যে কোনো সময়ের তুলনায় ধ্বংসের কাছাকাছি বিশ্ব: ডুমসডে ক্লক

“আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তবে আমাদের নেতারা শান্তিপূর্ণ ও বাসযোগ্য গ্রহটিকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত গতিতে বা মাত্রায় কাজ করছেন না।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2023, 09:39 AM
Updated : 25 Jan 2023, 09:39 AM

পৃথিবী যে কোনো সময়ের তুলনায় ধ্বংসের কাছাকাছি পর্যায়ে চলে আসছে। এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছে ‘ডুমসডে ক্লক’।

এই প্রতীকী ঘড়ির মাধ্যমে ধ্বংসের কতোটা কাছাকাছি মানব সভ্যতা পৌঁছেছে, সেটি নির্ধারণ করেন বিভিন্ন বিশ্লেষক ও বিজ্ঞানী। এই ঘড়ির কাঁটা ১০ সেকেন্ড এগিয়ে যাওয়ায় প্রতিকী ‘মধ্যরাতে পৌঁছানোর সময়’ নেমে এসেছে ৯০ সেকেন্ডে।

‘মধ্যরাত’ বলতে এখানে পৃথিবী ধ্বংসের মুহূর্তকে বোঝানো হয়েছে।

মার্কিন ম্যাগাজিন ‘বুলেটিন অফ দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে পৃথিবীতে পারমানবিক যুদ্ধের ঝুঁকির পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যাও বেড়েছে। এর মাধ্যমে ডুমসডে ক্লক নিজের সময় নির্ধারণ করে বলে উঠে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে।

এতে বিশেষ করে ইউক্রেইনে চলমান যুদ্ধের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এ ঝুঁকি নিয়ে তারা ২০২২ সালের জানুয়ারিতেই সতর্ক করেছিলেন। ঘড়িটির সর্বশেষ আপডেট এসেছিল সে সময়ই।

২০১৯ সাল থেকে ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতে পৌঁছানোর একশ সেকেন্ড আগে থাকলেও এটি সতর্কবার্তা দিয়েছে, ইউক্রেইন ও রাশিয়ার মধ্যে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার কারণে পৃথিবী ধ্বংসের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।

“এই বছর ‘বুলেটিন অফ অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস’-এর বিজ্ঞান ও নিরাপত্তা বিষয়ক পর্ষদ ডুমসডে ক্লকের সময় এগিয়ে দিয়েছে। একমাত্র না হলেও এর প্রধান কারণ ইউক্রেইনে চলমান যুদ্ধের কারণে বিপদের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া।” --এক বিবৃতিতে বলেছে বুলেটিন।

“ঘড়ির মধ্যরাতে পৌঁছাতে ৯০ সেকেন্ড বাকি। বিশেষ এই কাঁটাটি মধ্যরাতের এতোটা কাছাকাছি পৌঁছেনি আগে।”

বুলেটিনের প্রধান নির্বাহী রেচেল ব্রনসন বলেন, প্রথমবারের মতো এই বিবৃতি ইংরেজি, ইউক্রেনীয়, রুশ ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে এই আশায় যে, যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া রাজধানীগুলো যেন এই সতর্কতা মনোযোগ সহকারে নেয়।

বুলেটিনের প্রায় সকল বিবৃতিই চিহ্নিত করেছে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি সম্পর্কে। এর বেশিরভাগই ইউক্রেইনে চলমান সহিংসতার কারণে হলেও এতে অন্যান্য জায়গাও রয়েছে। পাশাপাশি, এতে জলবায়ু পরিবর্তন, জৌবিক ঝুঁকি ও একেবারে ওলটপালট করে দেওয়া প্রযুক্তিরও উল্লেখ রয়েছে।

কোভিড-১৯ দেখিয়েছে, মহামারীর কারণে মানব জনসংখ্যা কতোটা ঝুঁকির মধ্যে আছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এমন ঘটনা আগামীতে অতি সাধারণ একটি বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

এর আগে ২০১৯ সালে সর্বশেষ ঘড়ির কাঁটা সমন্বয় করার ফলে যখন মধ্যরাতে যাওয়ার একশ সেকেন্ডে পৌঁছায়, তখনও এটি মধ্যরাতের সবচেয়ে কাছাকাছি পর্যায় ছিল। ঘড়ির কাঁটার অবস্থান প্রকাশে প্রথমবারের মতো সেকেন্ডের হিসাবে পৌঁছায়। একে তখন ‘বিপদ বেড়ে যাওয়ার প্রতিফলন’ হিসেবে দেখানো হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

আয়ারল্যান্ডের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট ও সাবেক বিশ্বনেতাদের দল ‘দ্য এল্ডার্স’-এর চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ম্যারি রবিনসন এই ঘোষণার সময় সতর্কবার্তা দিয়েছেন, এই ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতের দিকে এগোনো ঠেকাতে রাজনীতিবিদদের আরও বেশি কাজ করতে হবে।

“ডুমসডে ক্লক পুরো মানবতার জন্য সতর্কবার্তা দিচ্ছে। আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তবে আমাদের নেতারা শান্তিপূর্ণ ও বাসযোগ্য গ্রহটিকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত গতিতে বা মাত্রায় কাজ করছেন না।” --বলেন তিনি।

“কার্বন নিঃসরণ কমানো থেকে শুরু করে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি শক্তিশালী করা ও মহামারীর প্রস্তুতিতে বিনিয়োগ… আমরা জানি আমাদের কী করা উচিৎ। এই বিষয়ে বিজ্ঞানও পরিষ্কার, তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। বিপর্যয় এড়াতে ২০২৩ সালে অবশ্যই এই ব্যবস্থা বদলাতে হবে। আমরা একাধিক অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়ছি। বিভিন্ন নেতার সংকট মোকাবেলার মানসিকতা থাকা দরকার।”