদালতে সাক্ষ্য দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এ মামলার বিচার কাজ কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
‘এফটিসি বনাম মেটা’ নামের এই মামলাটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের সময় দায়ের করা হলেও তার দ্বিতীয় মেয়াদে রাজনৈতিক বিবেচনার ফাঁদে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এফটিসিকে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য জাকারবার্গ ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের কাছে তদবির করেছেন।
বিবিসির পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করতে প্রশ্ন করা হলেও মেটা প্রশ্নটি এড়িয়ে গেছে এবং এক বিবৃতিতে বলেছে, “মেটার বিরুদ্ধে এফটিসির মামলা বাস্তবতাকে অস্বীকার করে আনা হয়েছে।”
মেটার যুক্তি, বাজার প্রতিযোগিতা ও ভোক্তা দুজনার জন্যই ভালো হয়েছে এসব অধিগ্রহণ। এফটিসি’র এ মামলাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাজার নিয়ে তাদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করেই তৈরি, যেখানে বাইটড্যান্সের টিকটক, গুগলের ইউটিউব ও মাইক্রোসফটের লিংকডইন-এর বাজার প্রতিযোগিতাকে বিবেচনায় নেয়নি সংস্থাটি।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে ইউএস ক্যাপিটল দাঙ্গার পর মেটার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ফেইসবুক থেকে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করার কারণে জাকারবার্গ ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছিল।
বর্তমানে তাদের সম্পর্কের বরফ কিছুটা গলেছে। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট উদ্বোধনী তহবিলে ১০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে মেটা। জানুয়ারিতে কোম্পানিটি ঘোষণা করেছিল, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইটার বা ইউএফসি’র বস ডানা হোয়াইট কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে যোগ দেবেন।
এ বছরের জানুয়ারিতে স্বাধীন ফ্যাক্ট চেকারদের বাদ দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে মেটা।