বিরল রোগের শিকার এবং নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন এমন রোগীদের জন্য নিয়মিত রক্তদাতার সন্ধান কঠিন একটি বিষয়। এটি আরও কঠিন হয় রক্তের গ্রুপ বিরল হলে।
Published : 10 Nov 2022, 06:06 PM
প্রথমবারের মতো ল্যাবরেটরিতে উৎপাদিত লোহিত রক্ত কণিকা মানবশরীরে সঞ্চালন করেছেন যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক; এখন পর্যন্ত কোনো বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি গ্রাহকদের শরীরে।
বেশ কিছু রক্তের গ্রুপের দাতা পাওয়া দুর্লভ। আবার রক্তের বিরল রোগে ভুগছেন অনেকে। ল্যাবরেটরিতে বেড়ে ওঠা রক্ত কোষ মানব দেহের জন্য নিরাপদ এবং কার্যকর প্রমাণিত হলে এই উভয় শ্রেণির রোগীর চিকিৎসায় নতুন বিপ্লব হতে পারে বলে উঠে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে।
বিরল রোগের শিকার এবং নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন এমন রোগীদের জন্য নিয়মিত রক্তদাতার সন্ধান কঠিন একটি বিষয়। ল্যাবরেটরির লোহিত রক্ত কণিকা কার্যকর প্রমাণিত হলে দাতার কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তাও কমে আসবে বলে আশা গবেষকদের।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলফ অ্যান্ড কেয়ার রিসার্চ’-এর পরিচালক অ্যাশলি টয় স্কাই নিউজকে বলেন “এই চ্যালেঞ্জিং এবং উত্তেজনাপূর্ণ পরীক্ষামূলক প্রকল্প স্টেম সেল থেকে রক্ত উৎপাদনে একটি বড় অগ্রগতি।”
“প্রথমবারের মতো ল্যাবে উৎপাদিত রক্ত রোগীর শরীরে সঞ্চালন করা হয়েছে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কোষগুলো কেমন কাজ করে সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।”
গবেষকরা দাতার কাছ থেকে সংগ্রহ করে সঞ্চালিত রক্তের কোষের সঙ্গে ল্যাবে উৎপাদিত রক্ত কোষের আয়ু তুলনা করে দেখছেন বলে জানিয়েছে স্কাই নিউজ।
প্রচলিত প্রক্রিয়ায় দাতার কাছ থেকে সংগৃহীত রক্তের চেয়ে স্টেম সেল থেকে উৎপাদিত রক্ত বেশি কার্যক্ষম হবে বলে আশা গবেষকদের।
গবেষণার সাফল্য নিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের পরামর্শক সেড্রিক গেভার্ট স্কাই নিউজকে বলেন, “যদি আমাদের প্রকল্প সফল হয়, তার মানে দাঁড়াবে-- যে রোগীর দীর্ঘদিন ধরে দাতার কাছ থেকে নিয়মিত রক্ত নিতে হচ্ছে, ভবিষ্যতে তাদের আগের চেয়ে কম রক্ত নিতে হবে।”
এখন পর্যন্ত দু’জন রোগীর শরীরে ল্যাবে উৎপাদিত লোহিত কণিকার সঞ্চালন করেছেন গবেষকরা এবং এখন পর্যন্ত তাদের কারও শরীরে বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।
রোগীদের শরীরে ল্যাবরেটরিতে উৎপাদিত রক্ত কণা সঞ্চালনের পরিমানও কম বলে জানিয়েছে স্কাই নিউজ; পাঁচ থেকে ১০ মিলিলিটার।
গবেষণার জন্য প্রথমে রক্তদাতাদের কাছ রক্ত সংগ্রহ করে ওই রক্ত থেকে স্টেম সেল আলাদা করেন গবেষকরা। তারপর, ওই স্টেম সেলগুলো ল্যাবরেটরিতে বড় করে সেখান থেকে লোহিত কণিকা উৎপাদন করেন তারা।
স্কাই নিউজ জানিয়েছে, অন্তত চার মাসের ব্যবধানে ১০ জন রোগীর শরীরে সীমিত পরিমানে ল্যাবরেটরিতে উৎপাদিত লোহিত কণিকা সঞ্চালন করবেন গবেষকরা। আরও বড় পরিসরে এ প্রযুক্তির প্রয়োগের আগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর কথা বলেছেন তারা।